সিনওয়ারের মৃত্যুতে গাজার যুদ্ধ দ্রুত শেষ হবে, আশাবাদ ইসরায়েলের

প্রয়াত হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার। ফাইল ছবি: রয়টার্স
প্রয়াত হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার। ফাইল ছবি: রয়টার্স

ইসরায়েলি হামলায় হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার নিহত হয়েছেন। এই প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রি বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, এবার বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হলে যুদ্ধ বন্ধ হবে। সঙ্গে হামাসকে অস্ত্র ছাড়তে হবে, এমন শর্তও দিয়েছেন তিনি। 

ইসরায়েলের দাবি, ইয়াহিয়া সিনওয়ার ছিলেন গত বছর ইসরায়েলে হামাসের আক্রমণের মূল পরিকল্পনাকারী। ইসরায়েলের কাছে তিনি ছিলেন 'মোস্ট ওয়ান্টেড পার্সন'। ইসরায়েলের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার গাজায় তাদের অভিযান চলার সময় সিনওয়ার মারা যান।

ইসরয়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল ক্যাটজ এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, 'এটি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সামরিক ও নৈতিক কৃতিত্ব। এর ফলে বন্দিদের অবিলম্বে মুক্তির পথ খুলে যাবে।'

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'গত বছর ৭ অক্টোবরে ইসরায়েলে হত্যা ও অত্যাচারের জন্য দায়ী গণহত্যাকারী ইয়াহিয়া সিনওয়ার ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) সামাজিক মাধ্যমে সিনওয়ারের মত্যুর খবর দেয়।

সকাল থেকে গুজব ছড়িয়ে পড়ে, নিহত হয়েছেন সিনওয়ার। পরবর্তীতে ডিএনএ পরীক্ষা করে সিনওয়ারের মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার পর এ বিষয়ে ঘোষণা আসে।

যুদ্ধ বন্ধে নেতানিয়াহুর শর্ত

সিনওয়ারের মৃত্যুতে তেল আবিবে আনন্দ প্রকাশ করছে ইসরায়েলিরা। ছবি: রয়টার্স
সিনওয়ারের মৃত্যুতে তেল আবিবে আনন্দ প্রকাশ করছে ইসরায়েলিরা। ছবি: রয়টার্স

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিলের কথাগুলো একটু বদলে বলেছেন, 'এখনো গাজার যুদ্ধ শেষ হয়নি। তবে শেষের শুরু হয়েছে বলা যেতে পারে।'

নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, 'আমি গাজার মানুষদের কাছে একটা সরল বার্তা দিতে চাই। যদি হামাস অস্ত্র ত্যাগ করে ও জিম্মিদের মুক্তি দেয়, তাহলে আগামীকালই যুদ্ধ থেমে যাবে। আর যদি কেউ বন্দিদের আঘাত করার চেষ্টা করে, কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা  করে, তাহলে তাদের বিচারও আমরা করব। আর যারা বন্দিদের ছেড়ে দেবে, তাদের সুরক্ষার সব ব্যবস্থা ইসরায়েল করবে।'

তিনি জানিয়েছেন, 'সাম্প্রতিক মাসগুলোতে হামাস ও হিজবুল্লাহর অসংখ্য নেতার মৃত্যু হয়েছে। এর ফলে এই অঞ্চলের মানুষের কাছে আশার আলো দেখা দিয়েছে। ইরানের তৈরি করা সন্ত্রাসের অক্ষরেখা গুঁড়িয়ে দেয়া সম্ভব হয়েছে। নাসরাল্লাহ আর নেই। তার সহকারী ফুয়াদও নিহত। হানিয়া, মোহাম্মদ দেইফের পর সিনওয়ারও আর নেই।'

বিশেষজ্ঞের দাবি

হামাসের দুই নেতা ইসমাইল হানিয়ে ও ইয়াহিয়া সিনওয়ার। দুইজনই ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন। ফাইল ছবি: রয়টার্স
হামাসের দুই নেতা ইসমাইল হানিয়ে ও ইয়াহিয়া সিনওয়ার। দুইজনই ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন। ফাইল ছবি: রয়টার্স

সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সিনিয়র ফেলো ও মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ নাতাশা হ্যাল ডিডাব্লিউকে বলেছেন, 'যুক্তরাষ্ট্র আর কবে বুঝবে যে, নেতাদের মেরে শেষ করে দিলেও হামাসের মতো মতাদর্শ শেষ হয়ে যায় না। তারা আবার নতুন করে শুরু করে। হিজবুল্লাহ ও হামাসের ক্ষেত্রে অতীতে এটাই হয়েছে। বিশ্বজুড়ে অন্য অনেক সশস্ত্র সংগঠনের ক্ষেত্রে এরকম হয়েছে। তারা আবারও নিজেদের সংগঠিত করেছে।'

নাতাশা জানিয়েছেন, 'কোনো সন্দেহ নেই, হামাস দুর্বল হয়েছে, নেতৃত্বে শূন্যতা দেখা দিয়েছে। কিন্তু তারপরও তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি। এরপর যিনি হামাসের নেতৃত্ব দেবেন, তিনি সিনওয়ারের থেকে অনেক বেশি নির্মম হতে পারেন।'

বাইডেনের বক্তব্য

গাড়ি বহরে সিনওয়ারের মরদেহ বহন করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবি: রয়টার্স
গাড়ি বহরে সিনওয়ারের মরদেহ বহন করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবি: রয়টার্স

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বৃহস্পতিবার তার বিলম্বিত জার্মানি সফরে বার্লিনে এসে পৌঁছেছেন। তিনি বলেছেন, 'সিনওয়ারের মৃত্যুর পর বন্দি হস্তান্তর ও যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা বেড়ে গেল।'

বাইডেন বলেছেন, 'এখন এগিয়ে যাওয়ার সময়। গাজায় যুদ্ধবিরতির দিকে এগিয়ে যেতে হবে। সেটা গোটা বিশ্বের জন্য ভালো হবে।'

বাইডেন উড়োজাহাজ থেকে নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলেছেন। হোয়াইট হাউস পরে জানিয়েছে, 'জিম্মিদের মুক্তি নিয়ে দুই নেতার কথা হয়েছে। যুদ্ধ বন্ধ করা এবং হামাস যাতে আর গাজা শাসন না করতে পারে, সে বিষয়ে কথা হয়েছে।'

ফরাসি প্রেসিডেন্ট মাখোঁ জানিয়েছেন, 'সিনওয়ারের মৃত্যুর পর গাজায় যুদ্ধ বন্ধের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।'

এপি, এএফপি, রয়টার্স, ডিপিএ

 

Comments

The Daily Star  | English
compensation for uprising martyrs families

Each martyr family to get Tk 30 lakh: Prof Yunus

Vows to rehabilitate them; govt to bear all expenses of uprising injured

7h ago