রংপুরে বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার উপরে তিস্তার পানি, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে রংপুরের কাউনিয়ায় তিস্তার পানি বৃদ্ধি আবার বৃদ্ধি পেয়েছে। কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে প্রবাহিত হচ্ছে।
নদীতে পানি বাড়া-কমায় ভাঙনের মুখে পড়েছে উপজেলার নদী তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকা।
পাউবোর বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, আজ সোমবার বিকেল ৩টায় কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় তিস্তা নদীর পানি।
এর আগে, দুপুর ১২টায় বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার উপরে এবং সকাল ৯টায় ৫ সেন্টিমিটার ও ভোর ৬টায় ২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে।
অন্যদিকে, ডালিয়া ব্যারাজের পয়েন্টে সোমবার বিকেল ৩টায় পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫১ দশমিক ৭২ সেন্টিমিটার। এ পয়েন্টে বিপৎসীমা ধরা হয় ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার।
এদিকে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাউনিয়া উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকায় ডুবে গেছে বাদামসহ বিভিন্ন ফসলের জমি। তিস্তা নদীতে পানি বাড়া-কমায় ভাঙনের মুখে পড়েছে বিভিন্ন এলাকা। ভাঙনকবলিত পরিবারের অনেকে বসতঘর সরিয়ে নিচ্ছেন।
উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের গদাই ও পাঞ্জরভাঙ্গা গ্রামের কয়েকশো বসতভিটা ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে।
গদাই গ্রামের হাফেজ আলী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত বছর থেকে নদী ভাঙছে। কিন্তু ভাঙন রোধে জোরালো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ বছর প্রায় ২০০ বিঘা আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।'
তিস্তার ভাঙনের শিকার হওয়া মোজাম্মেল জানান, নদীর তীরবর্তী এলাকার ঘরে ঘরে তিস্তার ভাঙনের আতঙ্ক।
'তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের' সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অসময়ে তিস্তার ভাঙনে প্রতিবছর এক লাখ কোটি টাকার সম্পদ নদীগর্ভে চলে যায়। তিস্তা খনন, সংরক্ষণ ও মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন করা ছাড়া এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের বিকল্প নেই।'
জানতে চাইলে রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'উজানে ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের কারণে ডালিয়া ব্যারাজের পয়েন্টে তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ডালিয়া ব্যারাজের সব গেট খুলে রাখা হয়েছে।'
গত কয়েক দিনের তুলনায় সোমবার সকাল থেকে কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করেছে। এছাড়া কাউনিয়ায় তিস্তার ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
যোগাযোগ করা হলে কাউনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মহিদুল হক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তিস্তা নদীর বৃদ্ধি ও ভাঙনের বিষয়ে আমরা সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছি। কোথাও কোনো সমস্যা হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখন পর্যন্ত বন্যার আভাস পাওয়া যায়নি। তারপরও সরকারিভাবে সব ধরনের আগাম প্রস্তুতি নেওয়া আছে, যেন কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।'
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক নদীপাড়ের পরিস্থিতির খোঁজখবর রাখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
গত সপ্তাহে তিস্তার পানি বিপৎসীমার প্রায় ৫২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও, একদিন পরে পানি নামতে শুরু করায় পরিস্থিতির উন্নতি হয়।
Comments