কক্সবাজার

খোলা আকাশের নিচে ঘূর্ণিঝড় হামুনে ক্ষতিগ্রস্তরা, নেই ত্রাণ-গৃহ নির্মাণসামগ্রী

ঘূর্ণিঝড় হামুনের ধ্বংসযজ্ঞের পর আবারও ঘর তৈরি করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। ছবি: মোকাম্মেল শুভ

ঘূর্ণিঝড় হামুনের ধ্বংসযজ্ঞে মাটিতে মিশে যাওয়া বাড়ির বিভিন্ন সামগ্রী তুলে রাখছিলেন শারমিন আক্তার। তিনি ও তার স্বামী মিলে ভেঙেচুরে যাওয়া বাঁশের বেড়া, দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া টিন সংগ্রহ করে স্তূপ করছিলেন।

শারমিন দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপকূলীয় জেলা কক্সবাজারে ঘূর্ণিঝড় হামুন আঘাত হানার পর গত তিন দিন ধরে তিনি তার তিন সন্তানসহ শুধু লবণ দিয়ে ভাত খেয়েই জীবনযাপন করছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে কক্সবাজারের সমিতিপাড়া এলাকায় নিজের ভাঙা বাড়ির সামনে থেকে তিনি দ্য ডেইলি স্টার প্রতিবেদককে বলেন, 'গত তিন দিনে আমরা কোনো ত্রাণ পাইনি। বাড়িতে কোনো খাবার বা টাকাও নেই। প্রতিবেশীদের কাছ থেকে শুধু চাল ধার নিচ্ছি।' এসব কথা বলতে বলতে তিনি এক পর্যায়ে কেঁদে ফেলেন।

এখনো খোলা আকাশের নিচে বাস করছে অনেক পরিবার। মোকাম্মেল শুভ

তিনি বলেন, 'সরকার যদি আমাদের সাহায্য না করে, তাহলে আমরা আমাদের বাড়িঘর তৈরি করতে পারব না।'

একই এলাকার আরেক নারী আয়েশা খাতুন বলেন, 'কম ক্ষতিগ্রস্ত কিছু মানুষ ত্রাণ পেয়েছে কিন্তু যারা ঘূর্ণিঝড়ে সর্বস্ব হারিয়েছে তারা কিছুই পাচ্ছেন না।'

জনপ্রতিনিধিরা তাদের ঘনিষ্ঠদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করছে বলে অভিযোগ আয়েশা খাতুনের।

ঘূর্ণিঝড়ের শিকার আব্দুল কাদের বলেন, 'আমাদের টিন-বাঁশসহ নির্মাণ সামগ্রী দরকার কিন্তু টাকা নেই। আমরা এখন খোলা আকাশের নিচে দিন পার করছি।'

কক্সবাজারের সমিতিপাড়া এলাকায় প্রান্তিক মানুষের অন্তত ৩০০ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক শাহীন ইমরান।

ঘূর্ণিঝড় হামুন আঘাত হানার পর তিনবার এলাকাটি পরিদর্শন করে এ প্রতিবেদক দেখেছেন, অনেক বাড়ি-ঘর পুরোপুরি বিধস্ত হয়ে পড়েছে এবং মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছে।

জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় হামুনে মোট ৩৭ হাজার ৮৫৪টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৫ হাজার ১০৫টি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ৩২ হাজার ৭৪৯টি ঘর আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ৪ লাখ ৭৬ হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

প্রায় ৩৫০টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে গেছে এবং ২৩টি ট্রান্সফরমার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যপকভাবে ব্যাহত হয়েছে। মহেশখালী, কতুবদিয়া, চকরিয়া ও কক্সবাজার সদর উপজেলার একাংশে গত তিন দিন ধরে বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

কক্সবাজার সদর ও মহেশখালী উপজেলার দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান।

দুর্যোগ তাদের ধারণার চেয়ে অনেক বেশি মারাত্মক ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমরা ত্রাণ ও নির্মাণ সামগ্রীর জন্য ৫০ লাখ টাকা, ৫০ মেট্রিক টন চাল, এক হাজার বান্ডিল টিন এবং পাঁচ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করেছি। কিন্তু এই ত্রাণ অপর্যাপ্ত এবং কক্সবাজারের ঘূর্ণিঝড় দুর্গতদের জন্য আরও ত্রাণ বরাদ্দ করা হবে।'

 

Comments

The Daily Star  | English

Matarbari project director sold numerous project supplies

Planning Adviser Prof Wahiduddin Mahmud today said the Matarbari project director had sold numerous project supplies before fleeing following the ouster of the Awami League government on August 5.

1y ago