যে কারণে সিনেমা থেকে সরে গিয়েছিলেন রোজিনা

রোজিনা। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের সিনেমায় জনপ্রিয় নাম রোজিনা। ১৯৭৭ সালে তার অভিনীত 'রাজমহল' সিনেমা মুক্তি পায়। প্রথম সিনেমা সুপারহিট। তারপর তিন শতাধিক সিনেমা করেছেন। সামাজিক, পোশাকি, অ্যাকশন, রোমান্টিক—সব ধরনের সিনেমায় অভিনয় করে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। ভারতের তারকা অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীর বিপরীতেও রোজিনা অভিনয় করেছেন 'অবিচার' সিনেমায়।

তিন শতাধিক সিনেমার নায়িকা রোজিনা ১৯৯১ সালে চলচ্চিত্র থেকে সরে দাঁড়ান। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্রে আজীবন সম্মাননাপ্রাপ্ত নায়িকা রোজিনা সম্প্রতি কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে।

তিনি বলেন, নায়িকা হিসেবে প্রথম অভিনয় করি 'রাজমহল' সিনেমায়। রাজমহল ব্যাপকভাবে ব্যবসাসফল হয়েছিল। এক সিনেমা দিয়ে দর্শকরা আমাকে চিনে নেন। বলতে পারি, একটি সিনেমার পর আমাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। রাজমহল যিনি প্রযোজনা করেছিলেন, তিনি ছিলেন নতুন প্রযোজক। এটি সুপারহিট হওয়ার পর তিন-চারটি সিনেমা প্রযোজনা করেন তিনি।'

'একটা সময় শাবানার পাশাপাশি আমার নামটিও উচ্চারিত হতো। অনেক সিনেমা করেছি আমি। ৩০০ পেরিয়ে গেছে সংখ্যা। অনেক সিনেমা দর্শকনন্দিত হয়েছে। এমনও হয়েছে একসঙ্গে একাধিক সিনেমার শুটিং করেছি। কোনো অবসর ছিল না আমার। বিরতিহীনভাবে শুটিং করে গেছি। দিন-রাত শুটিং করেছি। কখনো ক্লান্ত হইনি।'

ছবি: সংগৃহীত

কী ধরনের সিনেমা করেছেন, জানতে চাইলে রোজিনা বলেন, সব ধরনের সিনেমা করেছি আমি। পোশাকি সিনেমায় যেমন সফল হয়েছি, সামাজিক সিনেমায়ও সফল হয়েছি। আবার অ্যাকশন ঘরানার সিনেমা করেও সফলতা পেয়েছি। প্রেম কিংবা ভালোবাসার সিনেমায়ও ব্যর্থ হইনি। 'রাজমহল' আমার জন্য সৌভাগ্য নিয়ে এসেছিল। তারপর থেকেই সাফল্য আমাকে ছুঁয়ে গেছে। আমার ক্যারিয়ারকে উজ্জ্বল করেছে।

সিনেমা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে এই নায়িকা বলেন, ১৯৯১ সালে হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিই আর সিনেমা করব না। সিনেমা থেকে অভিমান নিয়ে সরে যাইনি। কারও প্রতি কোনো অভিমান ছিল না। শুটিং করে সময় পাইনি, অভিমান করব কখন? অভিমান করার সময় পাইনি। সবসময় শুটিং নিয়ে থেকেছি। এখানে অভিমানের কোনো দাম নেই। গ্ল্যামার জগতে যতক্ষণ চাহিদা, ততক্ষণ দাম। চাহিদা নেই, দাম নেই।

'কাজটাকে ভালোবাসতাম বলেই এতদূর যেতে পেরেছিলাম। আমার সময়ে আমি অসম্ভব নাম করেছিলাম। এটা কিন্তু সিনেমার প্রতি ভালোবাসা, সাধনা ও দায়বদ্ধতার জন্যই সম্ভব হয়েছিল। কখনো ফাঁকি দিইনি। কাজ করেছি  এবং শিখেছি।'

রোজিনা জানান, ১৯৯১ সালে সিনেমা থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও তখন হাতে অনেক কাজ ছিল। সেসব সিনেমার শুটিং শেষ করতে করতে দুই বছর লেগে যায়। ১৯৯৩ সালে শেষ শুটিং করেন তিনি। তারপর লন্ডন চলে যান। মাঝেমধ্যে কলকাতায় এসে অভিনয় করে কিছুদিন থেকে চলে যেতেন। এভাবে কিছুদিন ওপার বাংলার সিনেমাতে কাজ করেছেন।

ছবি: সংগৃহীত

'দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অনেক সিনেমা যেমন করেছি, অনেক নায়কের বিপরীতে অভিনয় করেছি। ভারতের মিঠুন চক্রবর্তীর বিপরীতেও সিনেমা করেছি। সেই সময় মিঠুন চক্রবর্তীর "ডিস্কো ড্যান্সার" মুক্তি পেয়েছে। তিনি অসম্ভব জনপ্রিয় ভারতে। বাংলাদেশে আমিও তখন অনেক জনপ্রিয়। একদিন কক্সবাজার শুটিং করছিলাম। হঠাৎ হাসান ইমাম ভাই এসে বললেন, একটি যৌথ প্রযোজনার সিনেমা হবে, মিঠুন চক্রবর্তী থাকবে, তুই থাকবি। তখন আমার হাতে অনেক সিনেমা। শিডিউল বের করা কঠিন। হাসান ইমাম ভাইকে বললাম, অনেকগুলো সিনেমা করছি, পারব কী? দুই থেকে তিন মাস পর পারব। তিনি বললেন, আমরা তিন মাস পর কাজ শুরু করব। তোকে কাজটি করতে হবে।'

তিনি বলেন, 'তারপর কয়েক মাস কেটে যায়। শুটিং সময় চলে এলো। মিঠুন চক্রবর্তী ঢাকায় এলেন। আমরা কুয়াকাটা যাব। আমি কিছুটা নার্ভাস ছিলাম। কিন্তু, যখন মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে প্রথম দেখা হলো, আমি অবাক হলাম।  কেননা, দেখা হওয়ার পর তিনি বললেন, রোজিনা কখন থেকে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি। তুমি লেট করেছ কেন? তিনি বাংলায় বলেছিলেন। অনেক বিনয় নিয়ে বলেছিলেন। তার ব্যবহারে আমি মুগ্ধ হলাম। ভেবেছিলাম তিনি হয়তো হিন্দিতে কথা বলবেন। না, তিনি কথা বলেন বাংলায়। এরপর নার্ভাসনেস কেটে যায়। আমরা শুটিং করি। সেই সিনেমা সুপারহিট হয়।'

সবশেষ এই নায়িকা বলেন, অভিনয়জীবনে এইরকম অসংখ্য ঘটনা আছে। প্রতিটি সিনেমায় একটি করে গল্প জমে আছে। যতদিন বেঁচে থাকব গল্পগুলো জমে থাকবে।

Comments

The Daily Star  | English

Farewell of Pope Francis at Vatican

Applause rang out as the wooden coffin, inlaid with a large cross, was brought out of St. Peter's Basilica and into the sun-filled square by white-gloved, black-suited pallbearers.

2h ago