‘বৃদ্ধ শিশু’ আনিচুর বাঁচতে চায়

৯ বছরের আনিচুরকে দেখায় বৃদ্ধের মতো। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

শিশু আনিচুরের বয়স এখন ৯ বছর ২ মাস। কিন্তু তাকে দেখায় বৃদ্ধের মতো। চিকিৎসকদের মতে, আনিচুর বিরল জেনেটিক রোগে আক্রান্ত। কিন্তু দারিদ্রের কারণে শিশুটির প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করা তার পরিবারের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।

আনিচুর লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের ধাইরখাতা গ্রামের মনির হোসেন ও আলেয়া বেগমের ছেলে। এই দিনমজুর দম্পতির ৩ ছেলের মধ্যে আনিচুর সবার ছোট। তার বড় ২ ভাই স্বাভাবিক স্বাস্থ্যের। তারা বিয়ে করে সংসার করছেন।

আনিচুরের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, জানামতে তাদের বংশের কেউ এ ধরনের রোগে আক্রান্ত ছিলেন না।

আনিচুরের বাবা-মা ও স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য, নিজের শারীরিক অবস্থা নিয়ে আনিচুরের মনোকষ্ট আছে। কিন্তু সে খুব হাসিখুশি স্বভাবের। কেউ কেউ তাকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করেন। আদরও করেন অনেকে। গ্রামের অন্য শিশুরা আনিচুরের নাম ধরে ডাকলে সে সাড়া দেয়।

মা আলেয়া বেগমের কোলে শিশু আনিচুর। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

সুস্থ হওয়ার আকুতি জানিয়ে আনিচুর বলে, 'অন্যদের মতো আমিও পড়াশোনা করতে চাই। খেলাধুলা খুব পছন্দ আমার।'

আনিচুরের মা আলেয়া বেগমের কাছ থেকে জানা যায়, আনিচুর কম খেতে পারে। বেশিক্ষণ ছোটাছুটি করতে পারে না। গ্রামের অন্য শিশুরা তার খেলার সাথী। সে এখন প্রথম শ্রেণিতে পড়ছে। তার মুখের ভাষা খুব মিষ্টি।

আলেয়া বেগম বলেন, 'এমন শারীরিক অবস্থার ভেতরেও আনিচুর খুব হাসিখুশি থাকে। বাচ্চাটার জন্য চোখের পানি ধরে রাখতে পারি না। টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসাও করাতে পারছি না। অন্যের জমিতে ঘর তুলে থাকি। সামান্য আয়ে সংসার চালানোই দায়। চিকিৎসার টাকা আসবে কোথা থেকে?'

আনিচুরের মায়ের আশা, ঠিকঠাক চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারলে তার সন্তান একদিন সুস্থ হয়ে উঠবে।

ধাইরখাতা গ্রামের বাসিন্দা খালেদ সাইফুল্লাহর ভাষ্য, আনিচুরের স্মরণশক্তি প্রখর। সুন্দর ভাষার জন্য অনেকেই তাকে আদর করে। কিন্তু গ্রামের বেশিরভাগ মানুষের আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় তাদের পক্ষেও শিশুটির চিকিৎসার জন্য সাহায্য করা সম্ভব হচ্ছে না।

লালমনিরহাটের সিভিল সার্জন নির্মলেন্দু রায় দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আনিচুর বিরল কোনো জেনেটিক রোগে আক্রান্ত। হয়তো বহু বছর আগে তাদের বংশের কেউ এ রোগে আক্রান্ত ছিলেন। এ রোগের চিকিৎসা তেমন নেই। তবে জ্যেষ্ঠ কোনো শিশু বিশেষজ্ঞকে দেখিয়ে তার পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।'

এ অবস্থায় আনিচুরের পরিবার ও গ্রামবাসীরা তার চিকিৎসার খরচ চালিয়ে নিতে সমাজের বিত্তবান ও দয়াশীলদের এগিয়ে আসার আকুতি জানিয়েছেন।

এর আগে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে আনিচুরের মতো একই ধরনের রোগে আক্রান্ত মাগুরার ৫ বছর বয়সী শিশু বায়েজিদ মারা যায়। বায়েজিদ বিরল প্রজেরিয়া রোগে আক্রান্ত ছিল।

২০১২ সালের মে মাসে মাগুরা মাতৃসদন হাসপাতালে বায়েজিদের জন্ম হয়। তখন থেকেই সে দেখতে ছিল বৃদ্ধ মানুষের মতো। বায়েজিদকে দেখে সবাই ভয় পেত। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বায়েজিদের শরীরে বার্ধক্যের ছাপ স্পষ্ট হতে থাকে। জন্মের তিন মাসের মধ্যেই তার দাঁত ওঠে।

চিকিৎসকদের মতে, প্রজেরিয়া রোগে আক্রান্ত শিশুদের দৈহিক বৃদ্ধি ও দৃষ্টিশক্তিসহ অন্যান্য বিষয় স্বাভাবিক থাকলেও শরীরের চামড়া বৃদ্ধ মানুষদের মতো কুঁচকানো হয়। এ রোগের কোনো চিকিৎসা নেই। সাধারণত এ রোগে আক্রান্ত শিশু বড়জোর ১২-১৪ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে।

Comments

The Daily Star  | English

Build national unity to tackle ongoing challenges: BNP

Fakhrul, after meeting chief adviser, says govt should hold discussions with all political parties, calls for swift polls following reforms

56m ago