ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং

খুলনায় ৪০ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে

প্রস্তুত ৫৪৮টি আশ্রয়কেন্দ্র, ১১৬টি মেডিকেল টিম
খুলনা ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে খুলনার উপকূলীয় এলাকায় প্রবল বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাস বয়ে যাচ্ছে। ছবিটি খুলনার কয়রা উপজেলার মদিনা বাগ থেকে সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে তোলা। ছবি: হাবিবুর রহমান/ স্টার

 

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং থেকে রক্ষায় সোমবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টা পর্যন্ত খুলনার কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ ও বটিয়াঘাটায় ৪০ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন।

বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩০ মেট্রিক টন চাল ও ৫ লাখ টাকা। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণকক্ষ, গঠন করা হয়েছে ১১৬টি মেডিকেল টিম। প্রস্তুত রয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

বিকেল থেকে খুলনার কয়রা উপজেলার দুর্গত মানুষেরা আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়া শুরু করেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে ২ নং কয়রা গ্রামের দক্ষিণ মদিনাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় স্থানীয় মানুষজন ঘরবাড়ি ছেড়ে এই আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন।

খুলনার কয়রা উপজেলার মদিনা বাগ থেকে সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে তোলা। ছবি: হাবিবুর রহমান/ স্টার

সেখানে আশ্রয় নেওয়া, আব্দুল শেখ হাওলাদার (৭৩) ডেইলি স্টারকে বলেন, ঝড়ে যে গতি বাড়ছে তাতে বাড়ি থাকার আর উপায় নেই। আমার বাড়িও খুব ভালো না। তাই বাড়ির মায়া ত্যাগ করে পরিবারের ছয় সদস্য নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছি আজকে দুপুরে।

আশ্রয়কেন্দ্রে আসছেন স্থানীয় গ্রামের বাসিন্দারা। খুলনার ২ নং কয়রা দক্ষিণ মদিনাবাদ থেকে তোলা ছবি। ছবি: সংগৃহীত

আশ্রয় কেন্দ্রে শুনেছি খাবারের ব্যবস্থা করবে। কিন্তু এখনো সেরকম কোনো কিছু দেখছেন না বলে তিনি জানান।

তবে দুপুরে কিংবা বিকেলে অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে না এলেও সন্ধ্যার পর ঝড়ের গতি বেড়ে যাওয়ায় অনেকে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে যাচ্ছেন।

কয়রার মদিনাবাদ এলাকাসহ কয়রার শতশত মাছের ঘের ডুবে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় অধিবাসী, মাসুম হাওলাদার।

এদিকে, খুলনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা রনজিৎ কুমার সরকার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, খুলনায় ৪০৯টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত ছিল। সেইসঙ্গে স্কুল মিলিয়ে ৫৪৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। বিকেল থেকে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে মানুষ আসতে শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত ৪০ হাজার মানুষ চার উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন।

তিনি জানান, খুলনা জেলার ৪ উপকূল উপজেলাবাসীর জন্য জেলা প্রশাসন জি-আর এর ৩০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করেছেন। বিকেল থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে চাল বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়া চার উপজেলার জন্য ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

আশ্রয়কেন্দ্রে আসছেন স্থানীয় গ্রামের বাসিন্দারা। খুলনার ২ নং কয়রা দক্ষিণ মদিনাবাদ থেকে তোলা ছবি। ছবি: সংগৃহীত

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, খুলনা জেলার উপকূলীয় এলাকার ৫৪৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যার মধ্যে দাকোপে ১১৮টি, বাটিয়াঘাটায় ২৩টি, ডুমুরিয়ায় ২৫টি, কয়রায় ১১৮টি, পাইকগাছায় ১০৮টি, তেরখাদায় ২২টি, রূপসায় ৩৮টি, ফুলতালায় ২৫টি ও দিঘলিয়া উপজেলায় ৭১টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। যে কোনো দুর্যোগ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রগুলোয় মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন।

একইসঙ্গে জেলার প্রতিটি উপজেলায় ৫টি এবং প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে মোট ১১৬টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালগুলোর জরুরি বিভাগে সার্বক্ষণিক সেবা প্রদানের জন্য ডাক্তার, নার্স, ওষুধ ও অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদপ্তর সূত্র জানায়, কয়রা উপজেলায় ১০ মেট্রিক টন চাল, নগদ ২ লাখ টাকা, ৪০০ প্যাকেট শুকনো খাবার, পাইকগাছা উপজেলায় ৬ মেট্রিক টন চাল, ১ লাখ নগদ টাকা, ২০০ প্যাকেট শুকনো খাবার, দাকোপ উপজেলায় ১০ মেট্রিক টন চাল, দেড় লাখ টাকা, ৩০০ প্যাকেট শুকনো খাবার, বটিয়াঘাটা উপজেলায় ৪ মেট্রিক টন চাল, ৫০ হাজার নগদ টাকা ও ১০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রতি পরিবারে ১০ কেজি চাল, ১ কেজি ডাল, ১ লিটার সয়াবিন, ১ কেজি চিনি ও ১ কেজি লবণ বরাদ্দ করা হয়েছে।

এদিকে বিআইডব্লিউটিএ থেকে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। সিত্রাংয়ের প্রভাবে ক্ষয়-ক্ষতির ঝুঁকিতে রয়েছে খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলা।

Comments

The Daily Star  | English

'March to Jamuna': Police charge baton to disperse JnU students

At least 25 students were taken to DMCH after suffering injuries from baton charges or falling ill due to tear gas inhalation

29m ago