কুড়িগ্রামে এক লাখেরও বেশি মানুষ বন্যাকবলিত

ব্রহ্মপুত্র নদের পানির উচ্চতা বেড়েই চলেছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। অবনতি হচ্ছে বন্যা পরিস্থিতির। দুর্গত এলাকার বাসিন্দারা নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। তাদের জন্য খোলা হয়েছে ৪০টি আশ্রয়কেন্দ্র। আর যারা আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে পারেননি তারা পড়েছেন খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে।

এই চিত্র কুড়িগ্রাম জেলার ব্রহ্মপুত্র তীরবর্তী এলাকাগুলোর। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয়ের তথ্য অনুসারে, এই মুহর্তে কুড়িগ্রামে বন্যাদুর্গত মানুষের সংখ্য এক লাখেরও বেশি।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য অনুসারে, নুনখাওয়া পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ১২ ঘণ্টায় ৪৮ সেন্টিমিটার বেড়ে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই সময়ে চিলমারী ও হাতিয়া পয়েন্টেও পানির উচ্চতা বেড়েছে। এরমধ্যে হাতিয়া পয়েন্টে তা বিপৎসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বেড়েছে কুড়িগ্রাম পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি।

পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলছেন, ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বাড়ার কারণ উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল। একই কারণে অব্যাহত আছে ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি। জেলার ৪৫০টি চরাঞ্চল ইতোমধ্যেই প্লাবিত হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কোনো ক্ষতি হয়নি। দুর্গতরা বাঁধের উপরেও আশ্রয় নিচ্ছেন।

কুড়িগ্রাম সদর উপজলোর চর ভগবতিপুরর এলাকার বাসিন্দা তোফাজ্জল হোসেন (৬০) জানান, তার ঘরের ভেতর এখন তিন থেকে চার ফুট পানি। নলকূপ ও শৌচাগার। পানিতে ভেসে গেছে ১০টি মুরগি  দুটি ছাগল। মঙ্গলবার রাত থেকে তারা শুকনা খাবার খেয়ে আছেন।। 

একই উপজলোর পাঁচগাছি গ্রামের কৃষক মতিয়ার রহমানের কাছ থেকে জানা গেল, তার আমনের বীজতলঅ ও সবজিখেত পানিতে ডুবে আছে। এলাকায় এখন তারা কলার ভেলায় চড়ে চলাফেরা করছেন।

উলিপুর উপজেলার হাতিয়া গ্রামে পানিবন্দী হোসনা বেগম (৫৫) বললেন, তাদের সবগুলো ঘরেই এখন পানি। গরু-ছাগল-হাঁস-মুরগি নিয়ে তারা এখন বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছেন। আছেন পলিথিনের ঝুপড়িতে। সরকারিভাবে ১০ কেজি চাল পেলেও তাদের দরকার শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির। 

ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা গ্রামের মজিবুর রহমান (৬০) পেশায় দিনমজুর। আশপাশের সব এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ায় দুই-তিনদিন ধরে কোনো কাজ নেই তার। ফলে খাবার কেনার টাকা জুটছে না তার। কোনো ত্রাণও পাননি তিনি।

ফুলবাড়ীর বড়ভিটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মিন্টু বলেন, তার ইউনিয়নে ৪০০ পরিবারের প্রায় দুই হাজার মানুষ এখন পানিবন্দী। তাদের জন্য ত্রাণ চেয়ে উপজেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করা হয়েছে।

সদর উপজেলার মোগলবাসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজার রহমান জানান, তার ইউনিয়নে দুর্গত পরিবারের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার। তাদের জন্য ত্রাণ সহায়তা হিসেবে কিছু চাল পাওয়া গেলেও শুকনো খাবার এখনো পাওয়া যায়নি। 

এদিকে উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নে ১০ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছেন বলে জানা গেল চেয়ারম্যান বাবলু মিয়ার কাছ থেকে। তিনি বলেন, অনেক দুর্গতকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে আনা হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে।

কুড়িগ্রামের জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন র্কমর্কতা  আব্দুল হাই সরকারের হিসাবে, এই মুহূর্তে জেলার চর ও নদীতীরবর্তী এলাকাগুলোর এক লাখেরও বেশি মানুষ বন্যাদুর্গত। তাদের নিরাপদে সরিয়ে আনার কাজ চলছে। দুর্গতদের ভেতর ১৭৬ মেট্রিক টন চাল ও ১০ লাখ টাকার শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। আরও ৫০০ মেট্রিক টন চালের পাশাপাশি শুকনো খাবার কিনতে ত্রিশ লাখ টাকা বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলছেন,জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির দিকে তারা সার্বক্ষণিক নজর রাখছেন। তাদের কাছে যথেষ্ট ত্রাণ আছে। পর্যায়ক্রমে সব বানভাসি মানুষের কাছে তা পৌঁছে দেওয়া হবে।
 

Comments

The Daily Star  | English

BNP struggles to rein in the rogues

Over the past 11 months, 349 incidents of political violence took place across the country, BNP and its affiliated organisations were linked to 323 of these

9h ago