লেবাননে বিমান হামলা অব্যাহত, যুদ্ধবিরতিতে রাজি নয় ইসরায়েল

দক্ষিণ লেবাননের সিদ্দিকিন গ্রামে বিমানহামলা চালায় ইসরায়েল। ছবি: রয়টার্স (২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪)
দক্ষিণ লেবাননের সিদ্দিকিন গ্রামে বিমানহামলা চালায় ইসরায়েল। ছবি: রয়টার্স (২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪)

যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অন্যান্য মিত্র দেশের পক্ষ থেকে লেবানন সীমান্তে ২১ দিন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব এলেও এতে সম্মতি দেয়নি ইসরায়েল।

আজ শুক্রবার এই তথ্য জানিয়েছে জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে ও বার্তা সংস্থা এএফপি

বৃহস্পতিবার রাতেও ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান লেবাননে হামলা করেছে। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় লেবাননে মোট ৯২ জন নিহত হয়েছেন।

দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে শহর ও গ্রামে ৪০, পূর্বাঞ্চলীয় দুই প্রদেশে ৪৮ ও মাউন্ট লেবাননে চারজন নিহত হন। সব মিলিয়ে আহত হয়েছেন ১৫৩ জন।

সোমবার থেকে মোট নিহতের সংখ্যা ছয়শ ছাড়িয়েছে।

ইসরায়েলি বিমানহামলায় একই পরিবারের সব সদস্য নিহত হলে তাদের জানাজায় অংশ নেন প্রতিবেশীরা। ছবি: এএফপি
ইসরায়েলি বিমানহামলায় একই পরিবারের সব সদস্য নিহত হলে তাদের জানাজায় অংশ নেন প্রতিবেশীরা। ছবি: এএফপি

ইতোমধ্যে হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, বিমান হামলায় তাদের বিমান বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ সুরুর মারা গেছেন।

লেবানন সীমান্তে ইসরায়েলের স্থলবাহিনী মহড়া দিচ্ছে। ফলে বিমান হামলার পাশাপাশি সীমান্ত পেরিয়ে ইসরায়েলের স্থলবাহিনীও লেবাননের ভেতরে ঢুকে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সেক্ষেত্রে ইসরায়েলের বিমানবাহিনীও স্থলবাহিনীকে সাহায্য করবে এবং ইরান থেকে যাতে হিজবুল্লাহর কাছে অস্ত্র না আসে তা নিশ্চিত করবে। এমনটাই বলেছেন ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর কমান্ডার মেজর জেনারেল তোমের বার। 

ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ''আমরা স্থলবাহিনীকে সব ধরনের সাহায্য করব।'

নেতানিয়াহুর বক্তব্য

শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেবেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। তার আগে তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, 'ইসরায়েলের স্থল বাহিনী পূর্ণ শক্তি দিয়ে হিজবুল্লাহর ওপর আঘাত হানবে। আমাদের লক্ষ্যপূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা থামবে না। আমাদের যে সব মানুষ এই সংঘাতের ফলে নিজ নিজ বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র সরে যেতে বাধ্য হয়েছেন, তাদের নিরাপদে ফিরে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি যতদিন তৈরি না হয়, ততদিন আমরা থামব না।'

হিজবুল্লাহকে যুক্তরাষ্ট্র-সহ কয়েকটি দেশ সন্ত্রাসবাদী সংগঠন বলে ঘোষণা করেছে।

ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন, কোনো যুদ্ধবিরতি হবে না।

যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব

এর আগে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব দেশগুলো অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির চালুর প্রস্তাব দেয়। দেশগুলোর প্রস্তাব ছিল, আলোচনার মাধ্যমে উদ্ভূত পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য অবিলম্বে ২১ দিনের যুদ্ধবিরতি চালু হোক।

লেবাননের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদাল্লা হাবিব জাতিসংঘের কাছে আবেদন জানিয়ে বলেছেন, 'পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আগে তারা যেন অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির ব্যবস্থা করে। না হলে, এই সংকট ঘোরালো হয়ে উঠবে। তখন তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, লেবাননের সামনে এখন অস্তিত্ব সংকট দেখা দিয়েছে।

লেবাননের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদাল্লাহ হাবিব। ফাইল ছবি: রয়টার্স
লেবাননের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদাল্লাহ হাবিব। ফাইল ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের মুখপাত্র জন কারবি বলেছেন, 'যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে কী আছে, তা ইসরায়েল খুব ভালো করে জানে। প্রতিটি শব্দ তারা পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র চায়, তারা যেন এই প্রস্তাবকে গুরুত্ব দেয়।'

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাখোঁ বলেছেন, 'ইসরায়েল যে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব একেবারে খারিজ করে দিয়েছে, তা তিনি মনে করছেন না। এটা খারিজ করলে প্রধানমন্ত্রী ভুল করবেন। তখন আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধির দায় তাকে নিতে হবে।'

'ইসরায়েল যাতে যুদ্ধবিরতি মেনে নেয়, তার জন্য আমরা সবধরনের চেষ্টা করব। ফ্রান্স নিরাপত্তার পরিষদের বৈঠক ডেকে এই প্রস্তাব অনুমোদনের জন্যও প্রস্তুত', যোগ করেন তিনি।

জার্মানিও যুদ্ধবিরতি চায়

জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেয়ারবক জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বলেছেন, তিনি ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহ নেতাদের অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মেনে নিতে অনুরোধ জানাচ্ছেন।

তিনি বলেছেন, এই সংঘাত বাড়লে আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। তখন এই অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী শান্তিস্থাপন কঠিন হয়ে পড়বে।

হোয়াইট হাউসের বক্তব্য

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। ছবি: এএফপি
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। ছবি: এএফপি

হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা চলছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেন ইসরায়েলের স্ট্র্যাটেজিক অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রী রন ডেরমারের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

লন্ডনে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বলেছেন, 'মধ্যপ্রাচ্যে পুরোদস্তুর যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে। কিন্তু এখনো কূটনৈতিক পথে সমস্যা সমাধানের সম্ভাবনা আছে।'

 

Comments

The Daily Star  | English
Yunus on US aid suspension

Yunus raises concerns over US decision to freeze aid to key projects

Chief Adviser Professor Muhammad Yunus today raised concerns over the US decision to freeze aid to other key projects in Bangladesh, including the life-saving efforts of the icddr,b, one of the world's renowned health research institutes

2h ago