বিপিসির অডিট আপত্তি ও অনিয়মে ‘স্তম্ভিত’ সংসদীয় কমিটি

বিপিসি

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) বিভিন্ন অনিয়ম ও অডিট আপত্তি নিয়ে 'স্তম্ভিত' সরকারি প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি।

আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সংসদীয় এই কমিটির বৈঠকে বিপিসির বিভিন্ন ক্রয় এবং অন্যান্য কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা হয়। 

বৈঠকে জানানো হয়, শিগগিরই জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হবে।

বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি আ স ম ফিরোজ গণমাধ্যমকে বলেন, 'বিপিসিতে স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা খুবই কম। অনিয়মের যা চিত্র তাতে আমরা শকড। কেনাকাটায় অনিয়ম আছে। অডিট আপত্তিও আছে। এসব আপত্তি ঠিকমত নিষ্পত্তি করা হয়নি। যাদের নাম ধরে অডিট নিষ্পত্তি করা হয়েছিল, সেগুলো তারা করেনি। দুদকেরও কিছু কথা তারা শোনেনি।'

তবে অনিয়ম প্রসঙ্গে রাষ্ট্র পরিচালিত প্রতিষ্ঠান বিপিসির বক্তব্য, 'বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্যে যথাযথভাবে পরিচালিত হচ্ছে। ফলে বিপিসিতে প্রাতিষ্ঠানিক অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই।'

কমিটির বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, '২০১২-১৩ অর্থবছরের  বিশেষ অডিট প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আর্থিক বছর শেষ হওয়ার পরেও বার্ষিক হিসাব চূড়ান্ত করেনি বিপিসি। যা আর্থিক শৃঙ্খলার পরিপন্থী।' 

অডিট দপ্তরের বক্তব্য, নির্ধারিত সময়ে বার্ষিক হিসাব চূড়ান্ত না করার দায় যাদের ওপর বর্তায়, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে হবে।

অডিট দপ্তর আরও জানায়, ২০১২-১৩ অর্থবছরে সংরক্ষণ সক্ষমতার বেশি জ্বালানি তেল আমদানি করায় জাহাজ ফ্লোটিংয়ে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করায় ৫০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়। একই অর্থবছরে ব্যাংকে জমাকৃত টাকা ব্যয় না করে জমার অতিরিক্ত ঋণ (ওভার ড্রাফট) নিয়ে ব্যয় করায় ২৪৮ কোটি ৯০ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। 

বিপিসির নিজস্ব তহবিলের অর্থ থাকা সত্ত্বেও ব্যাংক ঋণ নেওয়ায় সুদ বাবদ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে বাংলাদেশের মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের (সিএজি) অফিস সে সময় জানায়।

ওই অর্থবছরে সিএজি অফিস এক অডিট আপত্তিতে জানায়, অকার্যকর অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা বিভাগ এবং যথাযথ পর্যায়ের প্রত্যক্ষ তদারকির অভাবে বিপিসির অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে যা প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা ও দক্ষতাকে প্রভাবিত করেছে।

এদিকে আজকের বৈঠকে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে দেশে জ্বালানির মূল্য সমন্বয় করার জন্য সুপারিশ করা হয়। এছাড়া বিপিসির পরিশোধিত ও অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মজুদ সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং আপদকালীন সময়ে পর্যাপ্ত তহবিলের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাখার জন্য মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করা হয়।

বৈঠকে বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশের মতো বাংলাদেশে জ্বালানি তেল অপারেশনে অটোমেশন পদ্ধতি দ্রুত চালু করার সুপারিশ করা হয়। 

এছাড়া, কমিটি প্রাতিষ্ঠানিক প্রভিশনাল ও চূড়ান্ত হিসাব যথাসময়ে প্রণয়ন করে বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপনের সুপারিশ করে।

বৈঠকে কমিটির পক্ষ থেকে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাওয়া হয়। 

জবাবে বৈশ্বিক মূল্য বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সমন্বয় করতে এ দাম বাড়ানো হয়েছে বলে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

এ বিষয়ে কমিটির সভাপতি আ স ম ফিরোজ বলেন, 'জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে। আমরা দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চেয়েছি। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে সমন্বয় করে তারা দাম বাড়িয়েছে। না হলে তেল এদিক-সেদিক হওয়ার আশঙ্কা ছিল।'

সভাপতি আরও বলেন, 'দ্রুততম সময়ের মধ্যে মূল্য সমন্বয় করে দেওয়া হবে বলে মন্ত্রণালয় আমাদের জানিয়েছে।'

রাশিয়া থেকে সরকারি পর্যায়ে জ্বালানি তেল আমদানির চিন্তা করা হচ্ছে উল্লেখ করে কমিটির সভাপতি জানান, মন্ত্রণালয় রাশিয়া থেকে তেল আমদানির বিষয়ে আলোচনা চলছে। বেসরকারি পর্যায়ে কিছু প্রস্তাব এসেছে। তবে সরকার চাচ্ছে জি-টু-জি পদ্ধতিতে আমদানি করতে। 

তিনি বলেন, 'মন্ত্রণালয় আমদানির বিষয়ে ইতিবাচক অবস্থানে আছে। রাশিয়ার ক্রুড অয়েল রিফাইন করার প্রযুক্তি আমাদের নেই। এ কারণে রাশিয়া থেকে রিফাইন অয়েল আমদানি করা হবে বলে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।'

বিপিসির পরিশোধিত ও অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মজুদ সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে এবং আপদকালীন সময়ে পর্যাপ্ত তহবিলের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাখার জন্য মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করা হয়।

আ স ম ফিরোজের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটি সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান, ওমর ফারুক চৌধুরী, মাহবুব উল আলম হানিফ এবং জিল্লুল হাকিম বৈঠকে অংশ নেন।

Comments

The Daily Star  | English

US enters Israel-Iran war. Here are 3 scenarios for what might happen next

Now that Trump has taken the significant step of entering the US in yet another Middle East war, where could things go from here?

21m ago