ন্যাটো সম্মেলনে ‘যা চেয়েছেন, তা-ই পেয়েছেন’ ট্রাম্প

ন্যাটো সম্মেলনের পর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পের রসিকতায় হেসে উঠেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও। ছবি: এএফপি
ন্যাটো সম্মেলনের পর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পের রসিকতায় হেসে উঠেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও। ছবি: এএফপি

নেদারল্যান্ডের দ্য হেগে হয়ে গেল ন্যাটোর সংক্ষিপ্ত সম্মেলন। জোটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি মেনে নিয়ে সদস্য রাষ্ট্ররা প্রতিরক্ষা খাতে খরচ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাশাপাশি, পুনর্ব্যক্ত করেছে একে অপরকে সুরক্ষা দেওয়ার অঙ্গীকার।

আজ বৃহস্পতিবার এই তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।

ট্রাম্পের 'সুবিশাল বিজয়'

ন্যাটো সম্মেলনের ফাঁকে ট্রাম্প-জেলেনস্কির বৈঠক। ছবি: এএফপি
ন্যাটো সম্মেলনের ফাঁকে ট্রাম্প-জেলেনস্কির বৈঠক। ছবি: এএফপি

বিশ্লেষকদের মতে, ন্যাটোর বার্ষিক বৈঠক থেকে ট্রাম্প যা চেয়েছিলেন, তাই পেয়েছেন। এ ছাড়াও, ট্রাম্প 'সামগ্রিক সুরক্ষার' অঙ্গীকারে ফিরে আসায় মিত্ররাও আশ্বস্ত হয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, 'আমরা এখানে সুবিশাল বিজয় অর্জন করেছি।'

তিনি আশা করছেন—বাড়তি অর্থ যুক্তরাষ্ট্রে নির্মিত যন্ত্রাংশের পেছনে খরচ হবে।

সম্মেলন শেষে ন্যাটো পাঁচ দফার বিবৃতি প্রকাশ করে। সেখানে আগের চেয়ে প্রতিরক্ষা খাতে বেশি খরচ করার পক্ষে যুক্তি দেওয়া হয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই ব্যাখ্যা শুধু ট্রাম্প সন্তুষ্ট করার জন্য নয়, এটি সামগ্রিকভাবে ইউরোপীয়দের নিরাপত্তা ঝুঁকি ও আশঙ্কা কমানোর উদ্যোগ। বিশেষত, ২০২২ সালে রাশিয়ার 'বিনা উসকানিতে' প্রতিবেশী ইউক্রেন আগ্রাসন শুরুর পর থেকেই এ ধরনের হুমকি বাড়ছে।

জোটের ৩২ দেশের সংক্ষিপ্ত বার্তায় আরও বলা হয়, 'আমরা ওয়াশিংটন চুক্তির পাঁচ নম্বর অনুচ্ছেদে উল্লেখিত সমষ্টিগত সুরক্ষার ইস্পাতকঠিন অঙ্গীকার মেনে চলার বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করছি—জোটের কোনো সদস্য আক্রান্ত হলে তা সবার বিরুদ্ধে হামলা হিসেবে বিবেচিত হবে।'

নিজের অবস্থান 'স্পষ্ট' করলেন ট্রাম্প

ন্যাটো সম্মেলনে জোটের নেতারা। ছবি: এএফপি
ন্যাটো সম্মেলনে জোটের নেতারা। ছবি: এএফপি

সাম্প্রতিক সময়ে একাধিকবার পাঁচ নম্বর অনুচ্ছেদ মেনে চলার বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করেছিলেন ট্রাম্প। বলেছিলেন, ইউরোপকে নিজেদের সুরক্ষা নিজেদেরই দিতে হবে।

তবে সম্মেলন শেষে এ বিষয়ে তার অবস্থান স্পষ্ট করেন ট্রাম্প। সাংবাদিকদের বলেন, 'আমি (ওই অনুচ্ছেদের) সঙ্গে আছি। এ কারণেই আমি এখানে এসেছি। আমি যদি এটা না মানতাম, তাহলে এখানে আসতাম না।'

ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছেন, প্রতিরক্ষার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ন্যাটোর দেশগুলো অনেক বেশি নির্ভরশীল। এ কারণেই মূলত তিনি দাবি করেন, সদস্য দেশগুলোকে তাদের প্রতিরক্ষা খাতে খরচ বাড়াতে হবে।

ন্যাটোর মহাসচিব মার্ক রুত্তে তার জন্মস্থান দ্য হেগ শহরে এই সম্মেলনের আয়োজন করেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে ন্যাটো আরও 'শক্তিশালী, ন্যায্য ও সমীহ জাগানিয়া' জোটে উন্নীত হবে।

সাবেক ডাচ প্রধানমন্ত্রী রুত্তে আরও জানান, ন্যাটো সদস্যদের প্রতিরক্ষা খাতে খরচ বাড়াতে রাজি করানোর জন্য ট্রাম্প 'সকল প্রশংসার' দাবিদার।

ট্রাম্পকে নিজেদের পক্ষে রাখার জন্য অতিরিক্ত তোষামোদি করেছেন কিনা?—এমন প্রশ্নের জবাবে রুত্তে জানান, ব্যক্তিগত জীবনে তারা একে অপরের বন্ধু। তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে কী আচরণ করেছেন, তা বিচার করা যার যার রুচির প্রতিফলন বলেও মনে করেন এই নেতা।

ন্যাটোর নতুন লক্ষ্য

ন্যাটো সম্মেলনে জোটের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা। ছবি: এএফপি
ন্যাটো সম্মেলনে জোটের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা। ছবি: এএফপি

ন্যাটোর আগের লক্ষ্য ছিল সদস্য দেশগুলো নিজ নিজ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অন্তত দুই শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে খরচ করবে। নতুন লক্ষ্য হলো পাঁচ শতাংশ, যা আগামী ১০ বছরের মধ্যে পূরণ করতে হবে। এতে দেশগুলো প্রতিরক্ষা খাতে কয়েক শ বিলিয়ন ডলার খরচ বাড়াবে।

বর্তমান লক্ষ্য অনুসারে—মৌলিক সুরক্ষায় সাড়ে তিন শতাংশ খরচ করতে হবে। এর মধ্যে থাকবে সেনা নিয়োগ, প্রশিক্ষণ ও পরিচালনা এবং অস্ত্র-গোলাবারুদের খরচ।

পাশাপাশি, আরও দেড় শতাংশ খরচ হবে বৃহত্তর পর্যায়ের সুরক্ষা উদ্যোগে, যেমন সাইবার নিরাপত্তা, পাইপলাইনের সুরক্ষা ও ভারী সামরিক পরিবহনের যাতায়াত সহজ করতে সড়ক ও সেতু নির্মাণ।

বিশ্লেষকদের মতে, অর্থনৈতিক মন্দায় জর্জরিত ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশের জন্য নতুন এই খরচের ধাক্কা সামলানো বেশ কঠিন হবে।

ইতোমধ্যে স্পেন এই বাড়তি খরচের বোঝা ঘাড়ে না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

এতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প। 'শাস্তির' হুমকিও দিয়ে তিনি দাবি করেন, 'স্পেনের অর্থনীতি এখন ভালো করছে। কিন্তু খারাপ কিছু হলে সব অর্জন ভেসে যাবে।'

ট্রাম্প হুমকি দেন, ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় স্পেনের সঙ্গে কঠোর বাণিজ্যনীতি অনুসরণ করবেন তিনি।

Comments