শিশুর হৃদরোগ চিকিৎসায় দেশের প্রধান হাসপাতালে ব্যবহৃত হচ্ছে অবৈধ ডিভাইস
দেশে হৃদরোগ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হচ্ছে অনুমোদনহীন ডিভাইস। অনুমোদন নেই এমন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এসব ডিভাইস কিনে নিচ্ছে রাজধানীর শীর্ষস্থানীয় সরকারি, বেসরকারি হাসপাতাল।
যথাযথ প্রক্রিয়ায় আমদানি না করে চোরাই পথে আনা এসব ডিভাইস। যাচাই-বাছাই না করেই ব্যবহার করা হচ্ছে দেশের শীর্ষ কয়েকটি হাসপাতালে। এতে হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীর জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এ সংক্রান্ত নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সরকার পরিচালিত হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতাল (এনআইসিভিডি), ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনসহ বেসরকারি হাসপাতাল ল্যাবএইডে গত প্রায় দেড় বছর ধরে এসব অননুমোদিত ডিভাইস ব্যবহার করা হচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে জন্মগতভাবে হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুদের কার্ডিয়াক ইমপ্লান্টে অবৈধ ডিভাইস ব্যবহার করা হচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্র এবং এ ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিশুদের জন্য সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে এই কার্ডিয়াক মেডিকেল ডিভাইস অবৈধভাবে সরবরাহ করা হচ্ছে।
নথি থেকে জানা যায়, এসব মেডিকেল ডিভাইসের বেচাকেনা হয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের (ডিজিডিএ) প্রয়োজনীয় অনুমতি না নিয়েই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন অবৈধ ডিভাইস ব্যবহার রোগীর জীবনকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে এবং দেশে হৃদরোগের চিকিৎসার কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়াতে পারে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. চৌধুরী মেসকাত দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অননুমোদিত কার্ডিয়াক ডিভাইসের মান খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। এগুলো রোগীদের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে।'
হার্টনে অভিযান
চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হার্টন বাংলাদেশের মিরপুরের অফিসে গত ৩১ মার্চ অভিযান চালায় ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। অভিযানে শিশুদের জন্মগত হৃদযন্ত্রের ত্রুটির চিকিৎসায় ব্যবহৃত ডিভাইস জব্দ করা হয়। জব্দকৃত কার্ডিয়াক ডিভাইসের মূল্য প্রায় ২৭ লাখ টাকা।
শিশু হৃদরোগের চিকিৎসায় ইন্টারভেনশন প্রক্রিয়ায় সার্জারি ছাড়াই ডিভাইসের মাধ্যমে হার্টের ছিদ্র বন্ধ করে দেওয়া হয়। এসব ডিভাইস দেশের বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়।
এসব মেডিকেল ডিভাইসের নিবন্ধন নির্দেশিকা অনুযায়ী, ডিভাইসগুলো বাজারজাতের জন্য ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে সর্বোচ্চ বিক্রয় মূল্যের সনদ (এমআরপি) নিতে হবে।
হার্টন বাংলাদেশের এ সনদ ছিল না। প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ বলছে, চীনা সংস্থা লাইফটেক সায়েন্টিফিক উত্পাদিত ডিভাইসগুলো অন্য একটি দেশি প্রতিষ্ঠান রহমান মেডিকেল সার্ভিসেস আমদানি করেছে।
তবে রহমান মেডিকেল সার্ভিসেস ২০২০ সালের পর থেকে লাইফটেকের কোনো পণ্য আমদানি করেনি এবং লাইফটেকের সঙ্গে তাদের আমদানি চুক্তিও বাতিল হয়ে গেছে বলে একাধিক সূত্র ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেছে।
ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অভিযানের পর জানা গেছে, বেশ কয়েকটি দেশি কোম্পানি, মার্কেটিংয়ে দক্ষ কর্মী, এমনকি কয়েকজন চিকিৎসকও রাজধানীর বেশ কয়েকটি হাসপাতালে এসব ডিভাইস বিক্রির সঙ্গে জড়িত।
হৃদরোগ হাসপাতাল ও হার্ট ফাউন্ডেশনের সূত্র জানায়, ভারতীয় নাগরিক উশ্রী ঘোষ এই ডিভাইসগুলো দেশে নিয়ে আসেন এবং হার্টন বাংলাদেশের মাধ্যমে বাজারজাত করেন।
