জলোচ্ছ্বাসে পটুয়াখালীতে ভেসে গেছে ১৫ হাজার ঘেরের মাছ, প্রায় ৩০ কোটি টাকার ক্ষতি

জলোচ্ছ্বাসে পটুয়াখালী জেলার প্রায় ১৫ হাজার ঘের ও পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। ছবি: টিটু দাস/স্টার

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ব্যাপক জলোচ্ছ্বাসে পটুয়াখালী জেলার অন্তত ১৫ হাজার মাছের ঘেরের মাছ ভেসে গেছে। 

এর মধ্যে আছে ১৪ হাজার ১৫০টি পুকুর, ৭৭৮টি ঘের, ১২০টি কাঁকড়া ও কুচের ঘের। এ ছাড়াও, জেলার বিভিন্ন স্থানে ১০০টি মাছ ধরা নৌকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে

জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে আজ মঙ্গলবার এসব তথ্য জানা গেছে।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে রোববার ও সোমবারের বৃষ্টি, জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাসের কারণে মাছ চাষিদের প্রায় ৩০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, এসব ঘেরে সাদা মাছ, কাঁকড়া, চিংড়ি ও পোনা চাষ হতো। মাছের ক্ষতি ছাড়াও ঘেরের পাড় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আরও প্রায় এক কোটি টাকার অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে রাঙ্গাবালী উপজেলায় ৯ কোটি ৩ লাখ টাকা, কলাপাড়া ও গলাচিপায় ৬ কোটি টাকা করে, বাউফলে ৪ কোটি টাকা, দশমিনা উপজেলায় ২ কোটি, পটুয়াখালী সদর উপজেলায় ১  কোটি ৯ লাখ টাকা, মির্জাগঞ্জে ১ কোটি ও দুমকিতে ৩৫ লাখ টাকা।

রাঙ্গাবালী উপজেলার চর কাসেম এলাকার মৎস্য চাষী লুৎফর রহমান বাবুল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার ঘেরে বিভিন্ন প্রজাতির চিংড়ি মাছের চাষ করি। মাছের পোনা সংরক্ষণের জন্য দুটি পুকুরও আছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উচ্চ জলোচ্ছ্বাসে ঘের ও পুকুর প্লাবিত হয়ে কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে।'

কলাপাড়া উপজেলার কাউয়ার চর এলাকার মৎস্য চাষী জহিরুল ইসলাম বলেন, 'আমার এক একর জমির ওপর সাদা মাছের ঘের জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়ে কমপক্ষে ৫ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে।'

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে মৎস্য চাষিদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রাথমিকভাবে আমরা সোমবার দুপুর পর্যন্ত প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করেছি। ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ তালিকা ও পরিমাণ নিরুপণের কাজ চলছে।'

৩৮ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত

ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে দুমকির একটি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। ছবি: সোহরাব হোসেন/স্টার

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে প্রবল বাতাসে পটুয়াখালীতে প্রায় ৩৮ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৬ হাজার ৮২টি পুরোপুরি ও ৩১ হাজার ৬৯৪টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

মাথার ওপর ঠাঁই হারিয়ে এসব পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

পটুয়াখালী জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় ৮৪ হাজার ৫০০ পরিবারের ৩ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ এ ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

পটুয়াখালী সদর উপজেলার জৈনকাঠী ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহম্মাদ মহসিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কয়েকশত বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়ে লোকজন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এসব ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর মেরামত বা পুনর্নির্মাণ করতে সরকারের সহায়তা প্রয়োজন।'

পটুয়াখালী জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সুমন দেবনাথ ডেইলি স্টারকে জানান, জেলার ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘরের তথ্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ সাপেক্ষে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর মেরামতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Basement space was for elevator shaft

Fire service officials drained water from the basement of an adjacent building, addressing speculation about the existence of Aynaghar

9h ago