রোববার তুরস্কের স্থানীয় নির্বাচন, যা জানা প্রয়োজন

ইস্তাম্বুলের মেয়র নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থী ও নেতাদের পোস্টারে ছেয়ে গেছে শহরটি। ছবি:
ইস্তাম্বুলের মেয়র নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থী ও নেতাদের পোস্টারে ছেয়ে গেছে শহরটি। ছবি:

তুরস্কের বাসিন্দারা রোববার স্থানীয় নির্বাচনে ভোট দেবেন। গত বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের পরবর্তী লক্ষ্য দেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র ইস্তাম্বুলের নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে নেওয়া।

আজ শুক্রবার এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি।

এমন সময় স্থানীয় নির্বাচন হতে যাচ্ছে, যখন দেশটিতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৬৭ দশমিক এক শতাংশে পৌঁছেছে এবং ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার মান একেবারে তলানিতে ঠেকেছে।

এএফপির প্রতিবেদনে এই নির্বাচনের পাঁচ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।

ইস্তাম্বুল কেন গুরুত্বপূর্ণ

১৯৯৪ সালে ইস্তাম্বুলের মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন এরদোয়ান। সে সময় থেকে ২০১৯ পর্যন্ত তিনি ও তার মিত্ররা ইস্তাম্বুল শাসন করে এসেছে। তবে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বীতার পর সে বছর রিপাবলিকান পিপলস পার্টির (সিএইচপি) প্রার্থী একরাম ইমামোগলু মেয়র নির্বাচিত হলে এই গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলের প্রশাসনিক ক্ষমতা এরদোয়ানের হাত থেকে বের হয়ে যায়।

বিশ্লেষকদের মতে, ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষের ইস্তাম্বুলের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়ার আশা ছাড়েননি এরদোয়ান। শহরটি রক্ষণশীল মুসলিম ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। 

এরদোয়ান ও ইস্তাম্বুলের মেয়র প্রার্থী মুরাত কুরুম। ছবি: রয়টার্স
এরদোয়ান ও ইস্তাম্বুলের মেয়র প্রার্থী মুরাত কুরুম। ছবি: রয়টার্স

অপরদিকে, এরদোয়ানের জন্যেও ইস্তাম্বুল একটি মান সম্মানের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক বিশ্লেষক বলেন, ইস্তাম্বুল তুরস্কের রাজনীতির সবচেয়ে বড় পুরষ্কার।

এরদোয়ান নিজেও একবার বলেন, 'যে ইস্তাম্বুলে জিতে, সে তুরস্ক জিতে নেয়।'

এবারের ভোটে এরদোয়ানের দলের পক্ষে সাবেক পরিবেশমন্ত্রী মুরাত কুরুম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। ২০২৮ সালে এরদোয়ানের প্রেসিডেন্ট পদের মেয়াদ শেষে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ইস্তাম্বুলের বর্তমান মেয়র ইমামোগলু।

তার গ্রহণযোগ্যতা ধরে রাখতে মেয়রের পদে পুনর্নিবাচিত হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বলছেন বিশ্লেষকরা।

এই নির্বাচন হতে পারে এরদোয়ানের জন্য আরেকটি পরাজয়

সিএইচপি দলের প্রার্থীরা জনমত জরিপে অল্প ব্যবধানে এরদোয়ানের দলের চেয়ে এগিয়ে আছে। বিশেষত, রাজধানী আঙ্কারা, ইস্তাম্বুল ও বন্দর নগরী ইজমিরে।

ওয়াশিংটন ইন্সটিটিউটের তুরস্ক বিষয়ক প্রকল্পের পরিচালক সোনার কাপাগতায় বলেন, এরদোয়ানের প্রার্থীরা তুরস্কের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে জিততে না পারলে 'এরদোয়ানের রাজনৈতিক দৈন্যতা' প্রকট হবে।

ইস্তাম্বুলের মেয়র একরাম ইমামোগলু। ছবি: রয়টার্স
ইস্তাম্বুলের মেয়র একরাম ইমামোগলু। ছবি: রয়টার্স

বিরোধীদল জয়ী হলে ইমামোগলু একজন গ্রহণযোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন।

এটাই হতে পারে এরদোয়ানের শেষ নির্বাচন

এ মাসের শুরুতে এরদোয়ান জানান, এই স্থানীয় নির্বাচনই তার শেষ নির্বাচন হতে পারে। যার ফলে, তার দুই দশকের শাসনামলের অবসান হতে পারে বলে ভাবছেন বিশ্লেষকরা।

২০০৩ সালে সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন এরদোয়ান। এর পর থেকে টানা ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তুরস্কের ক্ষমতার শীর্ষে আছেন এই শাসক।

তবে কোনো কোনো বিশ্লেষক এরদোয়ানের এই বিদায়ী বার্তাকে রাজনৈতিক ছল হিসেবে অভিহিত করেছেন। তাদের মতে, এরদোয়ান এই বাণীর মাধ্যমে ভোটারদের সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা করছেন।

কুর্দিদের ভোট গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে

তুরস্কের কুর্দিপন্থী দল ডিইএম পার্টি ৬০০ সদস্যের পার্লামেন্টে তৃতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল। ২০১৯ সালের মেয়র নির্বাচনে দলটি ইমামোগলুকে নীরব সমর্থন দেয়। সেবার কোনো প্রার্থী না দিলেও এবার দলের পক্ষ থেকে দুইজন প্রার্থী ইস্তাম্বুলের মেয়র পদের জন্য লড়বেন।

ডিইএম দলের রাজনীতিবিদরা। ছবি: রয়টার্স
ডিইএম দলের রাজনীতিবিদরা। ছবি: রয়টার্স

কুর্দিরা ইস্তাম্বুলের ভোটারদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ। ২০ মার্চ স্পেকট্রাম হাউস পরিচালিত এক মতামত জরিপে জানা গেছে, ডিইএম দলের সমর্থকদের প্রায় অর্ধেক ইমামোগলুকে সমর্থন জানাবেন।

ভোটারদের নিস্পৃহ মনোভাব

রোববার তুরস্কের ভোটাররা মেয়রের পাশাপাশি প্রাদেশিক কাউন্সিল সদস্য ও অন্যান্য স্থানীয় কর্মকর্তাদেরকেও ভোটের মাধ্যমে বেছে নেবেন। ইস্তাম্বুলের ব্যালট পেপারে ৪৯ জন প্রার্থীর নাম রয়েছে এবং এটি প্রায় ৯৭ সেন্টিমিটার লম্বা।

কিন্তু এতজন প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও ভোটারদের নিস্পৃহ মনোভাবে পরিবর্তন আসেনি।

ইস্তাম্বুলের একটি বাজার। ফাইল ছবি: রয়টার্স
ইস্তাম্বুলের একটি বাজার। ফাইল ছবি: রয়টার্স

গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৮৮ দশমিক ৯ শতাংশ। কিন্তু বিরোধী পক্ষের ভোটাররা অনুভব করেন, দেশের রাজনীতিকে প্রভাবিত করা ও সরকারে পরিবর্তন আনার সক্ষমতায় ঘাটতি রয়েছে।

এমনকী, সরকারী দলের সমর্থকরাও রাজনীতিবিদদের ওপর ভরসা রাখেন না। তারা মনে করেন, এই রাজনীতিবিদদের দেশের জনমানুষের জীবনের মান উন্নয়ন করার সক্ষমতা নেই।

 

Comments

The Daily Star  | English

What if the US election ends in a Trump-Harris tie?

While not highly likely, such an outcome remains possible, tormenting Americans already perched painfully on the edge of their seats ahead of the November 5 election

3h ago