দর্শকরা আমার মাথার মুকুট: ডলি জহুর
স্বাধীনতার আগে মঞ্চ দিয়ে অভিনয় জীবন শুরু করেন ডলি জহুর। অনেক কালজয়ী টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করে শিল্পী জীবনকে সমৃদ্ধ করেছেন। অসংখ্য সিনেমায় অভিনয় করে প্রশংসিত হয়েছেন। সাড়া জাগানো এইসব দিনরাত্রি নাটকের নীলু ভাবি হিসেবে আজও দর্শকরা তাকে মনে রেখেছেন। প্রশংসিত চলচ্চিত্র শঙ্খনীল কারাগারে অভিনয় করে তুমুলভাবে আলোচিত হয়েছেন তিনি।
অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে এবারে আজীবন সম্মাননায় তার নাম শোনা যাচ্ছে। দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলেছেন গুণী অভিনেত্রী ডলি জহুর।
দ্য ডেইলি স্টার: শোনা যাচ্ছে, এবছর চলচ্চিত্রে অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে আজীবন সম্মাননা পাচ্ছেন আপনি?
ডলি জহুর: আমিও শোনেছি। অনেকেই অভিনন্দন জানাচ্ছেন। যৌথভাবে ইলিয়াস কাঞ্চন ও আমার নামের কথা শুনতে পেয়েছি। অভিনয় জীবনের জন্য এটি বড় ঘটনা। এজন্য সরকারকে অবশ্যই ধন্যবাদ জানাতে চাই। জানি না আমি এতবড় সম্মানের যোগ্য কিনা। তারপরও যারা যোগ্য মনে করেছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। আরও অনেক শিল্পী আছেন এটা পাবার যোগ্য। তাদেরকেও সম্মানিত করা হোক। এটুকু বলব আমি চলচ্চিত্রেরই একজন। আমি অভিনয় শিল্পী। সবার ভালোবাসায় আমি সিক্ত।
ডেইলি স্টার: আপনার কাছে সবচেয়ে বড় পুরস্কার কী?
ডলি জহুর: মানুষের ভালোবাসা সবচেয়ে বড় পুরস্কার। শিল্পী জীবনে এত এত মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি যা বলে শেষ করতে পারব না। দর্শকরা আমার মাথার মুকুট। রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি অবশ্যই বড় কিছু। কিন্তু দর্শকদের ভালোবাসাও উপেক্ষা করি না। সবসময় মনে করি দর্শকদের ভালোবাসা অনেক বড় কিছু। তাদের ভালোবাসা নিয়েই একজন শিল্পী সামনে এগিয়ে যান।
ডেইলি স্টার: ৫০ বছরেরও বেশি সময় আগে অভিনয় শুরু করেছিলেন, কখনো ভেবেছিলেন এত সম্মান, এত ভালোবাসা অর্জন করবেন?
ডলি জহুর: না। অভিনয় করতে ভালো লাগত, অভিনয় ভালোবাসতাম, সেজন্যই অভিনয় শুরু করেছিলাম দীর্ঘকাল আগে। তবে, দেশ স্বাধীনের পর অভিনয় শুরু করতে গিয়ে বার বার মনে হয়েছিল-একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি আর কী চাই? স্বাধীন দেশে কাজ করতেই যত আনন্দ।
ডেইলি স্টার: টেলিভিশন নাটকে সোনালী সময় পার করেছেন, এখনকার সময়ের সঙ্গে মেলালে কী মনে হয়?
ডলি জহুর: এখনকার সময়ের সঙ্গে মেলানো ঠিক না। সেজন্য এটা করি না। তখন বাংলাদেশে সবচেয়ে সেরা সেরা প্রযোজকরা নাটক প্রযোজনা করেছেন। সেরা নাট্যকাররা নাটক লিখেছেন। তা ছাড়া একটি মাত্র টেলিভিশন চ্যানেল ছিল। মানুষের বিনোদনের এতগুলো মাধ্যম ছিল না। সিনেমা ও টেলিভিশন ছিল বিনোদনের মাধ্যম। তারপরও সেই সময়ের নাটকগুলো মানুষ লুফে নিত। কালজয়ী নাটক হিসেবে স্বীকৃতি পেত।
ডেইলি স্টার: আপনার দীর্ঘ দিনের সহশিল্পী শর্মিলী আহমেদের সঙ্গে অনেক নাটকেও সিনেমায় অভিনয় করেছেন? তাকে নিয়ে কিছু বলুন?
ডলি জহুর: কী বলব তাকে নিয়ে? বলে কী শেষ করতে পারব? শর্মিলী দিদিকে কাছে পেলে মায়ের অভাব ভুলে যেতাম। তাকে কাছে পেলে মায়ের অভাব দূর হত। কত আপন ছিলেন। কত কাছের ছিলেন। আমি দিদি বলে ডাকতাম। তাকে হারিয়ে অনেক কেঁদেছি। এখনো তার জন্য কাঁদি। তার জন্য চোখের পানি ফেলি। একজীবনে কত স্মৃতি। মাথার ওপর থেকে ছায়া সরে গেছে তার মারা যাবার মধ্যে দিয়ে। আমি যখন অসুস্থ ছিলাম প্রতিদিন খোঁজ নিতেন। খাবার নিয়ে যেতেন। বলতেন, কোনো চিন্তা করবি না, ভালো হয়ে যাবি। এইভাবে কজন আপন করে নিতে পারে? আবার দিদি অসুস্থ হলেন, কিন্তু বেশিদিন বাঁচলেন না। কিছুই করতে পারলাম না তার জন্য। কিন্তু ভীষণ মিস করি। ভীষণ মনে পড়ে। তার আদর, তার ভালোবাসার কথা খুব মনে পড়ে ।
ডেইলি স্টার: শিল্পীর তৃষ্ণা কি মেটে?
ডলি জহুর: শিল্পীর তৃষ্ণা কখনো মেটে না। শিল্পীর তৃষ্ণা রয়ে যায়। একটি কাজ করার পর মনে হয় আরও একটি ভালো কাজ যদি করতে পারতাম! এভাবেই তৃষ্ণা থেকে যায় চিরদিন।
Comments