সন্ধ্যার পরে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে নিম্নচাপ, সারা দেশে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা
গাণিতিক মডেলের তথ্য অনুসারে পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার সমূহ সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর মনে করছে, সন্ধ্যার পরে গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। এর প্রভাবে আগামী ৭২ ঘণ্টায় সারা দেশে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
ইতোমধ্যে দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিম দিক থেকে বাতাস এসে গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি করছে। এর ফলে এদিন বিকেলে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি হয়েছে।
উপকূলের আরও কাছে গভীর নিম্নচাপ
আজ সোমবার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে (ক্রমিক নম্বর-৬) অধিদপ্তর জানিয়েছে, গভীর নিম্নচাপটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে এগিয়ে আসতে পারে এবং ঘণীভূত হতে পারে।
এদিন দুপুর ১২টায় গভীর নিম্নচাপটি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৫৫ কিলোমিটার ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৭১০ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে এবং মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি অব্যাহত আছে। ফলে উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্রবন্দরের ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
গভীর নিম্নচাপের কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার, যা ঝড়ো হাওয়া আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কেন্দ্রের কাছে সাগর উত্তাল থাকায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে এক নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত নামিয়ে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে এর নাম হবে হামুন। আমরা সমুদ্রবন্দরে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছি এবং নদীবন্দরে এক নম্বর সতর্ক সংকেত যেন কম সময়ে জেলে ভাইরা নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরে আসতে পারেন।'
একই পূর্বাভাস দিয়েছে ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর। আজ সোমবার সংস্থাটি জানিয়েছে, আজকের মধ্যেই পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরে থাকা গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলেও দুর্বল হয়ে স্থলভাগে গভীর নিম্নচাপ হিসেবে ২৫ অক্টোবর সন্ধ্যায় খেপুপাড়া ও চট্টগ্রামের মধ্যে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করবে।
ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তরের ঘূর্ণিঝড় সতর্কীকরণ বিভাগের বিজ্ঞানী আনন্দ কে দাস জানিয়েছে, আগামী ২৫ অক্টোবর ওড়িষ্যা, পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের উত্তর উপকূলীয় এলাকায় বঙ্গোপসাগর খুবই বিক্ষিপ্ত থাকতে পারে। এরপর ধীরে ধীরে উন্নতি হবে।
অন্যদিকে আরব সাগরে থাকা ঘূর্ণিঝড়টি দুর্বল হয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে অবস্থান করছে বলে জানানো হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। এতে বলা হয়, পশ্চিম-মধ্য আরব সাগরে অবস্থানরত শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় তেজ কিছুটা দুর্বল হয়ে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়ে ঘণ্টায় ১২ কিলোমিটার বেগে উত্তর-পশ্চিম দিকে এগোচ্ছে।
আজ সোমবার ঘূর্ণিঝড় তেজ সোকোত্রা (ইয়েমেন) থেকে প্রায় ২৩০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে, সালালাহের (ওমান) ২৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং আল গাইদাহর ২০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে অবস্থান করছিল।
পূর্বাভাস অনুসারে, এটি উত্তর-পশ্চিম দিকে এগিয়ে আগামীকাল ভোরে ইয়েমেন উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, সে সময় বাতাসের গতি থাকতে পারে ঘণ্টায় ১২৫ থেকে ১৩৫ কিলোমিটার। ঝড়ো হাওয়া আকারে এটি ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে।
Comments