জামদানিতে বিয়ের সাজ

অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিণ বিয়েতে বেছে নিয়েছেন জামদানি। ছবি: রেমিনিসেন্স ফটোগ্রাফি

বিয়ে প্রতিটি মানুষের জীবনের বিশেষ একটি দিন। এই বিশেষ দিনের সাজ ও পোশাকে সকলেই চায় আভিজাত্য আর সৌন্দর্যের ছোঁয়া। গত কয়েক দশকে বিয়ের সাজ ও পোশাকে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন আসলেও বাঙালি নারীদের পছন্দের তালিকার শুরুতে এখনো রয়ে গেছে শাড়ি।

বিয়েতে কাতান, বেনারসি, বালুচরি, জর্জেট শাড়ির প্রচলন থাকলেও জামদানি সবসময় আভিজাত্য, ঐতিহ্য ও রুচিশীলতার প্রতীক। জমকালো বা ভারী কাজ নয়, জামদানি তার আভিজাত্য, নিখুঁত নকশা, বুননশৈলী ও ঐতিহ্যের মাধ্যমে সবসময়ই অনন্য। ফলে বিয়েতে জমকালো সব শাড়ির বদলে অনেক কনেই বেছে নেন দেশীয় আমেজের জামদানি।

একটা সময় শুধু গায়ে হলুদে জামদানি চললেও গত কয়েক বছর ধরেই বিয়ের দিনটিতেও জামদানি শাড়ি পরার ট্রেন্ড চলছে। দেশীয় এই শাড়িটিকে এখন বিশেষ এই দিনের সঙ্গী হিসেবে বেছে নিচ্ছেন কনেরা। সম্প্রতি অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিণ বিয়েতে জামদানি শাড়ি পরার পর বিষয়টি আবার আলোচনায় এসেছে। তিনি ছাড়াও বিভিন্ন সময় দেশের তারকাদের তাদের বিশেষ দিনটিতে জামদানি বেছে নিতে দেখা গেছে।

তাসনিয়া ফারিণ। ছবি: রেমিনিসেন্স ফটোগ্রাফি

কনের গায়ে কেমন জামদানি

বিয়েতে চিরায়ত লালরঙা শাড়ির আবেদন এখনো আগের মতই আছে। তবে কনেদের যে লাল শাড়ি পরতেই হবে এই ধারণা ভেঙে এখন সব ধরনের রংই পরা হয় বিয়েতে। ফলে শুরুতে কনেরা বিয়েতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লাল জামদানি বেছে নিলেও এখন লালের পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে মেরুন, খয়েরি, বেগুনি, নীলের মতো অন্যান্য গাঢ় রঙের, এমনকি হালকা রঙের জামদানি শাড়িও। সাদা থেকে শুরু করে অফ-হোয়াইট, হালকা গোলাপি, ফিরোজা, আকাশী, ল্যাভেন্ডার, ছাই রং, সোনালীসহ নানা রঙের জামদানির নিখুঁত নকশায় সেজে উঠছেন কনেরা।

অনলাইন পেইজ চৌধুরী'সের স্বত্বাধিকারী রুবাইয়াত চৌধুরী প্রায় ৪ বছর ধরে জামদানি নিয়ে কাজ করছেন।

তিনি বলেন, 'বিয়েতে বেশিরভাগ কনেই লাল বা মেরুন বেছে নেন, পছন্দ করেন জামদানির সেই আদি নকশা। অনেকে দেখা যায় অফ-হোয়াইট বা গোল্ডেনও পছন্দ করছেন। আবার গায়ে হলুদের বেলায় হলুদ আর রাণী রঙের জামদানি বেছে নেন বেশিরভাগ মানুষ। আগে মূলত হলুদের অনুষ্ঠানে জামদানি পরার প্রচলন থাকলেও বর্তমানে শুধু হলুদের অনুষ্ঠানে নয়, বিয়ের যেকোনো অনুষ্ঠানেই মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে বেছে নিচ্ছেন জামদানি শাড়ি। শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে জামদানি ব্লাউজ ও ওড়না পরলে সাজ পরিপূর্ণ হয়ে উঠে।'

জামদানির মূল্য এর সুতার মান, ডিজাইন, কারিগরি দক্ষতা ও বুনতে কত সময় লাগছে তার ওপর নির্ভর করে বলে জানান তিনি। 

