ট্রাম্পকে হত্যাচেষ্টা

১২ ঘণ্টা ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে ছিলেন বন্দুকধারী

নেভাদায় নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি (১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪)
নেভাদায় নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি (১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪)

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার পাম বিচে নিজস্ব ক্লাবে গলফ খেলতে যান সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সে সময় ঝোপের আড়ালে তাকে হত্যার উদ্দেশে অপেক্ষা করছিলেন এক বন্দুকধারী। জানা গেছে, ট্রাম্পের সম্ভাব্য আততায়ী ১২ ঘণ্টা সেখানে অপেক্ষা করছিলেন।

আজ মঙ্গলবার এই তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।

রোববার দুপুর নাগাদ ট্রাম্প ও তার বন্ধু আবাসন ব্যবসায়ী স্টিভ উইটকফ ওয়েস্ট পাম বিচে অবস্থিত ট্রাম্প ইন্টারন্যাশনাল গলফ ক্লাবে হাজির হন। দিনটি ছিল উষ্ণ ও মেঘাচ্ছন্ন।

দুপুর ১টা বেজে ৩১ মিনিটে (স্থানীয় সময়) হঠাত করেই তার দেহরক্ষী বাহিনীর এক সদস্য গলফ কোর্সের ছয় নং গর্তের কাছের ঝোপ থেকে একটি রাইফেলের নল বের হয়ে আসতে দেখেন।

ট্রাম্পকে দ্রুত সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। সোমবার তিনি জানান, খুব কাছে থেকে 'চারটি বা পাঁচটি' গুলির শব্দ শুনেছিলেন।

বন্দুকধারী রাউথকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাচ্ছেন পুলিশের সদস্যরা। ছবি: রয়টার্স
বন্দুকধারী রাউথকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাচ্ছেন পুলিশের সদস্যরা। ছবি: রয়টার্স

সিক্রেট সার্ভিসের অপর এক তৎপর সদস্য দ্রুত সন্দেহভাজন ব্যক্তির উদ্দেশ্যে গুলি ছোঁড়েন। তিনি ট্রাম্পের কাছ থেকে ৩০০ থেকে ৫০০ গজ দূরত্বে ছিলেন। ফেডারেল তদন্তকারীরা বলেন, বন্দুকধারীর দৃষ্টিসীমায় স্পষ্ট ছিলেন না ট্রাম্প।

ট্রাম্প মার-আ-লাগো'র বিলাসবহুল রিসোর্ট থেকে এক্সে লাইভ স্ট্রিম করে তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন।

ট্রাম্প বলেন, 'সিক্রেট সার্ভিস তাৎক্ষণিকভাবে বুঝতে পেরেছিল সেখানে একজন বন্দুকধারী রয়েছে। তারা আমাকে সুরক্ষা দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।'

'আমাকে দ্রুত গলফ কার্টে করে সেখানে থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। আমার সঙ্গে একজন এজেন্ট ছিলেন, যিনি দুর্দান্ত কাজ করেছেন', যোগ করেন ট্রাম্প।

তদন্তকারীরা বলেন, বন্দুকধারী কোনো গুলি ছোঁড়েননি। তিনি ঝোপ ও উঁচু পাম গাছের ভেতর লুকিয়ে ছিলেন।

শনিবার দিবাগত রাত (রোববার) ১টা বেজে ৫৯ মিনিট থেকে তিনি সেখানে অবস্থান করছিলেন বলে তদন্তকারীরা জানান। বন্দুকধারীর মোবাইল ফোনের রেকর্ড যাচাই করে এই তথ্য জানা গেছে।

সন্দেহভাজন ব্যক্তির কাছে দুইটি ডিজিটাল ক্যামেরা, একটি কালো রঙের প্লাস্টিক ব্যাগে খাবার এবং একটি এসকেএস স্টাইলের সেমি-অটোমেটিক রাইফেল ছিল। রাইফেলটি প্রায় ৪৪০ গজ দুর থেকে গুলি ছুঁড়তে সক্ষম এবং লক্ষ্য স্থির করার জন্য এতে লেন্স সংযুক্ত করা হয়েছিল। 

সোমবার সিক্রেট সার্ভিসের পরিচালক রনাল্ড রো সাফাই গেয়ে বলেছেন, 'সাবেক প্রেসিডেন্টের সেখানে যাওয়ারই কথা ছিল না। তাই এজেন্টদেরকে দ্রুত একটি জোড়াতালি দেওয়া নিরাপত্তা পরিকল্পনা তৈরি করতে হয়।'

সিক্রেট সার্ভিসের পরিচালক রনাল্ড রো। ছবি: রয়টার্স
সিক্রেট সার্ভিসের পরিচালক রনাল্ড রো। ছবি: রয়টার্স

ট্রাম্পকে হত্যার প্রচেষ্টা বানচাল হলেও পাম বিচে তার প্রতিবেশীদের মনে অনেক প্রশ্ন জেগেছে।

যেহেতু এটা ট্রাম্পের অনির্ধারিত সফর ছিল, কীভাবে এই বন্দুকধারী বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পারলেন? নাকি আন্দাজেই তিনি সেখানে অপেক্ষা করছিলেন?

কীভাবে একজন বন্দুকধারী ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় এরকম একটি সুরক্ষিত জায়গায় ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে থাকলেন?

অস্ত্র ও অন্যান্য উপকরণসহ ব্যাকপ্যাক ফেলে বন্দুকধারী ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। তিনি একটি কালো নিসান গাড়িতে করে পালিয়ে যান।

এক বেসামরিক নারী তার গাড়ির লাইসেন্স প্লেটের ছবি তুলে রাখেন। পরবর্তীতে এই সূত্র ধরেই তদন্তকারীরা রায়ান ওয়েসলি রাউথকে (৫৮) প্রায় ৪০ মিনিট পর গ্রেপ্তার করেন।

মাত্র দুই মাস আগেও পেনসিলভেনিয়ায় একটি নির্বাচনী সমাবেশে ট্রাম্পকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। সে যাত্রায় গুলি ট্রাম্পের ডান কানে সামান্য আঘাত করে।

আগামী ৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্রেটিক দলের কমলা হ্যারিস, যিনি বর্তমানে দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট।

ট্রাম্প তাকে হত্যা প্রচেষ্টার জন্য পরোক্ষভাবে হোয়াইট হাউসকে দায় দেন।

পাম ইন্টারন্যাশনাল গলফ ক্লাবে এখনো তদন্ত চলছে। ছবি: রয়টার্স
পাম ইন্টারন্যাশনাল গলফ ক্লাবে এখনো তদন্ত চলছে। ছবি: রয়টার্স

তিনি সোমবার রাতে জানান, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে ফোন কলে সিক্রেট সার্ভিসের সুরক্ষা বাড়ানো নিয়ে তার কথা হয়েছে।

সোমবার বাইডেন কংগ্রেসকে আহ্বান জানিয়েছেন আগামী দিনগুলোতে সিক্রেট সার্ভিসের অর্থায়ন বাড়াতে। তিনি বলেন, সিক্রেট সার্ভিসের 'আরও সাহায্য দরকার'।

সোমবার বিকেলে ভক্ত-সমর্থকদের কাছে পাঠানো ইমেইলে ট্রাম্প বলেন, 'আমার জীবনের ওপর আবারও আঘাত এসেছে। কিন্তু এতে আমার অঙ্গীকার আরও শক্তিশালী হয়েছে।'

 

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

4h ago