ঠান্ডাজনিত রোগীর চাপ বাড়ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়, অধিকাংশই শিশু

ঠান্ডাজনিত রোগীর চাপ বাড়ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়, অধিকাংশই শিশু
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের মেঝেতেও থাকতে হচ্ছে রোগীদের। ছবি: স্টার

তীব্র শীতের কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে। জেলার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ও শিশু ওয়ার্ডের শর্যাগুলো রোগীতে পূর্ণ। রোগী আছে হাসপাতালের মেঝেতেও।

শুধু জেলা সদরের সরকারি হাসপাতাল নয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বেসরকারি হাসপাতালের চিত্রও একই। ভিড় বেড়েছে ডায়রিয়া রোগীর, যার মধ্যে বেশির ভাগই শিশু বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে সিট রয়েছে ২০টি। গতকাল বুধবার সরেজমিনে সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, ৫২ জন রোগী ভর্তি আছে। গত মঙ্গলবার সব মিলিয়ে ১৪ জন ডায়রিয়া রোগী নতুন করে ভর্তি হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১০ জনই শিশু। একই অবস্থা জেলার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকেও।

গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়েছে কয়েকগুণ। রোগীদের অধিকাংশই শিশু। শুধু বহির্বিভাগে নয়, শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে প্রায় তিনগুণ।

রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, পর্যাপ্ত সরকারি সরবরাহ থাকার পরেও ভর্তি রোগীদেরকে স্যালাইন সেট ও ক্যানুলা দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি সরকারি বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও কম্বল ও বালিশ দেওয়া হচ্ছে না। এতে মেঝেতে থাকা রোগী ও স্বজনদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

নবীনগর উপজেলার নারুই গ্রাম থেকে আসা গৃহবধূ মারুফা আক্তার দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তার তিন বছরের মেয়ে জামিয়া ও দেড় বছর বয়সী জান্নাতকে চার দিন আগে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয়েছে। সিট না পেয়ে তারা মেঝেতে অবস্থান নিয়েছেন।

মারুফা বলেন, 'বাইরে থেকে ঠান্ডা বাতাস আসায় মেঝেতে থাকা খুব কষ্টকর। আমার দুই সন্তান ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ায় ভীষণ দুশ্চিন্তায় আছি।'

আখাউড়া উপজেলার ধরখার গ্রামের মো. লোকমান গত শুক্রবার তার সাড়ে আট মাস বয়সী ছেলে আরমানকে একই ওয়ার্ডে ভর্তি করেছেন। লোকমান বলেন, 'হাসপাতাল থেকে আমার ছেলের জন্য ক্যানুলা ও স্যালাইন সেট দেওয়া হয়নি। আমি এসব বাজার থেকে কিনতে বাধ্য হয়েছি।'

ডায়রিয়া ওয়ার্ডে কর্তব্যরত নার্স পূজা দেবনাথ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই ওয়ার্ডে কোনো শিশু শয্যা নেই। তবুও বেশিরভাগ রোগীই বর্তমানে শিশু। ওয়ার্ডে ২০ জন রোগীর ধারণক্ষমতা থাকলেও বর্তমানে দ্বিগুণেরও বেশি রোগী থাকায় অনেককে মেঝেতে থাকতে হচ্ছে।'

গতকাল বিকেল ৩টা পর্যন্ত এই ওয়ার্ডে ৪১ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছেন এবং তাদের মধ্যে ২৫ জনই শিশু।

অপরদিকে বুধবার বিকেল পর্যন্ত হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ৪৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ২১ জনই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত।

গতকাল দুপুরে হাসপাতালের আউটডোরে গিয়ে দেখা গেছে, আগের তুলনায় চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে। রোগীদের অধিকাংশই শিশু। শুধু আউটডোরে নয়, শিশু ওয়ার্ডেও নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শীতকাল রোটাভাইরাস ছড়ানোর মৌসুম হওয়ায় গত আট থেকে ১০ দিনে হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। তবে আতঙ্কের কিছু নেই। কারণ যথাযথ চিকিৎসা সম্পূর্ণ সুস্থতা নিশ্চিত করে।'

ডায়রিয়া ওয়ার্ডের রোগীদের ক্যানুলা ও স্যালাইন সেট না দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'স্যালাইন, ক্যানুলা ও আনুষঙ্গিক ওষুধপত্রের কোনো সংকট নেই। এসব কেন সরবরাহ করা হচ্ছে না, তা খতিয়ে দেখা হবে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের চিকিৎসার জন্য আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত।'

Comments

The Daily Star  | English

Sohag’s murder exposes a society numbed by fear and brutality

It was a murder that stunned the nation, not only for its barbarity, but for what it revealed about the society we have become.

1h ago