ঘূর্ণিঝড় মিধিলি

খুলনায় ভারী বৃষ্টিতে স্থবির জনজীবন, আমন ও সবজি খেত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা

ঘূর্ণিঝড় মিধিলি
বৃষ্টি-বাতাসে খেতে নুয়ে পড়া ধানগাছ। আজ শুক্রবার সকালে ডুমুরিয়ার আল আকসা নগর এলাকা থেকে তোলা। ছবি: হাবিবুর রহমান/স্টার

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের কারণে অগ্রহায়ণ মাসের শুরুতে হঠাৎ বৃষ্টির কারণে সদ্য পাকতে শুরু করা আমন ধান ও শীতকালীন সবজির খেত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন চাষিরা।

গভীর নিম্নচাপটি ইতোমেধ্যে 'মিধিলি' নামের ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে। এর প্রভাবে খুলনা ও এর আশপাশের এলাকাসহ উপকূলজুড়ে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত আছে। বিরতিহীন বৃষ্টির কারণে এসব এলাকার বাসিন্দাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার পশ্চিম বিলপাবলা গ্রামের কৃষক আব্দুল সাত্তার এই মৌসুমে তিন বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করেছেন। অন্য বছরের তুলনায় এবার বড় কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় না ঘটলেও হঠাৎ ভারী বৃষ্টিতে বেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন তিনি। কারণ আর কয়েক দিনের মধ্যেই তার খেতের ধান কাটার উপযোগী হয়ে ওঠার কথা।

আব্দুল সাত্তার বলেন, 'আর ১০-১৫ দিনের মধ্যেই আমন ধান পেকে যাওয়ার কথা। জমির মাটিতে পর্যাপ্ত জো (পানি ও আদ্রতা) আছে। এ সময় বৃষ্টিতে উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হয়। এছাড়া খেতের আইলে পাঁচ কাঠার মতো জমিতে লাল শাক, পালং শাক ‍ও মুলা চাষ করেছি। বৃষ্টির কারণে এগুলোর ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাও আছে।'

আজ শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় খুলনায় ২৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ছবি: স্টার

খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার খলসীবুনিয়া গ্রামের নিমাই চন্দ্র রায় এবার ধান লাগিয়েছেন ১৫ বিঘা জমিতে। তুলনামূলকভাবে খুলনার অন্য এলাকাগুলোর তুলনায় জায়গাটি অপেক্ষাকৃত নিচু হওয়ার কারণে এখানকার ধান খানিকটা পরে কাটা হয়।

মোবাইলে নিমাই চন্দ্র বলেন, 'এমনিতে বিলে এখনো ছয় থেকে ১০ ইঞ্চি পানি আছে। বৃষ্টি বেশি হলে এই পানি আরো বেড়ে গিয়ে ধানের ডগার ক্ষতি করবে। এতে পোকার আক্রমণের সম্ভাবনা তৈরি হয়। এছাড়া বাতাসে এরমধ্যে খেতের অনেক জায়গায় ধান গাছ নুয়ে পড়েছে। এতে ধান চিটা হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।'

খুলনা জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার নয় উপজেলায় ৯৪ হাজার ৭৯০ হেক্টর জমিতে এবার আমন আবাদ করা হয়েছে। এছাড়া প্রায় ৯০০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি ও এর বীজতলা আছে।

ডুমুরিয়া উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. ইনসাদ ইবনে আমীন বলছেন, এবার উপজেলার ১৫ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে দশ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে। দুয়েক দিনের বৃষ্টিতে ধান ও বীজতলার তেমন ক্ষতি না হলেও বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে সেই সম্ভবনা পুরোপুরিই থেকে যায়।

খুলনা আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ শনিবার পর্যন্ত এই বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানান। বাড়তে পারে বাতাসের গতিবেগ।

তিনি বলেন, 'গতকাল সন্ধ্যা ছয়টা থেকে আজ সকাল ৬টা পর্যন্ত খুলনায় ৮ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। আর সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ২৮ মিলিমিটার।'

খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অসময়ের বৃষ্টিতে সবজি চাষিরা সমস্যায় পড়বেন। বীজতলা যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে এর প্রভাব পড়বে সবজি চাষের ওপর।'

Comments

The Daily Star  | English
explanations sought from banks for unusual USD rates

Explanations sought from 13 banks for higher dollar rate

BB issued letters on Dec 19 and the deadline for explanation ends today

2h ago