নাগালের বাইরে ডিম-মুরগি, আলু-পেঁয়াজের বাজারে আগুন
সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ডিম, মুরগির মাংস, পেঁয়াজ ও আলুর। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ী, এক মাসের মধ্যে ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম প্রায় ১০ শতাংশ বেড়েছে।
এক ডজন ডিমের দাম গতকাল খুচরা দোকানে ১৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা মাত্র এক মাস আগেও গড়ে ১৫০ টাকা ছিল।
দাম নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় কম দামে 'ফাটা ডিম' কিনতে শুরু করেছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। রাজধানীর পাইকারি দোকানগুলোতে ডিম সরবরাহের সময় প্রতিদিন যেসব ডিম হালকা ফেটে যায় সেগুলোতে টেপ দিয়ে জোড়া লাগিয়ে কম দামে বিক্রি করে থাকেন পাইকাররা।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর তেজগাঁও এলাকার একটি দোকানে ফাটা ডিম কিনছিলেন জমিলা খাতুন। তার স্বামী একজন রিকশাচালক, কাছেই একটি বস্তিতে থাকেন তারা।
তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দোকানে ডিমের দাম প্রতি পিস ১৫ টাকা পিস। এত টাকা দিয়ে কেনার সামর্থ্য নাই। তাই ১০ টাকা করে দুটি ফাটা ডিম কিনলাম। আগে এগুলো (ফাটা ডিম) বিক্রি হতো প্রতি পিস ৬ টাকায়। কিন্তু এই ফাটা ডিমের দামও ৪ টাকা বেশি।
'ফাটা ডিম ভাজার সময় আমি প্রায়ই ছোট খোসার টুকরো পাই। সামর্থ্য থাকলে ভালো ডিমই কিনতাম, কিন্তু কোনো উপায় নেই,' বলেন তিনি।
গতকাল বিকেলে ১ হাজার টাকা নিয়ে মিরপুর-২ বাজারে গিয়েছিলেন সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক এখলাস হোসেন। কিন্তু ১ হাজার টাকা নিয়েও প্রয়োজনীয় সব পণ্য কিনতে পারেননি তিনি।
'সোনালী মুরগি গত সপ্তাহে প্রতি কেজি ২৭০ টাকা করে কিনেছি, কিন্তু এখন প্রতি কেজি ৩০০ টাকা। এক ডজন ডিম কিনলাম ১৬০ টাকায়, যা আগে ছিল ১৪৫ টাকা,' বলেন তিনি।
৪ জনের পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী এখলাস তার সন্তানদের কিছু খাবার যেমন- বিস্কুট, দুধ এবং কলা কিনতে চেয়েছিলেন। কিন্তু টাকায় না হওয়ায় সেসব কিছুই কিনতে পারেননি বলে জানান তিনি।
'আমি ভেবেছিলাম কাঁচা মরিচ, আদা এবং তেলের দাম কমে যাওয়ায় আমি কিছু টাকা বাঁচাতে পারব। কিন্তু অন্যদিকে অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়ে গেল,' এখলাস বলেন।
মিরপুর-২-এর ডিমের খুচরা বিক্রেতা হাওলাদার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দাম বেশি হওয়ায় মানুষ এখন কম ডিম কিনছেন। আমি প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজার টাকার ডিম বিক্রি করি, এখন সেটি কমে ৬ হাজার টাকা হয়েছে।'
রাজধানীর বাজারে গতকাল ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৮৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা গত মাসে গড়ে ১৭০ টাকা কেজি ছিল।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটি ব্যক্তিগত লাভের জন্য বড় বড় ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের বাজার কারসাজি। এ কারণেই ডিম ও মুরগির দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে।'
প্রবল বর্ষার কারণে হঠাৎ বন্যায় সারাদেশে অনেক মুরগির খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে আগামী দিনে ডিম ও মুরগির দাম আরও বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।
'সরকার অবিলম্বে কঠোর বাজার মনিটরিং নীতি শুরু না করলে নিম্নবিত্তদের আরও ভোগান্তিতে পড়তে হবে,' বলেন তিনি।
কারওয়ান বাজারের মাদারীপুর স্টোরের মালিক মো. ফয়েজ জানান, এক সপ্তাহের মধ্যে হলুদ, রসুন ও আদার দাম বেড়েছে।
হলুদ এখন প্রতি কেজি ২২০-৩০০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ১৪০-২২০ টাকা ছিল; রসুন এখন প্রতি কেজি ২১০-৪০০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ১৭০-৩৬০ টাকা ছিল এবং আদা এখন প্রতি কেজি ২০০-২১০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ১৬০-১৮০ টাকা ছিল।
কারওয়ান বাজারের মাতৃ ভান্ডারের মালিক সজীব শেখ জানান, সরবরাহ সংকটের কারণে গত সপ্তাহ থেকে পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি ৬-১০ টাকা বেড়েছে।
ভারতীয় পেঁয়াজ গতকাল প্রতি কেজি (পাইকারি) ৫২-৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা আগের সপ্তাহে ৪২-৪৫ টাকা ছিল। অন্যদিকে, স্থানীয় জাতের পেঁয়াজ গতকাল প্রতি কেজি (পাইকারি) ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা আগের সপ্তাহে ছিল ৬৪-৭২ টাকা।
কারওয়ান বাজারের আলুর সবচেয়ে বড় পাইকার বিক্রমপুর ভোজনালয়ের মালিক বাবুল মোল্লা জানান, সারাদেশে হিমাগারে আলুর কোনো অভাব নেই, তবে সরবরাহের কৃত্রিম ঘাটতির কারণে আলুর দাম বেড়েছে।
এদিকে রাজধানীর মিরপুর ২, কাওরান বাজার ও শেওড়াপাড়ায় ৩টি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মাছের দাম কেজিতে গড়ে ২০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ইলিশের দাম, গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে কেজিতে ১০০-২০০ টাকা বেড়েছে।
Comments