এ বিষয়ে জানতে ডেইলি স্টারের পক্ষ থেকে উশ্রী ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
ডেইলি স্টারের কাছে থাকা নথিতে দেখা যায়, হৃদরোগ ইনস্টিটিউট এবং হার্ট ফাউন্ডেশন দুটি প্রতিষ্ঠানই একাধিকবার প্রয়োজনীয় অনুমোদন ছাড়াই এসব ডিভাইস কিনেছে।
বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ১ হাজার ২০০ শিশুর কার্ডিয়াক ইমপ্লান্টের প্রয়োজন হয়। শুধু চলতি বছরেই মোট ইমপ্লান্টের ৩০ শতাংশ ডিভাইস হার্টন বাংলাদেশ সরবরাহ করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে। এসব ডিভাইসের মূল্যমান প্রায় ৩ কোটি টাকা।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হার্টনের অবৈধভাবে আমদানি করা ১২৭টি লাইফটেকের ডিভাইস ঢাকার ৩ শীর্ষ হাসপাতালে ইমপ্লান্ট করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০২টি হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে, ১২টি হার্ট ফাউন্ডেশনে এবং ১৩টি ল্যাবএইডে।
হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ২৩ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসায় ৫০টি লাইফটেক কার্ডিয়াক ডিভাইস ব্যবহার করা হয়।
নথি অনুযায়ী, ৭ জুলাই ল্যাবএইড হাসপাতালের ক্যাথ ল্যাবে ১৩ শিশুর হৃদরোগের চিকিৎসায় লাইফটেকের ডিভাইস ব্যবহার করা হয়।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) অধ্যাপক নুরুন নাহার ফাতেমা এসব শিশুর কার্ডিয়াক ইমপ্লান্ট করেন। সম্প্রতি নিজের লিংকডইন প্রোফাইলে এ ডিভাইসের বিশদও জানিয়েছেন তিনি।
যোগাযোগ করা হলে অধ্যাপক নুরুন নাহার দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি তার আগের সরবরাহকারী রহমান মেডিকেল সার্ভিসেস থেকে এসব ডিভাইসগুলো নিয়েছেন।
অধ্যাপক নুরুন নাহার আরও বলেন, 'আমার প্রয়োজন হলে তারা আমাকে ইমপ্লান্ট ডিভাইস দেয়। কিন্তু এগুলো ব্যবহারের আইনি বিষয়ে সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই।'
রহমান মেডিকেল সার্ভিসের মালিক মিজানুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার প্রতিষ্ঠান এখন লাইফটেকের পণ্য সরবরাহ করে না।'
কখনো হয়নি যে কর্মশালা
হৃদরোগ হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত ১৬ জানুয়ারি উশ্রী ঘোষ অননুমোদিতভাবে লাইফটেক সায়েন্টিফিকের এসব ডিভাইস নিয়ে ঢাকায় আসেন। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টমস কর্মকর্তারা এসব ডিভাইস জব্দ করে এবং সেগুলো নেওয়ার জন্য তাকে শুল্ক পরিশোধ করতে বলে।
একইদিনে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আবদুল্লাহ শাহরিয়ার শাহজালালের কাস্টমস কমিশনারকে চিঠি দিয়ে ডিভাইসগুলো শুল্কমুক্তভাবে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন।
চিঠিতে তিনি বলেছিলেন, পরের দিন অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া 'প্রযুক্তি স্থানান্তর কর্মশালা'র জন্য এসব ডিভাইস আনা হয়েছে।
পরে ডিভাইসগুলো ছেড়ে দেওয়া হয় এবং ১৭ জানুয়ারি ১০ জন শিশুর কার্ডিয়াক ইমপ্লান্টে সেগুলো ব্যবহার করা হয়।
সূত্র জানায়, ওইদিন কোনো আন্তর্জাতিক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়নি। বরং ডিভাইসগুলো ব্যবহার করে শিশুদের কার্ডিয়াক 'ইন্টারভেনশন' করা হয়। এ সময় উশ্রী ঘোষও উপস্থিত ছিলেন।
অধ্যাপক শাহরিয়ার ল্যাবএইড ডায়াগনস্টিকসের প্যাডে ওই চিঠিটি লিখেছিলেন। তিনি ওই হাসপাতালের একজন পরামর্শক। দ্য ডেইলি স্টারের কাছে এ চিঠির একটি কপি রয়েছে।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ভারতের শিশু কার্ডিওলজিস্ট ডা. নীরজ অবস্থি ওই ওয়ার্কশপ পরিচালনা করবেন।
যোগাযোগ করা হলে ডা. অবস্থি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।
জানতে চাইলে অধ্যাপক শাহরিয়ার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হার্টনের যে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদন নেই, এটা আমার জানা নেই। আমরা গত দেড় বছর ধরে লাইফটেকের ডিভাইস ব্যবহার করছি। অনুমোদনের বিষয়টি জানার পর থেকে আমরা তাদের পণ্য ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছি।'
