‘অস্বাভাবিক জোয়ারে’ তলিয়ে গেছে নিঝুম দ্বীপ, ভেসে যাচ্ছে হরিণ

জোয়ারের পানিতে ভেসে যাওয়া হরিণকে উদ্ধার করছে স্থানীয় এক যুবক। ছবি: সংগৃহীত

মেঘনায় 'অস্বাভাবিক জোয়ারের' পানিতে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন ও জাতীয় উদ্যান তলিয়ে গেছে। বনে পর্যাপ্ত উঁচু জায়গা না থাকায় ভেসে যাচ্ছে হরিণ। জীবন বাঁচাতে হরিণগুলো লোকালয়ে কিংবা পার্শ্ববর্তী চরে আশ্রয় নিচ্ছে।

হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য জানান।

নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আফসার দিনাজ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত ৪-৫ দিন ধরে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে গোটা দ্বীপ তলিয়ে গেছে। দ্বীপের জাতীয় উদ্যান, ফসলি জমি ও শতাধিক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।'

এ ইউনিয়নে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নেই উল্লেখ করে চেয়ারম্যান আরও বলেন, 'বাঁধ না থাকায় জোয়ারে সময় মেঘনা নদীর কোল ঘেঁষা নিঝুম দ্বীপের গ্রাম ও ফসলি জমি ভেসে যায়। সেই সঙ্গে হরিণসহ অন্যান্য প্রাণী পানিতে তলিয়ে যায়।'

নিঝুম দ্বীপ। ছবি: সংগৃহীত

হরিণসহ নিঝুম দ্বীপের পর্যটন সম্ভাবনাকে টিকিয়ে রাখতে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানান তিনি।

বন বিভাগ সূত্র জানায়, ২০০১ সালে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার নিঝুম দ্বীপ ও জাহাজমারা ইউনিয়নের ১০টি চর নিয়ে নিঝুম দ্বীপ জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হয়। এ বনে বর্তমানে প্রায় ৫ হাজার হরিণ আছে।

বন বিভাগের নিঝুম দ্বীপ রেঞ্জ কর্মকর্তা সাইফুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত ১৪ জুলাই থেকে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫-৬ ফুট উঁচু জোয়ারে বাঁধবিহীন নিঝুম দ্বীপ তলিয়ে যাচ্ছে। সেই পানিতে মানুষের বসতবাড়ি ও গবাদি পশুর পাশাপাশি জাতীয় উদ্যানের হরিণের আবাসস্থল তলিয়ে যাচ্ছে।'

গত শুক্রবার উপজেলার সুখচর ইউনিয়নের নলচিরা রেঞ্জের চর জাগলায় ভেসে আসা হরিণের ছানা স্থানীয়রা উদ্ধার করে বনে ছেড়ে দেন বলে জানান তিনি।

স্থানীয়রা ডেইলি স্টারকে জানান, লোকালয়সহ অন্যত্র আশ্রয় নিতে গিয়ে বন্য কুকুর ও শিয়ালের আক্রমণের শিকার হচ্ছে নিঝুম দ্বীপের হরিণ।

হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত কয়েকদিনের অস্বাভাবিক জোয়ারে নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন ও জাতীয় উদ্যান পানির নীচে তলিয়ে গেছে। এর ফলে কিছু হরিণ সাঁতার কেটে পার্শ্ববর্তী চরে আশ্রয় নিয়েছে। বন বিভাগের লোকজন এ বিষয়ে সর্তক আছেন।'

বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (উপকূলীয় বন বিভাগ নোয়াখালী) মো. ফরিদ মিঞা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জোয়ারের পানির কারণে হরিণের আবাসস্থল তলিয়ে গেছে। কিছু হরিণ লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। স্থানীয়রা হরিণ দেখলে বন বিভাগকে জানাচ্ছে।'

হাতিয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অনিল দাস দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বেড়িবাঁধ বিহীন নিঝুম দ্বীপের অনেক গুলো ছোট-বড় মৎস্য খামারের ও পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এতে করে মাছ চাষিরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। তবে কী পরিমাণ খামার ও পুকুরের মাছ ভেসে গেছে তা আরও ২-৩ দিন পরে হিসেব করে বলা যাবে।'

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল বাসেত সবুজ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যে সব ইউনিয়নে বেড়িবাঁধ ভাঙা রয়েছে সেসব জায়গায় আউশ ধান ও আমনের বীজতলা পানির নীচে তলিয়ে গেছে। আউশ ধান কিছু দিন পানির নীচে থাকলেও তেমন ক্ষতি হবেনা। কিন্তু  আমনের বীজতলার অনেক ক্ষতি হবে। কয়েকদিন পর ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে সঠিক হিসেব বলা যাবে।'

পানি উন্নয়ন বোর্ড নোয়াখালী কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সী আমির ফয়সাল ডেইলি স্টারকে আজ সোমবার সকালে বলেন, 'জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে নিঝুম দ্বীপ এলাকায় স্বাভাবিকের চেয়ে আড়াই থেকে তিন ফুট বেশি পরিমাণ পানি থাকে। সোমবার সকালেও নিঝুম দ্বীপে তিন ফুট পানি রয়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Yunus meets Chinese ambassador to review China visit, outline next steps

Both sides expressed a shared commitment to transforming discussions into actionable projects across a range of sectors

4h ago