খুমেক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ওষুধ ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষ: ২ ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার

খুলনা মেডিকেল কলেজ
ওষুধ কেনাকে কেন্দ্র করে ওষুধ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে খুলনা মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ। ছবি: সংগৃহীত

খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের সামনে ওষুধ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ওই কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় ২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আজ বৃহস্পতিবার ভোররাত সাড়ে ৩টায় নগরীর ২ এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত খুমেক হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি চলছিল। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আজ সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের বৈঠক করার কথা আছে। সেসময় কর্মবিরতি তুলে নেওয়ার ঘোষণা আসতে পারে।

এর আগে মঙ্গলবার রাতে মেডিকেল কলেজের পক্ষ থেকে করা অভিযোগটি গতকাল বিকেলে মামলা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে সোনাডাঙ্গা মডেল থানা পুলিশ।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে বিপ্লব মেডিসিন কর্নারের মালিক এস এম মাহমুদুর রহমান ও ওই দোকানের কর্মচারী মীর বায়জিদ।

ওষুধের দাম নিয়ে ওই দোকানের মালিক ও কর্মচারীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ঝগড়া হয়।

সোনাডাঙ্গা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমতাজুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মামলা হওয়ার পর আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করে পুলিশ। ভোররাত সাড়ে ৩টার দিকে মাহমুদুরকে খুলনা নগরীর বয়রা বাজার এলাকা থেকে ও পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ৩টা ৫০ মিনিটের দিকে বায়জিদকে ছোট বয়রার হাসানবাদ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।'

গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে সোপর্দ করার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান তিনি।

খুলনা মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জন চলছে। ছবি: দীপংকর রায়/স্টার

এর আগে গতকাল রাত ৯টার দিকে সংঘর্ষে আহত শিক্ষার্থীদের দেখতে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য সেখ সালাউদ্দিন জুয়েল ও খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক।

সেসময় সংসদ সদস্য সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশকে ফোন করে শিক্ষার্থীদের মারধরকারী ব্যবসায়ীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন। তিনি শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেন।

গত সোমবার রাত ৯টার দিকে ওষুধ কেনাকে কেন্দ্র করে ওষুধ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে খুলনা মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে কমপক্ষে ২০ শিক্ষার্থী ও ৯ ওষুধ ব্যবসায়ী আহত হন। তাদের মধ্যে ৩ শিক্ষার্থীর অবস্থা গুরুতর ছিল।

ওই ঘটনার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকভাবে কর্মবিরতি শুরু করেন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। অন্যদিকে, হাসপাতালের সামনের ওষুধ ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ রাখেন।

আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ায় গতকাল সকালে মেডিকেল কলেজ অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ ও হাসপাতালের পরিচালক ও উপ-পরিচালকের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। পরে মেডিকেল কলেজ চত্বরে দিনভর বিক্ষোভ করেন।

বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে শিক্ষার্থীরা ঘোষণা করেন যে তাদের ৩ দফা দাবি মেনে না নেওয়া হলে আজ দুপুর ১২টা থেকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করবেন তারা।

শিক্ষার্থীদের ৩ দফা দাবি ছিল—১৬ আগস্ট সকাল ১০টার মধ্যে হামলার সঙ্গে জড়িত আসামিদের গ্রেপ্তার করা, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালের মাল্টিপারপাস ভবনে কমপক্ষে ২টি মডেল ফার্মাসি ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে কলেজ ক্যাম্পাসে পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করা।

এরমধ্যে দ্বিতীয় দাবিটি গতকাল দুপুরে বাস্তবায়নের ঘোষণা দেন হাসপাতালের পরিচালক মো. রবিউল ইসলাম‌।

ওই সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, হাসপাতালের সামনের বিপ্লব মেডিসিন কর্নারে ওষুধ কিনতে যান প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থী। কিন্তু ওই দোকান থেকে ওষুধটির দ্বিগুণ দাম চাওয়া হয়। এ নিয়ে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে ওই শিক্ষার্থীকে মারধর করেন দোকানের কর্মচারীরা। পরে ওই শিক্ষার্থী হোস্টেলে এসে অন্যদের ব্যাপারটি জানান।

তাদের অভিযোগ, কয়েকজন শিক্ষার্থী কেন ওই শিক্ষার্থীকে মারধর করা হয়েছে তা জানতে দোকানে গেলে অন্য ব্যবসায়ীরা শিক্ষার্থীদের মারধর করেন। এতে বিভিন্ন বর্ষের অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হন।

অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হলেও ২৯ ব্যাচের আনান, ৩১ ব্যাচের মাহাদি ও দেব চৌধুরীর অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। তাদের মাথায় আঘাত লাগে। তারা এখন শঙ্কা মুক্ত।

ওষুধ ব্যবসায়ীদের দাবি, ওই শিক্ষার্থী ৭০ টাকার ওষুধ কেনার পর তিনি মোট দামের ওপর ১০ শতাংশ কমিশন চেয়েছিলেন। তবে দোকানদার ওই কমিশন দিতে রাজি না হওয়ায় ২ জন বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। মেডিকেল কলেজের হল থেকে শিক্ষার্থীরা এসে ওই দোকানে ভাঙচুর চালায়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

ওই ঘটনায় ৯ ওষুধ ব্যবসায়ী আহত হন বলেও জানান তারা।

 

Comments

The Daily Star  | English

BDR carnage rooted in 'long-term plot', says investigation commission

It was abetted by intelligence failures, gross negligence, and the involvement of several political figures, according to the commission chief

54m ago