শান্তিতে নোবেল পেলেন ইরানি মানবাধিকারকর্মী নার্গিস মোহাম্মদী

নোবেল শান্তি পুরস্কার ২০২৩

শান্তিতে ২০২৩ সালে নোবেল পুরস্কার পেলেন ইরানের কারাবন্দি মানবাধিকারকর্মী নার্গিস মোহাম্মদী।

আজ শুক্রবার অসলোতে এক অনুষ্ঠানে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করে নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি।

ইরানে নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে এবং সবার জন্য মানবাধিকার ও স্বাধীনতার লড়াইয়ে অবদান রাখায় নার্গিস মোহাম্মদীকে চলতি বছর শান্তিতে নোবেল দেওয়া হলো।

নার্গিস মোহাম্মদীর জন্ম ১৯৭২ সালের ২১ এপ্রিল ইরানের জানজান শহরে।

পুরস্কার ঘোষণার সময় নোবেল কমিটি জানিয়েছে, সাহসী সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে নার্গিস মোহাম্মদীকে অভাবনীয় মূল্য দিতে হয়েছে। ইরান সরকার তাকে ১৩ বার গ্রেপ্তার ও পাঁচবার দোষী সাব্যস্ত করেছে এবং সব মিলিয়ে ৩১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে। এ ছাড়াও, তাকে ১৫৪ বার বেত্রাঘাতের দণ্ডও দেওয়া হয়েছে এবং তিনি এখনো কারাবন্দি আছেন।

২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনি ইরানের নৈতিকতা পুলিশের হেফাজতে মারা যান। তার মৃত্যুতে ১৯৭৯ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা বর্তমান ইরানি সরকারে বিরুদ্ধে দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে বৃহৎ গণআন্দোলনের সূত্রপাত হয়। এই আন্দোলনের শ্লোগান ছিল 'নারী-জীবন-স্বাধীনতা।' নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ইরানের হাজারো নাগরিক শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে পথে নেমে আসেন। শাসকগোষ্ঠী দমন-পীড়নের মাধ্যমে এই বিক্ষোভকে ভেস্তে দেওয়ার চেষ্টা চালায়। এতে ৫০০ জনেরও বেশি বিক্ষোভকারী নিহত হন এবং আহত হন আরও হাজারো মানুষ। আহতদের অনেকেই পুলিশের ছোঁড়া রাবার বুলেটের আঘাতে অন্ধ হয়ে যান। অন্তত ২০ হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়।

বিক্ষোভকারীদের মূলমন্ত্র—'নারী-জীবন-স্বাধীনতা'—যথার্থভাবে নার্গিস মোহাম্মদীর সারা জীবনের কাজ ও অঙ্গীকারকেই প্রতিনিধিত্ব করে।

২০২২ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান বেলারুশের মানবাধিকারকর্মী অ্যালেস বিয়েলাৎস্কি এবং রাশিয়ান মানবাধিকার সংস্থা মেমোরিয়াল ও ইউক্রেনীয় মানবাধিকার সংস্থা সেন্টার ফর সিভিল লিবার্টিজ।

গণতন্ত্র ও দীর্ঘস্থায়ী শান্তির পূর্বশর্ত হিসেবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় কাজ করার জন্য ২০২১ সালে শান্তিতে নোবেল পান ফিলিপাইনের সাংবাদিক মারিয়া রেসা ও রাশিয়ার সাংবাদিক দিমিত্রি মুরাতভ।

এর আগে গতকাল সাহিত্যে চলতি বছরের নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন নরওয়ের লেখক ইয়ন ফসে। নোবেল পুরস্কারের জন্য ইয়ন ফসের নাম ঘোষণার পর সুইডিশ একাডেমি তার সম্পর্কে বলেছে, যেসব কথা অনুচ্চারিত থেকে যায় সেগুলো তার লেখনিতে উঠে এসেছে।

৪ অক্টোবর রসায়নশাস্ত্রে ২০২৩ সালে নোবেল পুরস্কার পান ফ্রান্সের বিজ্ঞানী মুঙ্গি বাওয়েন্ডি, মার্কিন বিজ্ঞানী লুই ব্রুস ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের বিজ্ঞানী আলেক্সি ইয়াকিমভ। 'কোয়ান্টাম ডট আবিষ্কার ও সংশ্লেষণ'র জন্য এই তিন বিজ্ঞানীকে চলতি বছর রসায়নে নোবেল দেওয়া হয়।

৩ অক্টোবর পদার্থবিদ্যায় চলতি বছরের নোবেল পান যুক্তরাষ্ট্র, হাঙ্গেরি ও ফ্রান্সের তিন বিজ্ঞানী। পদার্থের ইলেকট্রন ডাইনামিকস গবেষণায় আলোর অ্যাটোসেকেন্ড স্পন্দন তৈরির পরীক্ষণলব্ধ প্রক্রিয়া নিয়ে গবেষণা করায় পিয়ের আগোস্তিনি (যুক্তরাষ্ট্র), ফেরেন্স ক্রাউজ (হাঙ্গেরি) ও অ্যান লিয়েরকে (ফ্রান্স) এই নোবেল দেওয়া হয়।

২ অক্টোবর চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেলজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। চলতি বছর চিকিৎসাবিজ্ঞানে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার পান কাতালিন কারিকো ও ড্রু ওয়েজমান। নিউক্লিওসাইড বেস পরিবর্তনের বিষয়ে তাদের আবিষ্কারের জন্য এ বছর তারা নোবেল পুরস্কার পান, যেটি কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে কার্যকর ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে সহায়তা করেছে।

কাতালিন কারিকোর জন্ম ১৯৫৫ সালে হাঙ্গেরির সোলনক শহরে। শেগেড ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি করার পর ১৯৮০ এর দশকে পরিবারসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান তিনি। ড্রু ওয়েজম্যানের জন্ম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৫৯ সালে। ১৯৮৭ তিনি বোস্টন ইউনিভার্সিটি থেকে ইমিউনোলজিতে পিএইচডি করেন।

রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস ১৯০১ সাল থেকে প্রতিবছর এই পুরস্কার প্রদান করে। প্রত্যেক ক্ষেত্রে পুরস্কার বিজয়ীরা একটি পদক এবং ১১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রাউন পান। অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া শুরু হয় ১৯৬৯ সাল থেকে।

Comments