ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং

হাতিয়ার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, হুমকিতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ

কমপক্ষে ৩০ হাজার হেক্টর আমন ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে হাতিয়া উপজেলা কৃষি অফিস। ছবি: সংগৃহীত

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এর প্রভাবে নোয়াখালী জেলার উপকূলীয় দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার ১১টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে কমপক্ষে ৩০ হাজার হেক্টর আমন ফসলের ক্ষতি হয়েছে এবং হুমকির মুখে আছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ।

হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সেলিম মিয়া সোমবার বিকেলে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারণে হাতিয়ার সঙ্গে রোববার থেকে সারা দেশের নৌযোগাযোগ বন্ধ আছে। ফলে হাতিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার যাত্রী আটকা পড়েছেন। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে স্থানীয় প্রশাসন ৬ নং সতর্ক সংকেত জারি করেছে।

হাতিয়া প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের আবহাওয়া পর্যবেক্ষক মো. আলাউদ্দিন বলেন, 'রোববার রাত থেকে হাতিয়া উপজেলার ওপর দিয়ে দমকা হাওয়া বইছে। সেই সঙ্গে অবিরাম বৃষ্টি হচ্ছে। দুর্যোগ মোকাবেলায় সোমবার সকালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি বৈঠক হয়েছে।ঘূণিঝড় সতর্কতা গত ২৪ ঘণ্টায় ১১৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ৩২ নটিকেল মাইল। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সকল প্রকার নৌযান নিরাপদ স্থানে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় জোয়ার শুরু হবে এতে ৪ থেকে ৫ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হওয়ার আশঙ্কা আছে।'

হাতিয়া উপজেলার নলচিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনসুর উল্লাহ বলেন, 'বাতাসের গতিবেগ অনেক বেড়ে গেছে। আমার ইউনিয়নে ৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ আছে। সোমবার সন্ধ্যায় জোয়ারের উচ্চতা বেশি হলে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ১২ হাজার মানুষের পানিবন্দি হওয়ার আশঙ্কা আছে।'

তমরুদ্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ উদ্দীন বলেন, 'আমার ইউনিয়নের ৯টি গ্রামের বেড়িবাঁধ এলাকার ৪টি পয়েন্ট ভেঙে পানি প্রবেশের আশঙ্কা আছে। এছাড়া ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ১ হাজার ৫০০ হেক্টর আমন ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে।'

বুড়িরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম বলেন, 'আমার ইউনিয়নের ৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধের বাইরে জোয়ার ও বৃষ্টির পানিতে ৩ হাজার একর আমন ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য এলাকায় সতর্কতামূলক মাইকিং করা হচ্ছে। কিন্তু, মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চাচ্ছেন না।'  

সোনাদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান বলেন, 'আমার ইউনিয়নে ৫০ হাজার মানুষ আছে। বৃষ্টির পানিতে ৬ হাজার একর আমন ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।'

হাতিয়া উপজেলার নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. দিনাজ উদ্দিন বলেন, '৮১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নে কোনো বেড়িবাঁধ নেই। ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগে নিঝুম দ্বীপের বাসিন্দারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন।'

হাতিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল বাছেত বলেন, 'হাতিয়া উপজেলায় চলতি আমন মৌসুমে ৭৩ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষ করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এর প্রভাবে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে সোমবার দুপুর পর্যন্ত ১৫-২০ হাজার হেক্টর আমন ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে। সোমবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত জোয়ার চলবে। এসময় জোয়ারের উচ্চতার ওপর ক্ষতির পরিমাণ নির্ভর করবে। আমন ধান ছাড়াও ২ হাজার ২০০ হেক্টর শাক-সবজির বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।'

পানি উন্নয়ন বোর্ড হাতিয়ার প্রকৌশলী জামিল আহমেদ পাটোয়ারী বলেন, 'হাতিয়ার মোট ১১০ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ আছে। এর মধ্যে কয়েকটি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ। রাতে জোয়ারের পর বিস্তারিত বলা যাবে।'

হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম মিয়া বলেন, 'সকাল থেকে অবিরাম বৃষ্টি হচ্ছে। বেড়িবাঁধের বাইরে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। হাতিয়ার বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে রাখাতে ২৪২টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সোমবার দুপুর পর্যন্ত ৪৫০ থেকে ৫০০ জন মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন।'

জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, 'ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এর সম্ভাব্য আঘাত মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন হাতিয়া, সুবর্ণচর ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। বিকেল ৫টা পর্যন্ত ৩টি উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ৪ হাজার ১৮৫ জন আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের মাঝে শুকনো খাবার ও ৪ লাখ টাকা নগদ অর্থসহায়তা দেওয়া হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় ১০২টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি।'

Comments

The Daily Star  | English

A transitional budget for troubled times

Govt signals people-centric priorities but faces tough trade-offs

2h ago