দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু

গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরুর শেষ মুহূর্ত পর্যন্তও থামেনি ইসরায়েলি হামলা। ছবি: এএফপি
গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরুর শেষ মুহূর্ত পর্যন্তও থামেনি ইসরায়েলি হামলা। ছবি: এএফপি

খুব শিগগিরই কার্যকর হতে যাচ্ছে গাজার বহুল প্রতীক্ষিত যুদ্ধবিরতি। বাংলাদেশ সময় দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই যুদ্ধবিরতি শুরু হবে। প্রথম পর্যায়ে ৪২ দিনের বিরতিতে সম্মত হয়েছে হামাস-ইসরায়েল।

আজ রোববার এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি।

'ইসরায়েল-হামাসের যুদ্ধে বিরতি' নামে আখ্যায়িত এই উদ্যোগের আওতায় আজ তিন ইসরায়েলি জিম্মির মুক্তির বিনিময়ে অজ্ঞাত সংখ্যক ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি পাবেন। 

যদি সব কিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী চলে, তাহলে প্রথম ৪২ দিনের যুদ্ধবিরতিতে (প্রথম পর্যায়) ৩৩ জন ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তি পাবেন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর তাদেরকে ইসরায়েলি ভূখণ্ড থেকে অপহরণ করেছিল ফিলিস্তিনি সশস্ত্র বাহিনী হামাস।

চুক্তির আওতায় একই সময়ে ইসরায়েলি কারাগার থেকে মোট ৭৩৭ ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি পাবেন।

৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলার পর দেশটি হামাসের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে গাজায় নির্বিচার হামলা শুরু করে, যা গত ১৫ মাস ধরে চলছে। ইসরায়েলি সহিংসতায় প্রায় ৪৭ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। আহত হয়েছেন লাখেরও বেশি মানুষ। 

এই যুদ্ধবিরতিতে এই দেড় বছরের সহিংসতার অবসান ঘটবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী।

কাতার, যুক্তরাষ্ট্র ও মিসরের মধ্যস্থতায় এই চুক্তি বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। এর আগে বেশ কয়েক মাস ধরে আলোচনা চললেও এতে ফল আসেনি। অবশেষে, নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের ঠিক একদিন আগে চালু হতে যাচ্ছে এই যুদ্ধবিরতি।

যারা মুক্তি পাবেন

১৮ জানুয়ারি ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাইরে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ। ছবি: এএফপি (২০২৫)
১৮ জানুয়ারি ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাইরে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ। ছবি: এএফপি (২০২৫)

ইসরায়েলের বিচার মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রথম পর্যায়ে ৭৩৭ ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি পাবেন। আজ বাংলাদেশ সময় রাত ৮টা থেকে তাদেরকে মুক্তি দিতে শুরু করবে ইসরায়েল।

ইসরায়েল বন্দিদের জন্য বিশেষ অভ্যর্থনা কেন্দ্র তৈরি করেছে। নিজেদের পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ার আগে এসব কেন্দ্রে তারা চিকিৎসা ও কাউন্সেলিং সেবা পাবেন।

হামাসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ দুই সূত্র এএফপিকে জানিয়েছে, আজ ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর তিন নারী সদস্য মুক্তি পাবেন। তারা ৭ অক্টোবর থেকে হামাসের কাছে আটক আছেন।

তবে হামাসের ভাষ্য মতে, পূর্ণবয়স্ক কোনো ইসরায়েলি নাগরিক সামরিক প্রশিক্ষণ নিলেও তারা তাকে সেনা হিসেবে বিবেচনা করে। সে ক্ষেত্রে মুক্তি পেতে যাওয়া তিন নারী সৈনিক নাও হতে পারেন।

৭ অক্টোবর ২৫১ জন জিম্মি আটক হলেও এ মুহূর্তে গাজায় ৯৪ জন অবস্থান করছেন বলে ইসরায়েল ধারণা করে। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ইতোমধ্যে নিহত হলেও তাদের মরদেহ হস্তান্তরকেও জিম্মি হস্তান্তরের অংশ হিসেবে বিবেচনা করে ইসরায়েল।

ত্রাণ পরিস্থিতি

রাফা সীমান্তে হাজারো ত্রাণবাহী ট্রাক যুদ্ধবিরতি শুরুর অপেক্ষা। ছবি: এএফপি
রাফা সীমান্তে হাজারো ত্রাণবাহী ট্রাক যুদ্ধবিরতি শুরুর অপেক্ষা। ছবি: এএফপি

অপরদিকে, গাজা সীমান্তে হাজারো ত্রাণ ভর্তি ট্রাক অপেক্ষা করছে। যুদ্ধবিরতি শুরুর মাহেন্দ্রক্ষণটি উপস্থিত হলেই ট্রাকগুলো দুর্দশাগ্রস্ত গাজাবাসীর কাছে মানবিক ত্রাণ পৌঁছে দেবে।

মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আবেদলাত্তি জানান, অন্তত ৬০০টি ট্রাক আজ গাজায় প্রবেশ করবে। এগুলোর মধ্যে অন্তত ৫০টিতে জ্বালানি তেল থাকবে।

এর আগে ২০২৩ সালের নভেম্বরে এক সপ্তাহের জন্য যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছিল।

'সাময়িক' যুদ্ধবিরতি

টিভিতে বক্তব্য রাখছেন নেতানিয়াহু। ছবি: এএফপি
টিভিতে বক্তব্য রাখছেন নেতানিয়াহু। ছবি: এএফপি

টেলিভিশনে প্রচারিত বক্তব্যে শনিবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, যুদ্ধবিরতিতে সম্মতি দিলেও তার দেশ প্রয়োজনে আবারও যুদ্ধে ফিরবে এবং এ বিষয়টিতে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনও রয়েছে।

৪২ দিনের প্রথম পর্যায়টিকে তিনি 'সাময়িক যুদ্ধবিরতি' বলে আখ্যায়িত করে বলেন, 'যদি আমাদেরকে আবারও যুদ্ধ শুরু করতে বাধ্য করা হয়, তাহলে আমরা তা বিপুলবিক্রমে শুরু করব'।

যুদ্ধবিরতি শুরুর আগের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত ছিল বলে জানিয়েছে গাজার নাগরিক সুরক্ষা এজেন্সি।

তারা জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় দক্ষিণের শহর খান ইউনিসে একই পরিবারের অন্তত পাঁচ সদস্য নিহত হয়েছে।

ট্রাম্পের অবদান

ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

এনবিসিকে শনিবার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তার কারণেই যুদ্ধবিরতির বাস্তবায়ন হতে চলেছে। তিনি বলেন, 'আমি নেতানিয়াহুকে বলেছি, এই যুদ্ধের অবসান হতে হবে'।

'আমরা চাই এটা বন্ধ হোক। কিন্তু যা করা দরকার, সেটাও করে যেতে হবে', যোগ করেন তিনি।

মধ্যপ্রাচ্যে বাইডেন সরকারের প্রতিনিধি ব্রেট ম্যাকগার্ক ও ট্রাম্পের প্রতিনিধি স্টিভ উইটকফ এই চুক্তি চূড়ান্তের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে মার্কিন কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন। 

Comments

The Daily Star  | English
UN fact-finding report on July uprising

Awami League govt guilty of gross human rights violations: UN

Coordinated, calculated acts of violence, repression tantamount to crimes against humanity

3h ago