দাভোসে আন্তর্জাতিক ফোরামেও কানাডাকে অঙ্গরাজ্য হওয়ার আহ্বান ট্রাম্পের

দাভোসে ভার্চুয়াল বক্তব্য দিচ্ছেন ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
দাভোসে ভার্চুয়াল বক্তব্য দিচ্ছেন ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

প্রথমবারের মতো একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কানাডাকে মার্কিন অঙ্গরাজ্যে পরিণত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন নবনিযুক্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে দেওয়া ভার্চুয়াল বক্তব্যে এই কথা জানান তিনি।

আজ শুক্রবার এই তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএস।

২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর এটাই প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক ফোরামে ট্রাম্পের অংশগ্রহণের ঘটনা। 

ভিডিও লিংকের মাধ্যমে দেওয়া তার বক্তব্য ও প্রশ্নোত্তর পর্বে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে—মার্কিন বাণিজ্যিক স্বার্থসিদ্ধিতে ঘনিষ্ঠ মিত্রদেরকেও কোনো ছাড় দিতে আগ্রহী নন ট্রাম্প।

যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি মিত্রের প্রতি তির্যক মন্তব্য করলেও কানাডার বিষয়ে নজিরবিহীন বক্তব্য রাখেন ট্রাম্প।

এর আগে আগামী সপ্তাহেই কানাডার পণ্য আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। তবে পরবর্তীতে এক নির্বাহী আদেশে তিনি সময়সীমা খানিকটা বাড়িয়েছেন।

আগামী ১ এপ্রিলের মধ্যে উত্তর আমেরিকার সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলো নিরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছেন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট।  নিরীক্ষা শেষে শুল্ক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি।

কানাডা নিয়ে নানা অভিযোগ

২০১৭ সালে জার্মানির হামবুর্গে জি২০ সম্মেলনে ট্রুডো-ট্রাম্প। ফাইল ছবি: রয়টার্স
২০১৭ সালে জার্মানির হামবুর্গে জি২০ সম্মেলনে ট্রুডো-ট্রাম্প। ফাইল ছবি: রয়টার্স

দাভোসের বক্তব্যে তিনি কানাডার সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে অভিযোগ করেন।

বক্তব্যে তিনি দাবি করেন, এই ঘাটতির পরিমাণ ২০ হাজার কোটি থেকে ২৫ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের আশেপাশে।

তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিমাণটি বাস্তবে আরও অনেক কম এবং তা মার্কিন তেল রপ্তানির দামের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ওঠানামা করে।

'আমরা আর এরকম হতে দেব না। এটা অব্যাহত রাখা সম্ভব নয়', যোগ করেন ট্রাম্প।

তিনি আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্রের কানাডা থেকে তেল, গ্যাস, গাড়ি বা কাঠ আমদানির কোনো প্রয়োজন নেই।

দাভোসের বক্তব্যে আবারও যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হিসেবে কানাডার নাম প্রস্তাব করেন ট্রাম্প।

বেশ কয়েক মাস ধরে তিনি তার নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশালে এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন।

প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে নৈশভোজের সময় সামনাসামনি 'কানাডার গভর্নর' বলেও অভিহিত করেছিলেন ট্রাম্প।

ট্রাম্প বলেন, 'আপনারা সম্ভবত এটা জানেন, তাও বলছি, চাইলেই আপনারা (মার্কিন) অঙ্গরাজ্য হতে পারে। আর যদি অঙ্গরাজ্য হতে সম্মত হন, তাহলে আরও কোনো (বাণিজ্য) ঘাটতি থাকবে না। আপনাদের পণ্যে শুল্ক আরোপেরও প্রয়োজন থাকবে না।'

তিনি অভিযোগ করেন, কানাডার সঙ্গে কাজ করা সব সময়ই ঝামেলার। তিনি আরও উল্লেখ করেন, কানাডার পণ্য 'যুক্তরাষ্ট্রের দরকার নেই'।

'গাড়ি নির্মাণের জন্য তাদেরকে দরকার নেই আমাদের। তারা নিজেরাই অনেক বেশি গাড়ি নির্মাণ করে। তাদের কাঠেরও দরকার নেই, কারণ যুক্তরাষ্ট্রে বনের অভাব নেই। তাদের তেল-গ্যাসেরও প্রয়োজন নেই', যোগ করেন ট্রাম্প।

তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের এসব দাবি পুরোপুরি সত্য নয়। 

জ্বালানি তেলের দিক দিকে যুক্তরাষ্ট্র এখনো স্বনির্ভর নয়। এখনো দেশটিতে তেল উত্তোলন বা উৎপাদনের চেয়ে আমদানি বেশি হয় এবং এর বেশিরভাগই আসে কানাডা থেকে। এমন কী, মার্কিন পরিশোধনাগারগুলোও কানাডার অপরিশোধিত তেল পরিশোধনের আদলেই তৈরি করা হয়েছে।

মার্কিন-কানাডীয় সম্পর্কে পরিবর্তনের আভাস

সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে দেওয়া ভার্চুয়াল বক্তব্যে এই কথা জানান তিনি।
সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে দেওয়া ভার্চুয়াল বক্তব্যে এই কথা জানান তিনি।

সব মিলিয়ে বলা যায়, বেশ কয়েক প্রজন্ম ধরে কানাডা-যুক্তরাষ্ট্রের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের সব রীতিনীতি ভঙ্গ করেছেন ট্রাম্প। তিনি কানাডার সার্বভৌমত্ব নিয়ে পাবলিক ফোরামে প্রশ্ন তুলেছেন, যা এর আগে আর কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট তো দূরে থাক, কোনো রাজনীতিবিদও করেননি।

একটি স্বাধীন, সার্বভৌম দেশকে নিজের দেশের অংশ করে নেওয়া বর্তমান শতাব্দীতে হাস্যকর শোনালেও অতীতে ট্রাম্প অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছেন।

ক্ষমতা গ্রহণের আগেই পানামা খাল, গ্রিনল্যান্ড ও কানাডার ওপর নজর দিয়েছেন ট্রাম্প।

তবে এ ক্ষেত্রে মার্কিন জনমত ভিন্ন।

রয়টার্স, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও ইকোনোমিস্টের জরিপে জানা গেছে, মার্কিনীরা একেবারেই চান না কানাডা, যুক্তরাষ্ট্রে অন্তর্ভুক্ত হোক।

অপরদিকে, কানাডীয়দের মধ্যে পরিচালিত ইপসোসের এক জরিপে দেখা গেছে, ৪৩ শতাংশ নাগরিক যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য হওয়ার বিষয়টিতে আগ্রহী। তবে তারা শর্ত দিয়েছেন, এ ক্ষেত্রে তাদেরকে মার্কিন নাগরিকের মর্যাদা দিতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh national election timeline

Preparing for election: EC targets Dec to get all its tasks done

There is no hard and fast decision on when the next election will be held, but the Election Commission is making preparations to hold it in December.

4h ago