লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম

হিমেল বাতাসে ঠান্ডার দাপট, দেখা নেই সূর্যের

কনকনে ঠান্ডায় শিশু সন্তানকে বুকে জড়িয়ে আছেন মা। ছবিটি লালমনিরহাটের তিস্তাপাড় থেকে তোলা। ছবি: এস দিলীপ রায়/ স্টার

সকালে কুয়াশা কমলেও বেড়েছে ঠান্ডার প্রকোপ, হিমেল বাতাস থাকায় বেড়েছে ঠান্ডার দাপট। এতে নাজেহাল অবস্থায় পড়েছে লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামসহ উত্তরাঞ্চলের জনজীবন। গত সোমবার থেকে দুই জেলার মানুষ সূর্যের দেখা পাচ্ছেন না। সোমবার থেকে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ থেকে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে।

কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পযর্বেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার সকালে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, আজ সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকাল পযর্ন্ত চারদিক কুয়াশায় ঢাকা ছিল। সন্ধ্যার পর থেকে বৃষ্টির মতো কুয়াশা পড়তে থাকে। সূর্যের আলো না থাকায় ঠান্ডার প্রকোপ অনেক বেড়ে যায়। এছাড়া হিমেল বাতাসও আছে।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তাপাড়ের দিনমজুর মনসুর আলী (৬০) বলেন, সোমবার থেকে সূর্যের দেখা পাচ্ছেন না। ঠান্ডার কারণে কাজের সন্ধানে ঘরের বাইরে যেতেও পারছেন না। অনেকে ঘরের বাইরে গেলেও কাজ যোগার করতে পারছেন না।

লালমনিরহাট শহরের শহীদ শাহজাহান কলোনীর রিকশাচালক নুর ইসলাম (৪৮) বলেন, ঠান্ডা উপেক্ষা করে তিনি রিকশা নিয়ে বাইরে গেলেও যাত্রী পাচ্ছেন না। ঠান্ডার কারণে লোকজন বাইরে বেরোচ্ছে না। নেহাত প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় কোনো মানুষকে পাওয়া যাচ্ছে না।

'ঠান্ডার কারণে হামারগুলার ইনকাম কমি গ্যাইছে। হামরাগুলা খুব কষ্ট করি সংসার চালবার নাইকছি,' তিনি বলেন।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার সাকোয়া গ্রামের মোমেনা বেগম (৪৫) বলেন, ঠান্ডায় নারীদের সবচেয়ে বেশি কষ্ট পোহাতে হচ্ছে। সবার আগে ঘুম থেকে উঠে সংসারের কাজ শুরু করেন। সকালে ও রাতে পানি নাড়তে খুব কষ্টে পড়তে হচ্ছে। ঠান্ডার কারণে হাত পা ঠিকমতো কাজ করে না। 'এবার ঠান্ডার খুব জোর পড়ছে। ঠান্ডাত তাঙ হামাকগুলাক কাজ করায় নাগে,' তিনি বলেন।

বনগ্রাম এলাকার কুলসুম বেগম (৪৪) বলেন, 'এই জারোত ছওয়াপোয়াক নিয়া খুব ঝামলাত পড়ি গ্যাছি। ছওয়ার ঘরে ঠান্ডা কাঁশি নাগি আছে। বাড়ির কাজ সামলা নাগে ফির ছওয়াক সামলা নাগে। এ্যাদোন জার আর কয়দিন থাইকলে হামরা বড় মানুষ গুলাও অসুস্থ হয়ান পড়মো।'

দিনমজুর কান্দ্রি বালা (৬৪) বলেন, প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র না থাকায় ঠান্ডা নিবারণে খড়কুটোর আগুন তাদের ভরসা। এতেও তারা ঠান্ডা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। ঠান্ডার কারণে রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারেন না।

'আগুন তাপায়াও হামারগুলার জার দুর হবার নাইকছে না। এ্যাদোন জার আর কদিন থাইকলে হামরাগুলা মরি যামো।'

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্রপাড়ে যাত্রাপুর গ্রামের কৃষি শ্রমিক নবির হোসেনের (৫৫) সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ঠান্ডার কারণে তারা মাঠে কাজ করতে যেতে পারছেন না। ঠান্ডা উপেক্ষা করে অনেকে মাঠে কাজ শুরু করলেও বেশিক্ষণ টিকতে পারছেন না। তাদেরকে বাড়িতে বসে থাকতে হচ্ছে।

'ঠান্ডার ঠ্যালায় হামারগুলার হাত-পা কোকড়া নাগি গ্যাইছে। আগুনের বগল থাকি উঠবার মন চায় না। কাজ কইরবার পাবার নাইকছি না। হামার আয়ও নাই। খুব কষ্ট করি চইলবার নাইকছি,' তিনি বলেন।

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ধরলাপাড়ের চর সোনাইকাজী গ্রামের কৃষক আবেদ আলী মন্ডল (৬৭) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ঠান্ডার কারনে তিনি কৃষি শ্রমিক পাচ্ছেন না। তিনিও মাঠে গিয়ে কাজ করতে পারছেন না। এখন বোরো ধানের বীজতলার পরিচর্যা জরুরি হয়ে পড়েছে। সূর্যের আলো থাকলে তবুও রেহাই পাওয়া যেত।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, দু:স্থদের সরকারি বরাদ্দের কম্বল বিতরণ করা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক কম্বলের চাহিদা জানিয়ে মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছেন বলে জানান।

Comments

The Daily Star  | English
BNP demands national election by December 2025

2014, 2018, 2024 polls: BNP to sue former ECs, officials today

BNP is set to file a case against officials involved in the last three national elections with Sher-e-Bangla Nagar police today. The party will also lodge a formal complaint with the Election Commission in this regard, BNP leaders said yesterday.  

4h ago