চমেকে কম খরচে রেডিওলজিক্যাল পরীক্ষা, জানেন না রোগীরা
আজ ৮ নভেম্বর বিশ্ব রেডিওলজি দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) দিবসটি পালিত হয়। কিন্তু, অনেক রোগী জানেন না এই হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগে কম খরচে রেডিওলজি পরীক্ষা করানো হয়। ফলে, রোগীরা হাসপাতালের চারপাশে ছড়িয়ে থাকা প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যান এবং বেশি খরচে রেডিওলজিক্যাল পরীক্ষা করান।
চমেক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চমেকে খুব কম খরচে সব ধরনের প্যাথলজিক্যাল এবং রেডিওলজিক্যাল পরীক্ষা করানো হয় তা রোগীদের জানানো ইতোমধ্যেই কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
চমেকের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, 'আমরা হাসপাতালের কিছু এলাকায় ৪টি স্টিল-ব্যানারের ব্যবস্থা করেছি। যেখানে বড় বড় করে লেখা আছে, চমেকে সব প্যাথলজিক্যাল এবং রেডিওলজিক্যাল পরীক্ষা করানো হয়। ব্যানারে পরীক্ষার নাম ও ফি উল্লেখ করা হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'হাসপাতালের দালালদের ঠেকাতেও আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। হাসপাতালের দেয়ালে স্টিকার লাগানো হয়েছে। এসব স্টিকারে সতর্ক করা হয়েছে, রোগীরা যেন অপরিচিত লোক বা দালালের খপ্পরে না পড়ে। আমরা রোগীদের পরামর্শ দিয়েছি, কেউ যদি তাদের প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেতে প্ররোচিত করার চেষ্টা করে, তাহলে তারা যেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পে জানায়।'
তবে অনেকের অভিযোগ, অনেক রোগী পড়ালেখা জানেন না। তাই সতর্কবার্তা পড়তে পারেন না। তাদের দাবি, রোগীদের সচেতন করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে রিসিপশন থেকে হ্যান্ডস্পিকারে প্রচারণা চালাতে হবে।
গত রোববার দাঁতের ব্যথা থাকায় মেয়েকে নিয়ে চমেকের ডেন্টিস্ট্রি বিভাগে আসেন রহিমা বেগম। তখন সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক দাঁতের এক্সরে করার পরামর্শ দেন। তিনি বুঝতে পারছিলেন কোথায় এক্সরে করাবেন। এ সময় একজন অপরিচিত ব্যক্তি হাসপাতালের পাশের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেতে বলেন। পরে রহিমা বেগম মেয়েকে সেখান থেকে এক্সরে করান। এরপর তিনি জানতে পারেন চমেকের রেডিওলজি বিভাগে কম খরচে এক্সরে করানো যায়।
রহিম বেগম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার ধারণা ছিল না, চমেকে সব রেডিওলজিক্যাল পরীক্ষা করানো যায়। যখন আমি এক্সরে রিপোর্ট নিয়ে চিকিৎসকদের কাছে যাই। তখন অন্য একজন রোগী জানান, এই এক্স-রে ৩ গুণ কম খরচে এই হাসপাতালে করাতে পারতাম।'
শুধু রহিমা বেগম নয়, এমন অনেক রোগী জানেন না- বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তুলনায় চমেকে প্যাথলজিকাল এবং রেডিওলজিক্যাল পরীক্ষা করানো যায়। আর এই সুযোগে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালালরা রোগীদের প্ররোচিত করে বাইরে টেস্ট করাতে নিয়ে যান।
দালালের বিষয়ে চমেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নুরুল আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দালালের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। গত ১ মাসে প্রায় ৩০ জন দালালকে হাসপাতাল থেকে আটক করা হয়েছে।'
জানা গেছে, হাসপাতালের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগে রেডিওগ্রাফার ও রেডিওলজিস্টের সংকট রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চমেক হাসপাতালের রেডিওলজি এবং ইমেজিং বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. সুবাস মজুমদার বলেন, 'আমাদের মাত্র ১০ জন রেডিওগ্রাফার আছে। কিন্তু রোগীদের ভালো সেবা দিতে ৩০ জন রেডিওগ্রাফার দরকার। প্রতিদিন ৪০০ রোগীর এক্সরে করতে হয়, পাশাপাশি সিটি স্ক্যান এবং ম্যামোগ্রাফির জন্য প্রতিদিন ৩০ জনেরও বেশি রোগী থাকে।'
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের রেডিওলজিস্টদেরও সংকট আছে। বর্তমানে ৮ জন রেডিওলজিস্ট আছে, কিন্তু আমাদের তার দ্বিগুণ প্রয়োজন। একজন রেডিওগ্রাফার (টেকনিশিয়ান) পরীক্ষা সম্পাদন করেন, আরেকজন রেডিওলজিস্ট (বিশেষজ্ঞ ডাক্তার) পরীক্ষার রিপোর্ট লেখেন।'
Comments