ঢাকার বাইরে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা

ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা রাজধানীকে ছাড়িয়ে গেছে বলে উঠে এসেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যে।

তবে ঢাকায় মৃত্যুর সংখ্যা বেশি।

১৩ অক্টোবর সকাল পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী, এ বছর মোট ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৪২ হাজার ৪৭০ এবং তাদের মধ্যে ঢাকার বাইরের ২৪ হাজার ১৬৯ জন। তবে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ২১৪ জনের মধ্যে ৬৭ জন ঢাকার বাইরের।

সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরের হিসাবে, এ বছর এখন পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিভাগে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এই বিভাগে আক্রান্তের সংখ্যা আট হাজার ২০৩ এবং ছয় হাজার ২৭ জন ডেঙ্গু রোগী নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে ঢাকা। এ ছাড়া, বরিশাল বিভাগে তিন হাজার ৬৫৬ জন ও খুলনায় তিন হাজার ৩৭৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন।

জেলাগুলোর মধ্যে কক্সবাজারে সর্বাধিক তিন হাজার ৫৩৬ জন, নরসিংদীতে এক হাজার ২৬৫ জন, চট্টগ্রামে এক হাজার ১২৮ জন এবং বরগুনায় এক হাজার ৩৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

সবচেয়ে বেশি—৪৩ জন—ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এ ছাড়া, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৭ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ১৭ জন ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৫ জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

২০০০ সালে ঢাকায় প্রথম ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। ২০২৩ সাল পর্যন্ত ঢাকায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দেশের অন্য যেকোনো এলাকার চেয়ে বেশি ছিল। তবে গত বছর ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এই পরিসংখ্যান বদল যেতে শুরু করে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার এই পরিবর্তনের জন্য বেশ কিছু কারণকে দায়ী করেছেন।

তিনি বলেন, 'মশক নিধনে পর্যাপ্ত অভিযানের অভাব, সীমিত জনসচেতনতা এবং ডেঙ্গুর সব সেরোটাইপে সংক্রমণের সম্ভাবনার কারণে ঢাকার বাইরে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।'

ঢাকায় মশা নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা অপর্যাপ্ত হলেও ঢাকার বাইরের পরিস্থিতি আরও খারাপ বলে মনে করেন অধ্যাপক বাশার।

তিনি বলেন, 'দেশের অন্যান্য এলাকার তুলনায় ঢাকার বাসিন্দারা ডেঙ্গু সম্পর্কে বেশি সচেতন। এটা রাজধানীর বাইরে আক্রান্তের পরিমাণ বৃদ্ধির আরেকটি কারণ।'

অধ্যাপক বাশার উল্লেখ করেন, ঢাকার জনসংখ্যার প্রায় ৫০ শতাংশ ২০০০ সাল থেকে ডেঙ্গু ভাইরাসের বিভিন্ন সেরোটাইপে সংক্রামিত হয়েছে। ফলে, এখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে এই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খানিকটা বেড়েছে। বিপরীতে, ঢাকার বাইরের মানুষ এখন নতুন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে, যা তাদের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।

ঢাকার বাইরে নগরায়নের কারণে ডেঙ্গুর বিস্তার বাড়ছে। কারণ, এই ভাইরাসের বাহক এডিস মশা এই দ্রুত বর্ধনশীল এলাকায় উপযুক্ত প্রজননক্ষেত্র খুঁজে পাচ্ছে।

অধ্যাপক বাশার ডেঙ্গুর বিস্তার মোকাবিলায় সব শহরে মশা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জোরদার করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, 'এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে সরকারকে সব শহরে সমান মনোযোগ দিতে হবে।'

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. এইচএম নাজমুল আহসান ঢাকায় মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, 'ঢাকার বাইরে থেকে অনেক গুরুতর রোগীকে ঢাকার হাসপাতালে রেফার করা হয়। ফলে, এখানে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলো সাধারণত গুরুতর রোগীদের চিকিত্সা দিতে চায় না এবং এসব রোগীদের ঢাকায় পাঠায়।'

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক আহমেদুল কবির সম্প্রতি পরামর্শ দিয়েছেন, রোগীদের ডেঙ্গুর উপসর্গ—যেমন: বমি বমি ভাব, পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট ও শরীরের তাপমাত্রা ওঠানামা দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি করা উচিত।

তিনি বলেন, 'কোনো রোগীর অবস্থা গুরুতর না হলে ঢাকায় রেফার করার প্রয়োজন নেই। স্থানীয় হাসপাতালগুলো ডেঙ্গু রোগীদের ম্যানেজ করতে পুরোপুরি সক্ষম এবং ঢাকায় পাঠানো হলে পথে রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে।'

সরকার সারা দেশের প্রতিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৃথক ডেঙ্গু ইউনিট খুলেছে, যাতে ক্রমবর্ধমান রোগীর চিকিৎসা দেওয়া যায়।

Comments

The Daily Star  | English
rohingya-migration

Rohingyas fleeing Arakan Army persecution

Amid escalating violence in Myanmar’s Rakhine State, Rohingyas are trespassing into Bangladesh every day, crossing the border allegedly to escape the brutality of Myanmar’s rebel group, the Arakan Army (AA).

4h ago