খুলনা মেডিকেলের পাশে সিটি করপোরেশনের ময়লার স্তূপ

খুলনা সিটি কর্পোরেশন
খুমেক হাসপাতালের পাশে সোনাডাঙ্গা মুজগুন্নি মহাসড়কের ওপর সিটি করপোরেশনের সংগ্রহ করা ময়লা। ছবি: হাবিবুর রহমান/স্টার

খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতাল থেকে ২০০ গজ দূরে খুলনা নগরীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সোনাডাঙ্গা মুজগুন্নি মহাসড়কের ওপর ময়লা ফেলছে খুলনা সিটি করপোরেশন।

মাত্র কয়েক মাস আগে ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার করা এই সড়কে ময়লা ফেলায় পথচারীদের ভোগান্তির পাশাপাশি খুমেক ও আশেপাশের পরিবেশ বিপর্যস্ত হচ্ছে।

খুলনা বিভাগের ১০ জেলাসহ অন্যান্য জেলা থেকে নিয়মিত খুমেক হাসপাতালে রোগী আসেন। ৫০০ শয্যার এই হাসপাতালে ১৫ শতাধিক রোগী নিয়মিত ভর্তি থাকেন। সেইসঙ্গে আউটডোরে প্রতিদিন চিকিৎসা নেন প্রায় আড়াই হাজার রোগী।

নগরীর ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে খুমেক হাসপাতালের বহির্বিভাগের পাশেই স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ভবন। ওই ভবনের প্রধান ফটকের সামনে থেকে উত্তর দিকে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট পর্যন্ত প্রায় ৫০ ফুট এলাকায় সড়কের একপাশে ময়লা ফেলা হচ্ছে।

সেখানে গৃহস্থালির বর্জ্য, পচা খাবার, পলিথিন ব্যাগ, কসাইখানার বর্জ্যে একাকার হয়ে আছে। প্রচণ্ড দুর্গন্ধ আর দূষণের কারণে নাক চেপে কোনোমতে ওই জায়গা পার হতে হয় হাসপাতালে আসা রোগী-স্বজন, শিক্ষার্থী ও পথচারীদের।

খুলনা বিভাগের অন্যতম বড় চিকিৎসাকেন্দ্র খুমেক হাসপাতালের কাছে এভাবে ময়লা ফেলাকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না পরিবেশবাদী ও স্থানীয়রা।

চলতি সপ্তাহে ওই এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কে ময়লার স্তূপের পাশ দিয়ে লোকজন ও শিক্ষার্থীরা নাক চেপে পথ চলছেন। বাসাবাড়ি থেকে সংগ্রহ করে আনা ময়লা ছড়িয়ে আছে সড়কের ওপর। কুকুর, কাক এসব ময়লা টানাটানি করছে। সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের চাকায় ময়লা লেগে পিষ্ট হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। সেই ময়লা বেশ কিছুদূর পর্যন্ত চলেও যাচ্ছে।

খুমেক হাসপাতাল
গৃহস্থালির বর্জ্য, পচা খাবার, পলিথিন ব্যাগ, কসাইখানার বর্জ্যে একাকার। ছবি: হাবিবুর রহমান/স্টার

স্থানীয় বাসিন্দা আসাদুজ্জামান রাহুল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রাস্তা সংস্কারের আগে এখানকার বাসা থেকে ময়লা সংগ্রহ করে সিটি করপোরেশনের লোকেরা নিয়ে যেত। এখন সংস্কার করা রাস্তার ওপরেই তারা ময়লা ফেলছে।'

স্থানীয় অন্তত ১৫ বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নগরীর অন্যতম ব্যস্ত এই এলাকায় উন্মুক্তভাবে ময়লা ফেলার কারণে এর দুর্গন্ধ এখন তাদের ভোগান্তির কারণ।

নগরীর অন্যতম প্রশস্ত এই পথের ২ পাশে অনেক সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। খুমেক হাসপাতালের সীমানা বরাবর ভারতীয় ভিসা সেন্টার, বন বিভাগের অফিস, খুলনা নার্সিং ইনস্টিটিউট, স্বাস্থ্য প্রকৌশলীর অফিসসহ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে। ওষুধের দোকান আছে প্রায় ৯০টি।

স্থানীয় বাসিন্দা ও খুলনা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সেক্রেটারি শরিফুল ইসলাম সেলিম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটি এই শহরের অন্যতম ব্যস্ত সড়ক। কোনো সভ্য সমাজে হাসপাতালের কাছে এভাবে উন্মুক্ত জায়গায় ময়লা ফেলা যায় না।'

তিনি বলেন, 'পড়ে থাকা বর্জ্য রাস্তার মাঝ পর্যন্ত চলে যাচ্ছে। পায়ের তলায় ময়লা ছড়িয়ে পড়ছে। সেসব বর্জ্য থেকে জীবাণু ছড়াচ্ছে।'

স্থানীয় শিক্ষার্থীরা জানান, এই পথ দিয়ে হেঁটে যেতে তাদের খুব কষ্ট হয়। বৃষ্টি হলে অবস্থা আরও খারাপ হয়।

বয়রা এলাকার বাসিন্দা পলাশ দাশ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখানে সবসময় ময়লা থাকেই। করপোরেশনের লোকজন ময়লা নেওয়ার পর আবার ময়লা জমা হয়। ময়লা থাক বা না থাক দুর্গন্ধ কখনো কমে না। প্রচণ্ড দুর্গন্ধের কারণে আশেপাশের দোকানে ঠিকমতো বসা যায় না।'

স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইফতেখার হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জায়গাটিতে একটা পরিকল্পিত সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) হবে। মেয়রও বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন।'

খুমেক হাসপাতালের পরিচালক মো. রবিউল হাসান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হাসপাতালের এত কাছে ময়লা ফেলায় রোগী ও স্বজনরা সমস্যায় পড়ছেন। হাসপাতালকে পরিচ্ছন্নমুক্ত রাখতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। এই ময়লার ভাগাড় আমাদের ঝামেলায় ফেলছে। অনেক রোগী ময়লার কারণে সংক্রমণের ঝুঁকিতে আছেন।'

সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা আনিছুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ওই এলাকায় কোনো এসটিএস প্ল্যান্ট না থাকায় বাধ্য হয়ে সড়কে ময়লা ফেলতে হচ্ছে। সড়কে ফেলে রাখা ময়লা-আবর্জনার ভোগান্তি থেকে মুক্তি দিতে করপোরেশন থেকে বেশ কয়েকটি এসটিএস তৈরি করা হচ্ছে।'

তবে পিটিআই মোড়, জিলা স্কুল, বয়রা, নিরালা মোড়সহ কিছু জায়গায় জমি না পাওয়ায় এসটিএস তৈরি সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'আমরা প্রতিদিন ওই এলাকা থেকে ময়লা সংগ্রহ করি। এলাকাবাসী আবারও সেখানে ময়লা ফেলেন। মাঝেমধ্যে সেখানে ব্লিচিং পাউডারও দেওয়া হয়। এসটিএস নির্মাণের জায়গা পেলে সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে।'

খুলনা সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র-১ আমিনুল ইসলাম মুন্না ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কেসিসি বেশ কয়েকটি এসটিএস তৈরি করছে। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের এসটিএস নির্মাণের জন্য আমরা বহুদিন ধরে জায়গা খুঁজছি। জমি না পাওয়ায় তা তৈরি করা সম্ভব হয়নি।'

'বিকল্প জায়গা পেলে এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলে' বলে মনে করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

5h ago