ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে দলীয়করণ হয়েছে: উজ্জ্বল

নায়ক উজ্জল। ছবি: স্টার

নায়ক উজ্জ্বল প্রথম সিনেমায় অভিনয় করেন কবরীর বিপরীতে। সাদাকালো যুগের সফল নায়কদের মধ্যে অন্যতম তিনি। প্রযোজক ও পরিচালনা করেও সফলতা পেয়েছেন।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক উজ্জ্বল।

দেশের চলমান পরিস্থিতি, এফডিসি, সেন্সর বোর্ড, অনুদান কমিটি, নতুন সরকারের কাছে প্রত্যাশা সহ নানা বিষয় নিয়ে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।

অনেকেই বলেন আগের এফডিসি আর নেই, আপনার মন্তব্য কী?

উজ্জ্বল: যেভাবে রাষ্ট্রের সব জায়গায় ক্ষত-বিক্ষত করেছে গত সরকার, এফডিসিও তার বাইরে নয়। রাষ্ট্র যেভাবে ধ্বংস করেছে, দেশের শিল্প-সাহিত্যের সমস্ত প্রতিষ্ঠান দলীয়করণ করে ধ্বংস করেছে। এফডিসি এখন চারণভূমি। এফডিসির ফ্লোরগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছে। অথচ ফ্লোরগুলো ঠিক রেখেই উন্নয়ন করা সম্ভব ছিল। প্রতিটি ফ্লোরে আমাদের অসংখ্য স্মৃতি জড়িয়ে আছে। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক দলীয়করণ হয়েছে।

সরকারি অনুদানে অনেক সিনেমা হয়েছে।

উজ্জ্বল: অনুদান সব সময় যোগ্য লোক পায়নি। এখানেও দলীয়করণ হয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে সিনেমা করেছে। কেন? এতে করে জনগণের টাকা নষ্ট হয়েছে।

৫০ বছরের বেশি সময় ধরে চলচ্চিত্রে অভিনয় করেও আজীবন সম্মাননা কিংবা একুশে পদক দেওয়া হয়নি আপনাকে।

উজ্জ্বল: আমি যদি চাইতাম তাহলে বিএনপি সরকারের সময় বড় বড় পুরস্কার নিতে পারতাম। আমি সেটা করিনি। এটা আমার মধ্যে নেই। কিন্তু, গত সরকার তা করেনি। অনুদান, সেন্সরবোর্ড, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, একুশে পদক, স্বাধীনতা পুরস্কার সবখানে দলীয়করণ হয়েছে। অথচ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রবর্তন করেছেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান।

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার কীভাবে প্রবর্তিত হলো?

উজ্জ্বল: সম্ভবত ১৯৭৮ সাল। বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট তখন জিয়াউর রহমান সাহেব। সেই সময় তিনি একদিন এফডিসিতে আসবেন। সবাই একটু অবাক হলেন কোনোরকম প্রস্তুতি নেই, সাজ সজ্জা নেই-তিনি আসবেন। শামসুল হুদা চৌধুরী তখন মন্ত্রী ছিলেন। আমাকে দিয়ে বলালেন যেন পরে অনুষ্ঠান করে আনানো হয়। কিন্তু, আমরা জানতে পারলাম প্রেসিডেন্ট এফডিসিতে আসার জন্য রওনা হচ্ছেন। তারপর তিনি এলেন। সেদিনই তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের ঘোষণা দিয়ে যান। এছাড়া, দুঃস্থ শিল্পীদের জন্য, অনুদানের জন্যও ঘোষণা দেন। কিন্তু গত সরকার তা মনে রাখেনি। একটিবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের সময় তার নাম নেওয়া হয়নি। এটা দুঃখজনক।

আপনি সরাসরি রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত। কেমন বাংলাদেশ চান এই মুহূর্তে?

উজ্জ্বল: বাংলাদেশে বিরাট বৈষম্য ছিল। সেই বৈষম্যের জন্যই ছাত্ররা আন্দোলন করল এবং সফল হলো। তরুণরা যেভাবে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চাইছে, আমিও তাই চাই। ছাত্ররা আলোর পথ দেখিয়েছে। বৈষম্যের কারণেই কিন্ত পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ হয়েছিল অনেক রক্তের বিনিময়ে। রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক-সবখানে বৈষম্য ছিল। সেই বৈষম্য চাই না। বৈষম্যহীন সুন্দর বাংলাদেশ দেখতে চাই।

কোটার অবসান ঘটিয়ে মেধাকে অগ্রাধিকার দিতে চেয়েছে ছাত্ররা। এর জন্য আবু সাঈদসহ অনেক তরুণ শহীদ হয়েছে। মেধাবীরা যেন তাদের মেধার বিকাশ ঘটাতে পারে নতুন বাংলাদেশে।

নতুন সরকারের কাছে আপনার প্রত্যাশা কী?

উজ্জ্বল: আমরা ভাগ্যবান-একজন নোবেলজয়ীকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে পেয়েছি। দুনিয়াব্যাপী তার গ্রহণযোগ্যতা আছে। স্বৈরাচার বিদায় করে এতবড় বিপ্লব ঘটিয়েছে ছাত্ররা। তারপর নতুন সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। তারা সংস্কার করবে। তারপর সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিয়ে জনগণের সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। নতুন সরকার নিয়ে আমি আশাবাদী, একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেবে।

দেশজুড়ে যেভাবে হানাহানি হচ্ছে, এটাকে কীভাবে দেখছেন?

উজ্জ্বল: দেখুন, ১৬ বছর দলীয়করণ করেছে। দমন পীড়ন করেছে। আন্তর্জাতিক মহলও এটা জেনে গেছে। এখন যা লুটপাট হচ্ছে, জনগণ পাহারা দিচ্ছে। কিছুদিন ধরে পুলিশ দায়িত্বে নেই। কিছু লোক সুবিধা নিচ্ছে, এসব করছে। ভাঙচুর, অগ্নিংযোগ, লুটপাটকে আমরা সমর্থন করি না। আমাদের দল থেকে স্পষ্ট করে হুঁশিয়ার করে দেওয়া হয়েছে। আমি চাই-ধর্ম-বর্ণ- নির্বিশেষে শান্তি বজায় থাকুক। আমরা সবাই বাংলাদেশি। সকল হানাহানির অবসান ঘটুক।

Comments