বিশ্লেষণ

যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ বাংলাদেশের জন্য কতটা উদ্বেগের?

চট্টগ্রাম বন্দর
চট্টগ্রাম বন্দর। স্টার ফাইল ফটো

ট্রাম্প প্রশাসনের বৈশ্বিক বাণিজ্য নীতি ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি রপ্তানি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোঘণা দিয়েছেন। এর ফলে বাংলাদেশকে নতুন করে অর্থনৈতিক চাপের মুখে পড়তে হতে পারে।

ঢালাওভাবে এই শুল্ক আরোপকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যনীতিতে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই বাণিজ্যযুদ্ধ বিশ্বজুড়ে অর্থনীতিবিদ এবং উদ্যোক্তাদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা সমস্ত পণ্যের ওপর ন্যূনতম ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। এর পাশাপাশি, বাংলাদেশসহ প্রায় ৬০টি দেশের ওপর নির্দিষ্ট হারে আরও বেশি 'রেসিপ্রোকাল শুল্ক' আরোপ করা হবে। উল্লেখ্য, আগে বাংলাদেশি পণ্য গড়ে ১৫.৬২ শতাংশ শুল্ক দিয়ে মার্কিন বাজারে প্রবেশ করত।

আজ বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউজ প্রকাশিত একটি চার্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশ মার্কিন পণ্যের ওপর ৭৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। তাই, বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ 'ডিসকাউন্টেড রিসিপ্রোকাল ট্যারিফ' ধার্য করা হয়েছে।

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্টে লিখেছেন, 'বাংলাদেশ এবং অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এই পরিবর্তন বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। এমন একটি অনিশ্চিত ব্যবস্থায় কঠিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।'

বিশাল শুল্কের কারণে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্প সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ঐতিহাসিকভাবে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পোশাকের অন্যতম প্রধান রপ্তানি গন্তব্য। শুল্ক আরোপের কারণে বাংলাদেশের পণ্য প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশের মোট বৈশ্বিক রপ্তানির ১৭ থেকে ১৮ শতাংশই যায় যুক্তরাষ্ট্রে।

ইউএসটিআরের (ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি আগের বছরের তুলনায় ১.১ শতাংশ বেড়ে ৮.৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় অবদান তৈরি পোশাক খাতের। একই সময়ে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে আমদানি ১.৫ শতাংশ কমে ২.২ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। এর ফলে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে ৬.২ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

অধ্যাপক রায়হান এই শুল্ক আরোপের বৃহত্তর প্রভাবের কথা তুলে ধরে আরও লিখেছেন, 'ট্রাম্প প্রশাসনের রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে বিশ্ববাণিজ্যে এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এটি দীর্ঘদিন ধরে গ্যাট (GATT)/বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (WTO) কাঠামোর ভিত্তি হিসেবে থাকা সর্বাধিক সুবিধাপ্রাপ্ত দেশ (MFN) নীতির সম্ভাব্য সমাপ্তি অথবা একটি বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।'

রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ ব্যবস্থায় বিভিন্ন দেশের জন্য এমনকি বিভিন্ন পণ্যের জন্য ভিন্ন ভিন্ন শুল্ক হার প্রযোজ্য হবে, যা বৈশ্বিক বাণিজ্য পরিবেশকে আরও অনিশ্চিত করে তুলবে। অধ্যাপক রায়হান লিখেছেন, 'এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে কারা লাভবান হবে আর কারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তা নির্ধারণ করা ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠছে। একই সঙ্গে এটি বিশ্ব বাণিজ্য পরিবেশকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলছে।

ট্রাম্পের এই শুল্ক নীতি নিয়ে এইচঅ্যান্ডএম-সহ প্রধান পোশাক খুচরা বিক্রেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এইচঅ্যান্ডএমের সিইও ড্যানিয়েল এরভার বলেছেন, এই শুল্কের কারণে মার্কিন ভোক্তাদের বেশি দামে পণ্য কিনতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশেকে যেকোনো প্রতিক্রিয়া জানানোর ব্যাপারে কৌশলী হতে হবে। অধ্যাপক রায়হান লিখেছেন, 'এই নতুন পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশকে অবশ্যই তার অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য নীতিগুলো পুনর্বিবেচনা করতে হবে, বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থার সংস্কারে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে হবে এবং পরিবর্তিত বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থায় নিজের অবস্থান সুরক্ষিত করতে মূল অংশীদারদের সঙ্গে বাণিজ্য সহযোগিতা বাড়াতে হবে।'

এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোও নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের মুখে পড়েছে। হোয়াইট হাউসের নথি অনুসারে, ভিয়েতনামের ওপর ৪৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। উচ্চ শুল্কের মুখে পড়া অন্যান্য দেশের মধ্যে রয়েছে জাপান (২৪%), দক্ষিণ কোরিয়া (২৫%), ভারত (২৬%), কম্বোডিয়া (৪৯%) এবং তাইওয়ান (৩২%)।

ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধের প্রধান লক্ষ্যবস্তু চীনকে ৩৪ শতাংশ রেসিপ্রোকাল ট্যারিফের সম্মুখীন হতে হবে। এর সঙ্গে মাদক সংক্রান্ত বিদ্যমান ২০ শতাংশ শুল্ক এবং সোলার প্যানেলের মতো পণ্যের ওপর পৃথক শুল্ক যুক্ত হবে। ফলে অনেক চীনা পণ্যের ওপর কার্যকর শুল্কের হার ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। ব্লুমবার্গ ইকোনমিকসের বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, এর ফলে ২০৩০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে চীনা রপ্তানি ৯০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে।

Comments

The Daily Star  | English

Sinner dethrones Alcaraz to capture maiden Wimbledon crown

Jannik Sinner downed Carlos Alcaraz 4-6, 6-4, 6-4, 6-4 on Sunday to win his first Wimbledon title, gaining sweet revenge for his painful defeat in the French Open final.

6h ago