পাকিস্তানের গাধা ব্যবসায়ীরা বিপাকে

আতিফের গাধা 'রাজা'। ফাইল ছবি: এএফপি
আতিফের গাধা 'রাজা'। ফাইল ছবি: এএফপি

এক সময় পাকিস্তানের বাণিজ্যিক কেন্দ্র করাচির সড়কগুলো হাজারো গাধার ডাকে মুখরিত হোত। তবে একবিংশ শতাব্দীতে এসে লালন পালনের খরচ ও লাগামহীন নগরায়ণের ফলে এই চিরাচরিত ব্যবসায় ভাটা পড়েছে। বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। 

আজ রোববার এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি।

করাচির দক্ষিনাঞ্চলের পাইকারি বাজার থেকে দেশের অন্যান্য অংশে বিভিন্ন পণ্য পরিবহনে গুরুত্বপুর্ন ভূমিকা রাখে গাধা। এ অঞ্চলের অপ্রশস্ত্র সড়কগুলতে গাধায় টানা গাড়ি ছাড়া অন্য পরিবহনের চলাচল বেশ কঠিন। তবে ধীরে ধীরে পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে।

নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য জীবিকা অর্জনের একটি বড় মাধ্যম গাধা। এই প্রাণির সহনশীলতা, লালন পালনের অপেক্ষাকৃত কম খরচ ও স্থিতিশীল আয়-উপার্জনের নিশ্চয়তার কারণে করাচির বাসিন্দাদের কাছে আস্থার প্রতীক গাধা।  

করাচিতে রোববারের হাটে বিক্রি হচ্ছে গাধা। ফাইল ছবি: এএফপি
করাচিতে রোববারের হাটে বিক্রি হচ্ছে গাধা। ফাইল ছবি: এএফপি

তবে একদিকে যেমন বেড়েছে নগরায়ন, তেমনি, অপরদিকে গাধার খাবারের দামও হয়েছে আকাশচুম্বি। করাচি শহরের আকার-আয়তন পাকিস্তানের স্বাধীনতার আগে যা ছিল, তার তুলনায় ৫০ গুণ বেড়েছে। যার ফলে, শহরের এক মাথা থেকে আরেক মাথায় যেতে গাধার মতো সহনশীল প্রাণির জন্যও দুষ্কর হয়ে পড়েছে।

রাজা নামের একটি গাধার মালিক মোহাম্মাদ আতিফ বলেন, 'আমরা আমাদের বাপ-দাদার ব্যবসা হিসেবে এখনো গাধা পালছি, তবে আমি চাই আমার সন্তান পড়ালেখা শিখে অন্য কোনো পেশায় যাক।'

আতিফ (২৭) জানান, রাজার পেছনে দিনে প্রায় ৭৫০ রুপি খরচ হয় (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩২৫ টাকা), যা এর আগে ২০০ রুপি ছিল (প্রায় ৮৭ টাকা)। তিনি আরও জানান, সারাদিনে তার নিজের ও এক সহকর্মীর খাওয়ার খরচও প্রায় একই।

ঔপনিবেশিক আমলে নির্মিত বোল্টন বাজারে দাঁড়িয়ে এএফপিকে আতিফ বলেন , 'গাধার ব্যবসায় জীবিকা নির্বাহ করা এখন আর সম্ভব হচ্ছে না।'

ভালো দিনে উর্ধ্বে চার হাজার রুপি উপার্জন করতে পারলেও এতে পরিচালনার খরচ ও তার পরিবারের চাহিদা মেটে না।

সরকারি হিসাব মতে, পাকিস্তানে প্রায় ৬০ লাখ গাধা রয়েছে।

 প্রতি ৪০ জন মানুষের জন্য একটি করে গাধা রয়েছে বলে জানিয়েছে সরকারের পরিসংখ্যান বিভাগ।

স্থানীয় পশু ব্যবসায়ী আসলাম শাহ এএফপিকে বলেন, বেশিরভাগ গাধায় করাচিতে থাকে। শহরটি এ মুহূর্তে ২ কোটিরও বেশি মানুষের বসবাস।

