২.৩ বিলিয়ন ডলার পেয়েও বায়ুদূষণ রোধে ব্যর্থ বাংলাদেশ

ফাইল ফটো

বায়ুদূষণ রোধে ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার তহবিল পাওয়ার পরও বাংলাদেশের বাতাসের গুণগত মান বছরের প্রায় অর্ধেক সময়েই অত্যন্ত দূষিতই থাকছে।

২০১৭ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে বায়ুদূষণ রোধে বাংলাদেশ বেশ কয়েকটি ধাপে এই তহবিল পেয়েছে এবং চীন ও ফিলিপাইনের পর পরিষ্কার বায়ু প্রকল্পে আন্তর্জাতিক তহবিলের তৃতীয় শীর্ষগ্রহিতা হয়ে উঠেছে।

'দ্য স্টেট অব গ্লোবাল এয়ার কোয়ালিটি ফান্ডিং ২০২৩' শিরোনামের এই গবেষণাটি পরিচালনা করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংগঠন ক্লিন এয়ার ফান্ড (সিএএফ)।

সিএএফের প্রধান নির্বাহী (সিইও) জেন বার্স্টন সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বায়ুমান উন্নয়নে ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের তহবিল বাংলাদেশে পাঠানোর বিষয়টি আনন্দদায়ক। তবে বাংলাদেশের বায়ুদূষণ রোধে যে অর্থ প্রয়োজন, এই তহবিল তার চেয়ে অনেক কম।'

তিনি আরও বলেন, একই সময়ে বাংলাদেশে বায়ু দূষণকারী ও জীবাশ্ম জ্বালানি সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে যে ৬ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়েছে, তার চেয়ে বায়ুমান উন্নয়নের এই তহবিল অনেক কম।

'আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন তহবিল ও নীতিনির্ধারকরা বায়ুমানের জন্য আরও বেশি অর্থায়ন করবে। অন্যথায় আমাদের উদ্যোগ বায়ুদূষণ বৃদ্ধি ও অব্যাহত জীবাশ্ম জ্বালানি তহবিলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারবে না', বলেন তিনি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, বায়ুদূষণের ফলে ২০১৯ সালে বাংলাদেশে ২ লাখ ৪০ হাজার মানুষের মৃত্যু ও বিশ্বে ৪২ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু হয়েছে।

বাংলাদেশে বায়ুদূষণের বিভিন্ন উৎসের মধ্যে রয়েছে—ইটভাটা, যানবাহন, নির্মাণস্থল এবং আন্তঃসীমান্ত বাতাস।

বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক বিশেষ দূত সাবের হোসেন চৌধুরী ডেইলি স্টারকে জানান, তহবিলের পরিমাণ সম্পর্কে তিনি অবগত নন। তবে বাংলাদেশ যে কিছু আর্থিক সহায়তা পেয়েছে, সে বিষয়ে তিনি অবগত আছেন।

তিনি বলেন, 'আমরা অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক—দূষণের দুই ধরনের উৎসই চিহ্নিত করেছি। আমাদের এখন বিশুদ্ধ বাতাসের জন্য বিধি রয়েছে, ইটভাটার আগুন থেকে ব্লকে যাওয়ার জন্য আমাদের একটি সংশোধিত সময়সীমা ও কর্মপরিকল্পনা রয়েছে। আমরা এটাও স্বীকার করি যে বায়ুমানের আন্তঃসীমান্ত দিক রয়েছে এবং আমরা এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশের সঙ্গে কাজ করার জন্যও আগ্রহী। এ বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে।'

তবে তিনি এও বলেন, 'এই নীরব ঘাতকের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য অবশ্যই আরও অনেক কিছু করা দরকার। বায়ুদূষণ আমাদের জীবনযাত্রার মানকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে এবং বাংলাদেশের মানুষের জীবন থেকে বছরের পর বছর কেড়ে নিচ্ছে।'

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেহেতু বায়ুদূষণের একাধিক উৎস রয়েছে, তাই ঢাকা ও বাংলাদেশের অন্যান্য অংশে বায়ুদূষণ মোকাবিলায় বায়ু গুণমান ব্যবস্থাপনা বিষয়ে বিস্তৃত পরিকল্পনা প্রয়োজন।

বাতাসের গুণমান বছরের প্রায় অর্ধেক সময় ধরেই খুব খারাপ থাকে এবং শীতকালে তা অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর হয়ে দাঁড়ায়। ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দূষিত বাতাসের ক্রমাগত সংস্পর্শে আসার কারণে বাংলাদেশিদের গড় আয়ু ৬ বছর ৮ মাস কমে গেছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্টের পরিচালক মো. জিয়াউল হক ডেইলি স্টারকে বলেন, বাংলাদেশের বায়ুমানের পরিস্থিতি এখনো ভালো না হলেও সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, যার ইতিবাচক প্রভাব শিগগিরই দৃশ্যমান হবে।

সিএএফের গবেষণা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সরকার, সংস্থা ও উন্নয়ন ব্যাংকগুলো জীবাশ্ম জ্বালানির চেয়ে পরিষ্কার বায়ুতে বেশি সহায়তা অর্থ ব্যয় করেছে—নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে বাহ্যিক উৎস থেকে সৃষ্ট বায়ুদূষণ মোকাবিলায় আনুমানিক ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হয়েছে, যেখানে তেল-গ্যাস উত্তোলন ও উত্পাদনের মতো জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্পগুলোতে ব্যয় করা হয়েছে দেড় বিলিয়ন ডলার।

বায়ুদূষণের শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে পাঁচটিই আফ্রিকার। আফ্রিকার দেশগুলো একই সময়কালে (২০১৭-২০২১ সাল) বায়ুমান তহবিলের পাঁচ শতাংশ (দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার) পেয়েছে।

তবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন তহবিলের মাত্র এক শতাংশ ও আন্তর্জাতিক পাবলিক ক্লাইমেট ফাইন্যান্সের মাত্র দুই শতাংশ বিশুদ্ধ বাতাসের জন্য ব্যয় করা হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

8h ago