কেন কাস্টমসকে এমন চিঠি লিখেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'হার্টনের কর্মকর্তারা আমার কাছে এসে বলেছিলেন যে হৃদরোগ হাসপাতালের পরিচালক তাদের আমার কাছে রেফার করেছেন।'
পরিচালক অধ্যাপক মীর জামাল উদ্দিন তখন ছিলেন না বলে দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে অধ্যাপক মীর জামাল উদ্দিন ডেইলি স্টারকে জানান, কাস্টমসকে দেওয়া ওই চিঠির বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
তিনি বলেন, '১৭ জানুয়ারির কোনো "আন্তর্জাতিক কর্মশালা" সম্পর্কে আমার জানা নেই।'
সরবরাহকারীদের নথিপত্র যাচাইয়ের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, 'রোগীদের জন্য বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত ডিভাইস কেনার ক্ষেত্রে পরিচালকের অফিসের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।'
তিনি বলেন, 'আমরা শুধু হাসপাতালের জন্য ডিভাইস সংগ্রহ করি যেগুলো দরিদ্র রোগীদের জন্য বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়। এসবের টাকা সরকার বা দাতাদের কাছ থেকে আসে। রোগীদের কাছে বিভিন্ন কোম্পানিকে ডিভাইস বিক্রির অনুমতি দেয় হাসপাতালের বিভিন্ন ইউনিটের প্রধানরা।'
ঘুরেফিরে একই চক্র
হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে চলতি বছরের মার্চের শুরুতে কাতার রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির অর্থায়নে সপ্তাহব্যাপী চ্যারিটি ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত হয়। এ ক্যাম্পেইনে হৃদরোগে আক্রান্ত অন্তত ৪৭ জন শিশুর চিকিৎসায় হার্টনের সরবরাহ করা লাইফটেকের ডিভাইস ব্যবহার করা হয়।
এসব ডিভাইস ব্যবহারের ক্ষেত্রে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের সবগুলো চালানের কপি ডেইলি স্টারের কাছে আছে।
মে মাসে অধ্যাপক আবদুল্লাহ শাহরিয়ারের সই করা ৪৭টি চালানের বিপরীতে প্রায় ৫০ লাখ টাকা পায় হার্টন বাংলাদেশ।
এছাড়া, একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে দেশের শীর্ষ কার্ডিয়াক সার্জনদের কথোপকথনের একটি স্ক্রিনশটও ডেইলি স্টারের কাছে আছে যেখানে লাইফটেকের ডিভাইস নিয়ে আলোচনা হয়।
কথোপকথনে দেখা যায়, হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ আতাউল হক এই ডিভাইসগুলোর পক্ষ নিয়ে কথা বলেন।
ওই গ্রুপে তিনি বলেন, 'বাংলাদেশে আমরা ওষুধ প্রশাসনের নিবন্ধনকৃত অ্যামপ্ল্যাটজার এবং লাইফটেকের ডিভাইস ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। লাইফটেকের ডিভাইস কিছুটা সস্তা। যেহেতু আমাদের পরীক্ষার সুযোগ নেই, তাই এগুলোর মান বিচার করতে পারি না। তবে আমরা উভয় ব্র্যান্ডের ডিভাইস ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।'
যোগাযোগ করা হলে পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজি বিভাগের 'সবুজ ইউনিটের' প্রধান ডা. আতাউল হক ওই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে তার উপস্থিতির বিষয়টি অস্বীকার করেন।
তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে আলাপ করেছেন আরেক ডা. আতাউল হক।'
ওই বিভাগের আরেক ডা. আতাউল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি কাতার রেড ক্রিসেন্টের ক্যাম্পেইন কমিটির সদস্য নই। তাই ওই ঘটনায় আমার তার জড়িত থাকার প্রশ্নই আসে না।'
তিনি নিজেকে বিভাগের 'নীল ইউনিটের' প্রধান দাবি করেন, 'সবুজ ইউনিটের' নয়।
'সবুজ ও নীল ইউনিট' হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের চিকিত্সক এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে কাজ বণ্টনের সুবিধার্থে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তৈরি করা দুটি গ্রুপ।
এনআইসিভিডি সূত্র জানায়, 'সবুজ ইউনিটের' ডা. আতাউল হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের কথোপকথনে অংশ নেন।
হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে একাধিকবার অননুমোদিত লাইফটেকের ডিভাইসের ব্যবহার সম্পর্কে জানতে চাইলে পরিচালক অধ্যাপক মীর জামাল উদ্দিন বলেন, 'বিষয়টি আমরা জেনেছি। আমি ইতোমধ্যেই সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের নির্দেশনা দিয়েছি যে যেসব পণ্যের ওষুধ প্রশাসনের যথাযথ অনুমোদন নেই, এমন পণ্য যেন ব্যবহারের অনুমতি যেন না দেওয়া হয়।'
একই ঘটনা ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে
২০২২ সালে সারা বছরের জন্য হার্টনের কাছ থেকে কার্ডিয়াক ডিভাইস নিয়েছে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন হার্ট ফাউন্ডেশনের জনসংযোগ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক শাহাজাদী সুলতানা ডলি। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে অবশ্য বলেছেন, 'হার্টন পণ্য নিবন্ধন সনদসহ প্রাসঙ্গিক নথিপত্র জমা দিয়েছে, কিন্তু ওষুধ প্রশাসনের মূল্যের সনদ দিতে পারেনি। তাই, আমরা এ বছরের জানুয়ারি থেকে তাদের পণ্য ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছি।'
কেন হার্টনের পণ্য ১ বছর ধরে ব্যবহার করা হলো, জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'ভারতে লাইফটেক সায়েন্টিফিকের ম্যানেজার উশ্রী ঘোষ আমাদের সঙ্গে হার্টন বাংলাদেশের পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন।'
তিনি আরও বলেন, 'উশ্রী ঘোষ গত ১৫ বছর ধরে হার্ট ফাউন্ডেশনে বিভিন্ন বিদেশি কার্ডিয়াক ডিভাইস নির্মাতাদের প্রতিনিধিত্ব করছেন। সম্প্রতি তিনি লাইফটেকের পণ্য নিয়ে এসেছেন। এগুলো নিয়ে তিনি বেশ কয়েকটি সেমিনারও স্পন্সর করেছেন। আমাদের এখানে তিনি বিনামূল্যে অনেক ডিভাইস সরবরাহ করেছেন।'
তবে যোগাযোগ করা হলে হার্ট ফাউন্ডেশনের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ইউনুসুর রহমান তার হাসপাতালে অননুমোদিত পণ্য ব্যবহারের কথা অস্বীকার করেন।
চক্রের আরেক দিক
হার্টন বাংলাদেশের স্বত্বাধিকারী এনামুল হক প্রিন্স ডেইলি স্টারকে বলেন, তারা বিভিন্ন হাসপাতালে যেসব ডিভাইস সরবরাহ করেছে, তার সবই বাংলাদেশে লাইফটেক সায়েন্টিফিকের সাবেক পরিবেশক রহমান মেডিকেল সার্ভিসেস লিমিটেড বৈধভাবে আমদানি করেছে।
দুই প্রতিষ্ঠানের চুক্তিপত্র অনুযায়ী, ২০২০ সালে হার্টন বাংলাদেশ রহমান মেডিকেল সার্ভিসেস থেকে ৯৩টি ডিভাইস নিয়েছে। এ চুক্তিপত্রের একটি কপি ডেইলি স্টারের কাছে আছে।
তবে এমন নথিও ডেইলি স্টারের কাছে আছে যেখানে দেখা যায় হার্টন অনেকগুলো ডিভাইস রহমান মেডিকেল ছাড়া অন্য কোথাও থেকে সংগ্রহ করে সরবরাহ করেছে।
জানতে চাইলে রহমান মেডিক্যাল সার্ভিসের মালিক মিজানুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'লাইফটেক ২০২০ সালে আমাদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেছে। এরপর থেকে তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো ব্যবসা নেই।'
তিনি হার্টনের কাছে অন্য কোনো ডিভাইস বিক্রি বা সরবরাহের কথাও অস্বীকার করেন।
ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের (ডিজিডিএ) একটি নিবন্ধন সনদেও দেখা যায় বর্তমানে রহমানের সঙ্গে লাইফটেকের মধ্যে চুক্তির সময়সীমা শেষ। এতে আরও দেখা যায়, লাইফটেকের পণ্য সরবরাহের জন্য নিবন্ধন পেয়েছে
বাংলাদেশ হেলথকেয়ার অ্যান্ড ফার্মা সলিউশন নামে অপর আরেকটি প্রতিষ্ঠান।
তবে ডিজিডিএ সূত্র জানায়, বাংলাদেশ হেলথকেয়ার অ্যান্ড ফার্মা এখনো লাইফটেকের পণ্য বাজারজাত শুরু করেনি।
সূত্র মতে, ২০২০ সালের পর থেকে বাংলাদেশ হেলথকেয়ার এবং ফার্মা সলিউশন ছাড়া অন্য কোনো কোম্পানির মাধ্যমে লাইফটেকের পণ্য বিক্রয় ও বিতরণ অবৈধ।
অর্থাৎ, হার্টন বাংলাদেশের একদিকে কার্ডিয়াক মেডিকেল ডিভাইস বিক্রির মূল্য সনদ নেই। অন্যদিকে কোনো নিবন্ধিত পরিবেশকের কাছ থেকে এ ধরনের ডিভাইস পেতে প্রতিষ্ঠানটির আইনগত কোনো চুক্তিও নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিজিডিএ মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কোনো কোম্পানি আমাদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ বিক্রয়মূল্যের সনদ না নিয়ে পণ্য সরবরাহ করতে পারবে না। আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি।'
Comments