অনিয়মিত মশক নিধন কর্মসূচি, বাড়ছে ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের ঝুঁকি

স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধি না থাকায় অনিয়মিত হয়ে পড়েছে মশক নিধন কর্মসূচি। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, শিগগির ডেঙ্গুর মারাত্মক প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে।

ইতোমধ্যেই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি।

আগস্টের শুরুতে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে ও দপ্তরে অনুপস্থিত থাকায় ১২টি সিটি করপোরেশনের মেয়র, ৩৩০ জন পৌর মেয়র ও প্রশাসক ও প্রায় সব জেলা-উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে অপসারণ করা হয়।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ৮০ শতাংশ এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ৭৫ শতাংশ কাউন্সিলর এখনো অনুপস্থিত। ফলে মশক নিধন অভিযানের ওপর নজরদারি করার কেউ নেই।

তাদের দায়িত্ব পালনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রশাসক নিয়োগ করেছে।

চলতি বছরে এডিস মশাবাহিত এই রোগে ৯২ জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত ডেঙ্গু শনাক্ত রোগী ছিলেন ১৪ হাজার ৮০৪ জন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেন, বৃষ্টিপাতের কারণে এডিসের প্রজননে সহায়ক স্বচ্ছ পানি জমছে এবং কর্তৃপক্ষ প্রায় নিষ্ক্রিয়। আশঙ্কা করছি, এ মাসের শেষের দিকে এ সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে পারে।

'ডেঙ্গু সংক্রমণ রোধে আমাদের অবশ্যই ডেঙ্গুর হটস্পটগুলো চিহ্নিত করতে হবে এবং এখনই কাজ শুরু করতে হবে। সারা দেশেই পরিস্থিতি খারাপ,' দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন তিনি।

কবিরুল বাশার আরও বলেন, 'মশক নিধন কর্মসূচি পরিচালনায় জনপ্রতিনিধিত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এখন কোনো মেয়র নেই।'

কীটতত্ত্ববিদ জিএম সাইফুর রহমান বলেন, 'এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের মূল চাবিকাঠি নজরদারি। বড় শহরগুলোতেও যা দেখা যাচ্ছে না। নজরদারির মাধ্যমে এডিসের প্রজনন স্থান শনাক্ত করে, পরবর্তীতে ধ্বংস করা হয়।'

অক্টোবরের দ্বিতীয়ার্ধ পর্যন্ত ডেঙ্গু সংক্রমণ বাড়তে থাকতে পারে।

রোগতত্ত্ব অনুযায়ী, কেস ফ্যাটালিটি রেট হলো এমন মানুষের অনুপাত, যারা একটি নির্দিষ্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছেন এবং শেষ পর্যন্ত এতে মারা গেছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে এই হার শূন্য দশমিক ৬১ শতাংশ, যা গত বছরে ছিল শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ।

গত বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এক হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক এইচ এম নাজমুল আহসান বলেন, মধ্য আগস্ট থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বেশি আসছে।

তিনি আরও বলেন, দেরিতে হাসপাতালে আসায় ঝুঁকি বাড়ছে। শ্রীলঙ্কায় জুলাই মাসে কেস ফ্যাটালিটি রেট ছিল দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। তাদের নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতি ও আধুনিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা প্রশংসনীয়। ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হওয়ার পরপরই শ্রীলঙ্কার স্বাস্থ্যকর্মীরা তাদের জাতীয় তথ্য হালনাগাদ করেন এবং তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

'জনস্বাস্থ্য প্রতিনিধি দল রোগীর বাড়িতে যায়, চারপাশ পরীক্ষা করে এডিসের প্রজনন ক্ষেত্র আছে কি না দেখে এবং থাকলে তা ধ্বংস করে দেয়। তারা অন্য সংক্রমিত রোগীদেরও খোঁজ নেন,' বলেন নাজমুল।

তিনি জানান, এই প্রতিনিধি দল সচেতনতা তৈরিতেও কাজ করে—ডেঙ্গু প্রজনন ও বিস্তার কীভাবে হয়। কেন স্থির পরিষ্কার পানি এর সহায়ক। কোনো বাড়িতে একবার যাওয়ার এক সপ্তাহ পরে দলগুলো আবার যায়। সেবারও এডিসের প্রজননস্থল পেলে বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। শ্রীলঙ্কার ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রধান হলেন দেশটির রাষ্ট্রপতি। এছাড়া সেনাপ্রধান, মন্ত্রী ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ সদস্যরাও এতে সম্পৃক্ত।

বাংলাদেশের মশকবিরোধী কর্মসূচি তাদের মতো সমন্বিত নয়, বলেন এই চিকিৎসক।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন জ্বর হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ড. মহ. শের আলী বুধবার সাংবাদিকদের জানান, লার্ভা নিধন অভিযান নিয়মিতভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে। এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে করপোরেশনের টিম রোগীদের বাড়ি বাড়ি পরিদর্শন করছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে, সচেতনতা বৃদ্ধি ও মশক নিধন অভিযান তদারকির জন্য গত ২ সেপ্টেম্বর ১০টি টিম গঠন করা হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Tanvir takes five as Tigers clinch 2nd Sri Lanka ODI

Bangladesh captain Mehidy Hasan Miraz has won the toss and opted to bat first in the second ODI against Sri Lanka, looking to keep the three-match series alive with a win at the R Premadasa Stadium today. 

15h ago