ভয়েস অব আমেরিকার প্রতিবেদন

কাবুলে আবাসন ব্যবসা রমরমা, চাহিদা বাড়ছে বিলাসবহুল বাড়ির

কাবুলের একটি বিলাসবহুল বাড়ি। ছবি: এপি

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে বিলাসবহুল বাড়ির চাহিদা বাড়ছে। দেশে স্থিতিশীলতা ফেরায় এর সঙ্গে বাড়ছে বাড়ির দামও।

ভয়েস অব আমেরিকার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

কাবুলের রিয়েল এস্টেট এজেন্ট ওমিদউল্লাহ নয় বেডরুম ও নয় বাথরুমের একটি বাড়ি বিক্রির চেষ্টা করছেন। তিনি এ বাড়ির দাম ধরেছেন চার লাখ ৫০ হাজার ডলার। যে দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষের জীবিকা ত্রাণের ওপর নির্ভরশীল, সেখানে এমন বিলাসবহুল বাড়ি থাকাটা অবাক করার মতোই।

ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে এমন আফগানের সংখ্যাই বিরল। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বাড়ি কেনার প্রবণতাও নেই বললেই চলে। কিন্তু এরপরও এই বাড়ি কিনতে ইচ্ছুক, এমন ক্রেতার অভাব হচ্ছে না।

'আফগানদের টাকা-পয়সা নেই, এটা আসলে একটা মিথ,' বলেন ওমিদউল্লাহ। 'এদেশে বড় বড় ব্যবসায়ী আছেন, যারা দেশের বাইরে ব্যবসা করছেন। এমন অনেক বাড়ি আছে যেগুলোর দাম কয়েক মিলিয়ন ডলার।'

কাবুলের একটি বিলাসবহুল বাড়ির অভ্যন্তরীণ দৃশ্য। ছবি: এপি

দেশে ফিরছেন আফগানরা

যুদ্ধ ও সন্ত্রাসবাদের জন্য বহুবছরের অস্থিরতার পর আফগানিস্তানে আবার স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে। যে কারণে দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকা আফগানরা দেশে ফেরত আসছেন। এদের মধ্যে আছেন ইরান ও পাকিস্তানে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেওয়া জনগণও।

আফগানিস্তানের ব্যাংকগুলোতে সবসময় এমনিতেও অর্থের ঘাটতি থাকে। যে কারণে তারা বেশি ঋণ দিতে চায় না। আফগানরা তাই নিজের জমানো টাকা দিয়ে অথবা 'গিরাবি' নামক একটি পদ্ধতি ব্যবহার করে বাড়ি কেনেন। এই পদ্ধতিতে বাড়িওয়ালাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দিয়ে একটি বাড়ি ভাড়া নেওয়া হয়। বাড়িওয়ালা সেই অর্থ ফেরত দেওয়ার আগ পর্যন্ত সেখানে থাকা যায়।

আরেক রিয়েল এস্টেট এজেন্ট গুলাম মোহাম্মদ হাকদোস্ত জানান, আগে মানুষ কাবুলে বিনিয়োগ করতে ভয় পেত। নতুন প্রশাসনের অধীনে আবাসন সংক্রান্ত কর্মকাণ্ড বেশ দ্রুত ও সহজে সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে।

'বাড়ির দাম প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়েছে। এরপরও গত তিন বছরে আমরা প্রায় ৪০০ বাড়ি বিক্রি করেছি। আগে কখনো এমন হয়নি,' বলেন হাকদোস্ত।

কাবুলের একটি বিলাসবহুল বাড়ির সামনের দৃশ্য। ছবি: এপি

নির্মাণ ব্যবসার রমরমা মৌসুম

এ মুহূর্তে হাকদোস্তের ব্যবসায় সুদিন যাচ্ছে। তার অধীনে এক হাজার ২০০ কর্মী কাজ করেন। এদের মধ্যে নারী কর্মীও আছেন, যাদের দায়িত্ব নারী ক্রেতাদের সঙ্গে কাজ করা।

হাকদোস্ত জানান, বাসা দেখার সময় বেশিরভাগ ক্রেতা স্ত্রীদের নিয়েই আসেন। কারণ বাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত প্রায় সময় স্ত্রীরা নেন।

আফগান পরিবারগুলো সাধারণত তাদের বাড়িতে অতিথিদের থাকার ব্যবস্থা রাখেন। তাই ধনী ক্রেতারা বাগান, জিম, সুইমিং পুল, অতিথি কক্ষ ও অন্তত একটি রান্নাঘর আছে এমন বাড়ি চান।

হাকদোস্তের বেশিরভাগ ক্রেতা বিদেশ-ফেরত। তাদের রুচির প্রভাব আফগান বাড়িগুলোতেও পড়ছে। তারা কেন্দ্রীয় হিটিং ব্যবস্থা, ডাবল-প্যান জানালা, লিফট আছে এমন বাসা পছন্দ করেন।

কাবুলের একটি বিলাসবহুল বাড়ির অভ্যন্তরীণ দৃশ্য। ছবি: এপি

২০০০ সালে কাবুলের জনসংখ্যা ছিল প্রায় পাঁচ লাখ। এখন তা ৫০ লাখেরও বেশি। শহরটিকে আরও বাসযোগ্য করতে নগর কর্তৃপক্ষ নতুন রাস্তা তৈরি, আগের রাস্তা সংস্কার, রাস্তার পাশে লাইট স্থাপন ও গাছপালা রোপন এবং আবর্জনা অপসারণের কাজ করছে। এ ছাড়া কম খরচের আবাসন প্রকল্পের পরিকল্পনাও হাতে নিয়েছে তারা।

কাবুলের ঠিক বাইরে চার হাজার বর্গমিটার জমির ওপর নির্মিত একটি বাড়ি বিক্রির চেষ্টা করছেন আরশ আসাদ। তিনি এ বাড়ির দাম ঠিক করেছেন আট লাখ ডলার।

আসাদ বলেন, 'আফগানরা বৈধ বা অবৈধভাবে বছরের পর বছর ধরে কত অর্থ উপার্জন করেছে, তা আপনি বিশ্বাসই করতে পারবেন না।'

Comments