কক্সবাজার বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র: ৭ টারবাইন থেকে পাওয়া যাচ্ছে ১৫-২০ মেগাওয়াট

কক্সবাজার সদর উপজেলার বাঁকখালী নদীর খুরুশকুল উপকূলে বেসরকারি উদ্যোগে নির্মাণ করা হয়েছে এই বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্রটি। ছবি: মোকাম্মেল শুভ/স্টার

কক্সবাজার শহর ও শহর সংলগ্ন এলাকাগুলোর উঁচু কোনো জায়গায় উঠলেই চোখে পড়ে বিশালাকায় কিছু পাখার ঘূর্ণন। অসাধারণ সেই দৃশ্য দেখলে কেবল তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা করে। আরও কাছে গেলে ছবি তোলার ইচ্ছা আটকানো যায় না। সুবিশাল ওই পাখাগুলো দেখতে যেমন মনোমুগ্ধকর, তেমনি এর কাজ ও প্রযুক্তিও যে কাউকে মুগ্ধ করবে।

বড় বড় টাওয়ারের ওপর বসানো এমন সব পাখা ও এর ঘূর্ণন সৃষ্টি করছে বৈদ্যুতিক শক্তি। এই শক্তি উৎপাদনের জন্য আলাদা কোনো জ্বালানি খরচ নেই। বাতাসই এখানে এর জ্বালানি। বাতাস হলেই পাখা ঘোরে, উৎপাদিত হয় বিদ্যুৎ।

কক্সবাজার সদর উপজেলার বাঁকখালী নদীর খুরুশকুল উপকূলে বেসরকারি উদ্যোগে নির্মাণ করা হয়েছে এই বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্রটি। সেখানে বিশাল আকারের ১০টি টারবাইন এখন দৃশ্যমান। বেড়ানোর জন্য ইতোমধ্যে জায়গাটি একটি আকর্ষণীয় স্পটে পরিণত হয়েছে।

গত ২৫ মে এই বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শন ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, খনিজ ও জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। এখানে উৎপাদিত বিদ্যুৎ দিয়ে কক্সবাজারের চাহিদা পূরণ সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি।

কক্সবাজার বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ও বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক আব্দুল কাদের গনি জানান, পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদন শুরু করার পর থেকে এই বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১৫ থেকে ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে। কাজ শেষ হওয়া ১০টি টারবাইনের ভেতর ৭টি টারবাইন থেকে এই বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে।

আব্দুল কাদের গনি বলেন, 'বর্তমানে কক্সবাজার শহর ও শহর সংলগ্ন এলাকায় যে ৪৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা আছে তার কিছুটা এই বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ দিয়ে মেটানো হচ্ছে।'

বিদ্যুৎ বিভাগের এই প্রকৌশলীর ভাষ্য, গেল জুন মাসে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে মোট ৩০ লাখ কিলোওয়াট ইউনিটের বেশি বিদ্যুৎ পাওয়া গেছে।

তিনি জানান, এই প্রকল্পের আওতায় মোট ২২টি উইন্ড টারবাইন বসানো হবে। সবগুলো টারবাইন বসানো হলে এখান থেকে ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। বাতাসের নির্দিষ্ট গতিবেগে একেকটি টারবাইন থেকে সর্বোচ্চ ৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসবে।

আব্দুল কাদের গনি আরও বলেন, 'আগামী ডিসেম্বর নাগাদ ২২টি টারবাইনের সবগুলো চালু হলে কক্সবাজার শহর ও এর আশপাশের এলাকাগুলোর বিদ্যুতের চাহিদা মিটিয়ে বাকিটা জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হবে।'

কেন্দ্রের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মুকিত আলম খানের কাছ থেকে জানা যায়, বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ইউএস–ডিকে গ্রিন এনার্জি বাংলাদেশ লিমিটেড নামে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠান। এতে খরচ হচ্ছে ১১৬ দশমিক ৫১ মিলিয়ন ডলার।

তিনি বলেন, সদর উপজেলার খুরুশকুল, চৌফলদন্ডী, পিএম খালী ও পোকখালী- এ ৪ ইউনিয়ন মিলিয়ে বসানো হচ্ছে ২২টি টারবাইন। এর ভেতর ২টি টারবাইন স্ট্যান্টবাই থাকবে। টারবাইনগুলো যে টাওয়ারের ওপর বসানো সেগুলোর প্রতিটির উচ্চতা ৯০ মিটার। টারবাইনের প্রতিটি ব্লেড ৬০ মিটার লম্বা।

মুকিত বলেন, 'বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বাতাসের যে গড় গতি দরকার, প্রকল্প এলাকায় তার চেয়ে কখনো কখনো ৩ গুণ বেশি গতি পাওয়া যাচ্ছে।'

চীনের স্টেট পাওয়ার ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান উলিং পাওয়ার করপোরেশন লিমিটেড এই প্রকল্পে অর্থায়ন করছে বলেও জানান মুকিত।

বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার সেল-৩-এর উপ-পরিচালক ইমতিয়াজ আহমেদ ফরিদি বলেন, 'এই কেন্দ্রে উৎপাদিত প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের দাম হবে শূন্য দশমিক ১২ মার্কিন ডলার। চুক্তি অনুসারে কোম্পানি ২০ বছরের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে।

২০২২ সালের ৩১ মার্চ বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এই প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh 2025-26 budget

Budget to shrink amid fiscal strain

Bangladesh’s interim government is preparing to unveil a rare contractionary budget on June 2, driven by a sharp rise in interest payment that is crowding out fiscal space and forcing spending cuts.

12h ago