বিষাক্ত ধোঁয়াশার চাদরে ঢাকা নয়াদিল্লি, স্কুল বন্ধ ঘোষণা
গত বেশ কিছুদিন ধরেই চরম মাত্রার বিষাক্ত ধোঁয়াশায় ছেয়ে আছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে। প্রতিদিনই অবনতি হচ্ছে পরিস্থিতির। শহরটিতে বিরাজমান স্বাস্থ্য সংকটের মাঝে সব স্কুলে পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত অনলাইন ক্লাস চালু রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
আজ সোমবার থেকেই এই নির্দেশনা প্রযোজ্য হবে। এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।
নয়াদিল্লির বাতাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বেঁধে দেওয়া মানদণ্ডের চেয়েও ৫৭ গুণ বেশি বিষাক্ত মাইক্রোপার্টিকেল বা ক্ষুদ্র কণা পিএম ২.৫ এর উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে।
ভয়াবহ এই ক্ষুদ্র কণা মানবদেহের রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে ফুসফুসে পৌঁছে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে।
আজ সোমবার ভোরেও এই পরিমাণটি গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে ৩৯ গুণ বেশি ছিল।
আজও গভীর, ধূসর ও কটু গন্ধযুক্ত ধোঁয়াশার চাদরে আবৃত ছিল শহরটি।
নয়াদিল্লিতে প্রতি বছরই এ ধরনের ধোঁয়াশা দেখা দিলেও এবারের পরিস্থিতি অন্যান্য বারের চেয়ে ভয়াবহ।
প্রতিবেশী রাজ্যগুলোতে ফসল কাটার পর খড় পোড়ানোর ফলে সৃষ্ট ধোঁয়া এর অন্যতম কারণ। পাশাপাশি কারখানা ও জীবাশ্ম জ্বালানিতে চলে এমন গাড়ির ধোঁয়া থেকেও এই ধোঁয়াশা তৈরি হয়।
নগর কর্তৃপক্ষ বাতাসের গুণমানের যাতে আরও অবনতি না হয়, সেটা ঠেকানোর জন্য এই উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানিয়েছে।
কর্তৃপক্ষ মনে করছে, স্কুলগামী শিশুরা বাসায় থাকলে ট্রাফিক জ্যাম অনেক কমে আসবে।
নয়াদিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অতিশি (যিনি নিজেকে এই নামেই পরিচয় দেন) রোববার দিনের শেষে এক বিবৃতিতে বলেন, 'দশম ও দ্বাদশ শ্রেণি ছাড়া বাকি সব শ্রেণির সশরীরে ক্লাস বাতিল করা হচ্ছে।'
বৃহস্পতিবারেই প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে সশরীরে ক্লাস বন্ধ করে দেওয়া হয়।
পরিস্থিতি সামলাতে আজ সোমবার সড়কে ডিজেল চালিত ট্রাক ও নির্মাণকাজের ওপর আরও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।
সরকার শিশু ও বয়স্কদের (বিশেষত যারা ফুসফুস বা হৃদরোগে আক্রান্ত) যত বেশি সময় সম্ভব ঘরের ভেতর থাকার পরামর্শ দিয়েছে সরকার।
সোমবার সকাল থেকে এসব নির্দেশ কার্যকর হয়েছে।
নয়াদিল্লি ও এর আশেপাশের মেট্রোপলিটন এলাকায় মোট তিন কোটি মানুষের বসবাস। শহরটি শীত মৌসুমে নিয়মিত 'সবচেয়ে দূষিত বাতাসের' নগরের খেতাব অর্জন করে।
ঠাণ্ডা আবহাওয়া ও বাতাসের ধীরগতির জন্য দূষণ সৃষ্টিকারী উপকরণ বায়ুমণ্ডলে আটকা পড়ে। যার ফলে বাতাসে ধোঁয়াশা দেখা দেয়। অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে অন্তত জানুয়ারি পর্যন্ত প্রায় প্রতি বছরই এই পরিস্থিতি থাকে।
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট গত মাসে রায় দিয়ে জানিয়েছে, বিশুদ্ধ বাতাস মানুষের মৌলিক অধিকার। আদালত কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার কর্তৃপক্ষকে এই অধিকার নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
Comments