‘ট্রেনের ধাক্কায়’ আহত হরিণটি জবাই করল কে

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ট্রেনের ইঞ্জিনরুম থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় একটি গলাকাটা হরিণ উদ্ধারের ৩ দিন পেরিয়ে গেলেও এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। চিহ্নিত করা হয়নি জড়িত কাউকেও।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবি। রক্তাক্ত দা হাতে থাকা ব্যক্তিটি রেলওয়ে কর্মী এনামুল হক সোহেল। পেছনে মৃত হরিণ ঝুলিয়ে নিয়ে আসতে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনের সহকারী চালকও আছেন। ছবি: সংগৃহীত

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ট্রেনের ইঞ্জিনরুম থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় একটি গলাকাটা হরিণ উদ্ধারের ৩ দিন পেরিয়ে গেলেও এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। চিহ্নিত করা হয়নি জড়িত কাউকেও।

গত বুধবার সিলেট থেকে ছেড়ে আসা কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিনরুম থেকে মৃত হরিণটি উদ্ধার করে রেলওয়ে পুলিশ। পরে পুলিশের কাছ থেকে বন বিভাগ হরিণটি বুঝে নেয়। এ ঘটনায় মৌলভীবাজার বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে।

হরিণ উদ্ধারের ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ছবি ও ভিডিওতে দেখা যায়, ঢাকাগামী কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনটি লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর থেমে আছে। এ সময় একজন দাড়িওয়ালা ও সাদা শার্ট পরা ব্যক্তি হাতে দা নিয়ে ট্রেনের দিকে ছুটে আসছেন। তার পেছনে আরও ৪-৫ জন লোক জবাই করা একটি হরিণ ধরে ট্রেনের ইঞ্জিনরুমে তুলছেন। পরে হুইসেল বাজিয়ে ট্রেনটি ছেড়ে যায়।

বন বিভাগের লোকজন ও পরিবেশবাদীদের ধারণা, হরিণটি কোনোভাবে বনের ভেতর দিয়ে চলা ট্রেনের ধাক্কায় আহত হয়েছিল। এ অবস্থায় ট্রেনের চালক কিংবা কর্মচারীরাই আহত হরিণটিকে জবাই করে ট্রেনে তোলেন।

এমন পরিস্থিতিতে আহত হরিণটিকে জবাই করার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তারা।

২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন অনুসারে, হরিণ হত্যা করলে সর্বোচ্চ ৩ বছরের কারাদণ্ড, ৩ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান আছে। আবার একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি হলে সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড, ৫ লাখ টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান রাখা হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবির ব্যক্তিদের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দা হাতে ছুটে আসা লোকটি রেলওয়ের কর্মচারী। তার নাম এনামুল হক সোহেল।

সোহেলের ভাষ্য, তিনি রেলওয়ের লাইন মেরামতের কাজ করেন। জবাই করা হরিণটি যিনি ঝুলিয়ে নিয়ে আসছিলেন তিনি কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনের সহকারী চালক। সঙ্গে থাকা অন্যরাও ওই ট্রেনের কর্মচারী।

সোহেলের বক্তব্য, তিনি ভানুগাছ থেকে শ্রীমঙ্গল পর্যন্ত লাইনের কাজ করেন। ওই দিন তিনি কালনীতে ছিলেন।

সোহেল বলেন, 'হঠাৎ বনের ভেতর ট্রেন থামিয়ে সহকারী চালক আমায় নিয়ে নেমে পড়েন। গিয়ে দেখি জবাই করা একটি হরিণ পড়ে আছে। পাশে রক্তাক্ত দা। পরে আমি দা হাতে নেই। হরিণটি কে জবাই করে রেখেছিল সেটা বুঝতে পারিনি।'

মৌলভীবাজারের সহকারী বন সংরক্ষক শ্যামল কুমার মিত্র বলেন, 'ময়নাতদন্তে হরিণটির গায়ে আঘাতের গুরুতর কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। সেক্ষেত্রে জবাই না করলে হরিণটি হয়তো বেঁচে যেত।'

এদিকে সিলেটের বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর দাবি, শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে পুলিশ হরিণটিকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করলেও শুরুতে তারা বিষয়টি বন বিভাগকে অবহিত করেনি। একজন সাংবাদিকের কাছ থেকে ঘটনাটি জানতে পেরে তারা রেলওয়ে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সে সময় তাদেরকেই পুলিশের জেরার মুখে পড়তে হয়।

রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, পুলিশের কাছ থেকে হরিণটি বুঝে নিয়ে তারা প্রাণীসম্পদ বিভাগকে দিয়ে এর ময়নাতদন্ত করিয়েছেন।

এই বন কর্মকর্তার ভাষ্য, হরিণটি কীভাবে আহত হলো, কারা এটাকে জবাই করল তা রেলওয়ে পুলিশ যথাযথভাবে তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে।

তিনি আরও বলেন, 'বন্যপ্রাণীদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে সর্বোচ্চ ২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চালানোর নির্দেশনা আছে। কিন্তু সে নির্দেশনা মানা হচ্ছে না।'

তিনি প্রশ্ন রাখেন, 'হরিণটিকে যদি মৃত অবস্থাতেই পাওয়া গিয়ে থাকে, তাহলে শুরুতেই কেন তা বন বিভাগকে জানানো হলো না? পুলিশও কেন একই কাজ করল?'

এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিটির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাফিউল ইসলাম পাটোয়ারী বলেন, 'মৃত হরিণ ঝুলিয়ে নিয়ে যাওয়ার একটি ছবি পেয়েছি। এদের চিহ্নিত করতে তদন্ত চলছে'।

Comments

The Daily Star  | English

CA accords reception to SAFF winning women's team, asks for written demands

During a reception ceremony at the State Guest House Jamuna in the morning today, Chief Adviser Professor Muhammad Yunus asked the players of the Bangladesh team that won the 2024 SAFF Women’s Championship in Nepal last week to submit a list of their demands in writing, assuring them of working on those in the coming days.

58m ago