সেপ্টেম্বরের মধ্যে লোডশেডিং কমবে কথা দিলেও বাস্তবে কমেনি

প্রতীকী ছবি। স্টার ফাইল ফটো

সেপ্টেম্বর নাগাদ লোডশেডিং কমিয়ে আনা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছিল সরকার। তবে, রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য জায়গায় এখনো নিয়মিত লোডশেডিং হচ্ছে।

শিগগির লোডশেডিং কমবে না বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ ছাড়াও, গত ১ সপ্তাহ ধরে মধ্যরাতের দিকে বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। যদিও সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ঘোষিত লোডশেডিংয়ের দৈনিক সময়সূচিতে রাত ১১টার পর বিদ্যুৎ যাওয়ার কথা নয়।

তাপমাত্রা কমে না আসা পর্যন্ত পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই। এমন পরিস্থিতিতেই বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) আগামী ১৩ অক্টোবরের মধ্যে বিদ্যুতের নতুন দাম ঘোষণা করবে।

গত ১৮ মে এক গণশুনানিতে বিইআরসির একটি কমিটি বিদ্যুতের পাইকারি মূল্য ৫৭ দশমিক ৮ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করেছিল।

এ বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম. তামিম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের হাত থেকে মুক্তির প্রতিশ্রুতির পেছনে সরকারের হয়তো যুক্তি ছিল, বছরের এ সময় নাগাদ তাপমাত্রা কমে আসবে এবং বিদ্যুতের চাহিদাও সে অনুযায়ী কমবে।

তিনি বলেন, 'সরকার হয়তো এটাও আশা করেছিল যে পায়রা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে যে অসমাপ্ত সঞ্চালন লাইন, তার কাজ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু সেটাও হয়নি।'

রাতের লোডশেডিং প্রসঙ্গে বুয়েটের অধ্যাপক ম. তামিম আরও জানান, খুব সম্ভবত জ্বালানির খরচ বাঁচাতে বিপিডিবি মাঝরাতের দিকেও লোডশেডিং করছে।

সেপ্টেম্বরে পিক আওয়ারে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ১২ হাজার থেকে ১২ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে। এ সময় মোট চাহিদার চেয়ে ২ থেকে আড়াই হাজার মেগাওয়াট সরবরাহ ঘাটতি ছিল।

গত বুধবার নগর অঞ্চলে ১ হাজার ৪৭১ মেগাওয়াট ও পল্লী অঞ্চলে ১ হাজার ৬০৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি ছিল। ফলে দেশজুড়ে হাজারো মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় থাকতে বাধ্য হন।

বিপিডিবির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জুলাইয়েও চাহিদা ও সরবরাহের ঘাটতি একই পর্যায়ে ছিল। সে মাসেই কর্মকর্তারা পরবর্তী মাসগুলোতে যে লোডশেডিং হবে, তার ধারণা দেন।

বাড্ডার বাসিন্দা হামিদুর রহমান বলেন, 'মাঝরাতের বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে আমার ৪ বছর বয়সী সন্তানের ঘুম ভেঙে যাচ্ছে, ঘেমে যাচ্ছে।'

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত হামিদুর বলেন, 'গত ৩ দিন ধরে মাঝরাতের দিকে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট করে বিদ্যুৎ থাকছে না। আমি বুঝতে পারছি না, কেন অফিস ও কারখানা বন্ধ থাকার সময়ে এরকম থাকছে।'

'এর মধ্যে যদি আমাকে টাকাও বাড়তি গুনতে হয়, সেটা কোনোদিক দিয়েই যুক্তিসঙ্গত নয়', যোগ করেন তিনি।

পিডিবির মুখপাত্র শামীম হাসান জানান, বিদ্যুৎ বিভ্রাট পরিস্থিতির অবনতির জন্য আংশিকভাবে 'গত সপ্তাহের অস্বাভাবিক উষ্ণ আবহাওয়া' দায়ী। প্রচণ্ড গরমের কারণে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ব্যবহারের চাহিদা বেড়েছে।

ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষ (ডিপিডিসি) ও ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) প্রকাশ করা লোডশেডিংয়ের সময়সূচি ও পূর্বাভাস অনুযায়ী, ঢাকার বাসিন্দারা এখন দৈনিক ২ থেকে ৩ ঘণ্টা লোডশেডিং সহ্য করছেন।

তবে শহরের বিভিন্ন অংশের মানুষ জানিয়েছেন, বাস্তবতা এই পূর্বাভাসের চেয়েও অনেক খারাপ।

ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান জানান, গত সপ্তাহের কয়েকদিন তারা পিক আওয়ারে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম পেয়েছেন।

পূর্বাভাস ও প্রকৃত লোডশেডিংয়ের পার্থক্যের বিষয়ে ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাওসার আমীর আলী জানান, সময়সূচিতে রাতের সময়টাও অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে।

গ্যাস স্বল্পতাই দায়ী?

কাওসার আমীর আলী জানান, পিডিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়াতে না পারার পেছনে গ্যাসের স্বল্পতা একটি কারণ।

পেট্রোবাংলার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বুধবার জাতীয় গ্যাস গ্রিডে ৪৭ কোটি ঘনফুট আমদানিকৃত এলএনজি সরবরাহ করা হয়েছে, যেটা গত আগস্টে প্রতিদিন গড়ে ৫৪ কোটি ঘনফুট ছিল।

পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তা ডেইলি স্টারকে জানান, যতদিন পর্যন্ত সরকার স্পট মার্কেট থেকে আবারও এলএনজি না কিনবে, ততদিন পর্যন্ত সরবরাহের পরিমাণ ৪৭ থেকে ৫০ কোটি ঘনফুটের মধ্যে থাকবে।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান এর আগে সাংবাদিকদের জানান, কাতারের কাছে বাংলাদেশ এলএনজির সরবরাহ বাড়ানোর অনুরোধ করলেও ২০২৫ সালের আগে তারা বাড়াতে পারবে না বলে জানিয়েছে।

গত ৭ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী এক ব্রিফিংয়ে জানিয়েছিলেন, সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৩টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র চালু হলে লোডশেডিং থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পাওয়া যাবে।

তবে বাস্তবতা হলো, এখনো নতুন কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র চালু হয়নি। কবে হবে, সেটিও অনিশ্চিত।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

Palak admits shutting down internet deliberately on Hasina's order

His testimony was recorded by the International Crime Tribunal's investigation agency following a questioning session held yesterday

1h ago