আসলাম (৬৯) জানান, রোববারের সাপ্তাহিক হাটে গাধার চাহিদা অনেক কমে গেছে।

'মাঝে মাঝে মাসের পর মাস চলে যায়, তাও আমরা একটি গাধাও বিক্রি করতে পারি না', বলেন তিনি।

এক কালে করাচিতে গাধায় টানা গাড়ির সংখ্যা এত বেড়ে গেছিল যে বাধ্য হয়ে সরকার সেগুলোতে লাইসেন্স প্লেট বসানোর উদ্যোগ নেয়।

কিন্তু করাচি এখন মহানগরী। এখানে অসংখ্য এক্সপ্রেসওয়ে ও ওভারপাস নির্মাণের ফলে গাধা চলাচলের পথ সীমিত হয়ে পরেছে।

২১ বছর বয়সী আলি উসমান জানান, এখন গাধার বদলে ব্যাটারি চালিত থ্রি হুইলার রিকশায় করে পণ্য পরিবহন বেশি জনপ্রিয়।

'আমাকে বলা হয়েছে, অনেক মালামাল বহন করতে হবে। আমি জানি আমাকে শহরের অন্য প্রান্তে যেতে হবে এবং এর জন্য কমপক্ষে তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় লাগবে। একই সময়ে রিকশাগুলো দুই-তিন বার ট্রিপ দিতে পারবে। এ কারণেই আমি কাজটি পাইনি', যোগ করেন তিনি।  

এমপ্রেস মার্কেটের পাইকারি ব্যবসায়ী নোমান ফারহাত জানান, তিনি দয়া করে প্রতিদিন গাধার মালিকদের অল্প কিছু কাজ দেন। কিন্তু এখন আরও কার্যকর ও উপযোগী পরিবহনব্যবস্থা রয়েছে বলে জানান তিনি।

করাচিতে রোববারের হাটে বিক্রি হচ্ছে গাধা। ফাইল ছবি: এএফপি
করাচিতে রোববারের হাটে বিক্রি হচ্ছে গাধা। ফাইল ছবি: এএফপি

'তারা আমাদের সংস্কৃতির অংশ। গাধার মালিকরা দেউলিয়া হয়ে পড়লে সেটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক হবে', বলেন তিনি।

করাচির এক পশু অধিকারকর্মী নাম না প্রকাশের শর্ত এবলেন, দীর্ঘ যাত্রা ও সড়কের ভঙ্গুর অবস্থার কারণে গাধাগুলো অসুস্থ হয়ে পড়ছে।

তিনি বলেন, 'উপযুক্ত সরঞ্জামের অভাবে গাধার মালিকরা দড়ি ও কাপড়ের টুকরো দিয়ে তাদের পশুদের বেঁধে রাখেন। এতে গাধার চামড়ায় ক্ষত তৈরি হচ্ছে।'

করাচির পশু আশ্রয়কেন্দ্র বেনজি প্রজেক্টের ব্যবস্থাপক সিমা খান বলেন, 'গাধাগুলো অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্য দিয়ে গেলেও, তারা আমাদের অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ।

'এখনো সবচেয়ে সাশ্রয়ী পরিবহন এটাই', যোগ করেন তিনি।

৭৬ বছর বয়সী তৃতীয় প্রজন্মের গাধা ব্যবসায়ী গোলাম রাসুল বলেন, 'কেয়ামত পর্যন্ত এই কাজ করব আমরা।'

'দুই-তিন দিন কাজ না পেলে কি হবে? কেউ না কেউ আমাদেরকে খুঁজবেই', যোগ করেন তিনি।

 

Comments

The Daily Star  | English

Depositors leave troubled banks for stronger rivals

Depositors, in times of financial uncertainty, usually move their money away from troubled banks to institutions with stronger balance sheets. That is exactly what unfolded in 2024, when 11 banks collectively lost Tk 23,700 crore in deposits.

10h ago