গায়িকা সভ্যতা বিয়েতে বেছে নিয়েছিলেন হালকা গোলাপি জামদানি। ছবি: রেমিনিসেন্স ফটোগ্রাফি

বাংলাদেশ ফ্যাশন আর্কাইভের তথ্যানুযায়ী, হাতে বোনা জামদানি শাড়ির সুতার কাউন্ট সাধারণত ৩২ থেকে ২৫০ কাউন্টের হয়ে থাকে। কাউন্ট দিয়ে সুতার মান বোঝানো হয়। বেশি কাউন্টের শাড়িগুলোর মান ভালো হয় এবং দাম বেশি হয়। চিকন সূক্ষ্ম সুতা দিয়ে জামদানি বুনতে সময় বেশি লাগে। বেশি কাউন্টের জামদানি শাড়ি বুনতে সাধারণত ৬ মাস থেকে ১ বছর পর্যন্তও সময় লাগতে পারে। হাতে বোনা জামদানি নরম ও মোলায়েম হয়ে থাকে, অন্যদিকে মেশিনে তৈরি জামদানি কিছুটা খসখসে হয়। কারিগররা পরম যত্ন ও দক্ষতার সঙ্গে জামদানি শাড়িতে বিভিন্ন নকশা ফুটিয়ে তোলেন।

অভিনেত্রী তিশা বিয়েতে সেজেছিলেন জামদানি শাড়িতে। ছবি: সংগৃহীত

জামদানি পরা কনের সাজ ও গয়না 

হালকা ও ট্র্যাডিশনাল বাঙালি স্নিগ্ধ সাজই জামদানি শাড়ির সঙ্গে সবচেয়ে বেশি মানানসই। আজকাল জামদানি শাড়ির সঙ্গে 'মিনিমাল মেকআপ' ট্রেন্ড খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। হালকা সাজ, কপালে টিপ, খোঁপায় ফুল আর হাতে একগুচ্ছ চুড়ি- এটুকুতেই অনন্য হয়ে উঠতে পারেন কনে। 

জামদানির সঙ্গে সোনা, রূপা, মুক্তা বা ইমিটেশনের গয়না সবই যায়। তবে জামদানির রং ও ডিজাইন বুঝে গয়না বানিয়ে বা কিনে নিতে হবে। খুব ভারী গয়না জামদানির সঙ্গে মানানসই হয় না। গয়নার দোকান অথবা বিভিন্ন অনলাইন পেইজে নিজেদের পছন্দমতো কাস্টমাইজ করে নিতে পারেন গয়না।

জামদানিতে সভ্যতা। ছবি: রেমিনিসেন্স ফটোগ্রাফি
 

ওড়না

বিয়ের সাজে ওড়নার একটা বিশেষ ভূমিকা আছে। জামদানি শাড়ির সঙ্গে ওড়না একটু বুঝেশুনে কিনতে হয় কনেদের। জমকালো ওড়নার বদলে এক্ষেত্রে হালকা কাজের ওড়না বেছে নেওয়াই ভালো। শাড়ির রঙের সঙ্গে মিলিয়ে বা কন্ট্রাস্ট করে মসলিনের ওড়না বেছে নিতে পারেন। অথবা জামদানি কাপড়ের ওড়নাও বিশেষভাবে বানিয়ে নিতে পারেন। সেটি করলে আরও বেশি ভালো লাগবে। 

জামদানি শুধু ৬ গজের একটি শাড়ি নয়, নিখুঁত নকশায় ফুটে উঠা দেশীয় ঐতিহ্য। জামদানিকে মসলিনের উত্তরসূরী বলা হয়। তাঁতিরা বহুদিন ধরে পরম যত্ন ও মমতায় শাড়িগুলো তৈরি করেন। জামদানি শাড়ি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বাইরেও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। দেশীয় ঐতিহ্যকে ধরে রেখে নিজের বিশেষ দিনে জামদানির আভিজাত্য, নিখুঁত নকশা আর স্নিগ্ধ সাজে হয়ে উঠুন অপরূপ।

 

Comments

The Daily Star  | English

The ceasefire that couldn't heal: Reflections from a survivor

I can’t forget the days in Gaza’s hospitals—the sight of dismembered children and the cries from phosphorus burns.

6h ago