দিলীপ কুমার বাবার করা ‘দেবদাস’ দেখে প্রশংসা করেছিলেন: ঐন্দ্রিলা

ঢাকাই সিনেমার মহানায়ক বলা হতো বুলবুল আহমেদকে। অসংখ্য সিনেমায় অভিনয় করে দর্শকনন্দিত হয়েছিলেন তিনি। 'দেবদাস' করার পর কোটি ভক্তরা তাকে এই নামে ডাকতেন। এখনো 'দেবদাস' নামে ডাকা হয় তাকে। কালজয়ী সিনেমার নায়ক বুলবুল আহমেদের প্রয়াণ দিবস আগামীকাল ১৫ জুলাই।
দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে বুলবুল আহমেদকে নিয়ে কথা বলেছেন তার মেয়ে অভিনেত্রী ও উপস্থাপিকা ঐন্দ্রিলা আহমেদ।
তিনি বলেন, জীবনের শেষ দিনগুলোতে বাবা বাসায় ছিলেন। শরীর ভালো ছিল না। মন খারাপ করে থাকতেন। বলতেন, আমার সুখের পায়রাগুলো নেই। তখন মাঝেমধ্যে চাষী নজরুল ইসলাম আংকেল আসতেন। বাবা খুশি হতেন। কেরামত মওলা আংকেলও আসতেন। কিন্তু, একটা সময় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বাসায় ভিড় লেগে থাকত। শরীর খারাপ করার পর সেই ভিড় থাকত না। বাবা এটা মিস করতেন। এটা নিয়ে বলতেন। মন খারাপ করতেন।
'বাবা কিন্তু হুইল চেয়ারে করেও অভিনয় করেছেন। সারাজীবন কাজ করেছেন তো, কাজ ভালোবাসতেন। কাজ নিয়েই থাকতে চাইতেন। শেষ দিকে আমার সন্তানদের সঙ্গে সময় কাটাতেন। আমি ডকুমেন্টারি করেছিলাম বাবাকে নিয়ে। ওটা দেখে আনন্দ পেয়েছিলেন।'
ঐন্দ্রিলা বলেন, শেষদিকে বাবা যখন ঘরে পড়েছিলেন, তখন নাটক কিংবা সিনেমা দেখতেন না। বাবাকে বলতাম, কেন দেখবে না? বাবা বলতেন, ওগুলো দেখলে কষ্ট লাগবে। মন খারাপ হবে। ওই জীবনে তো ফিরে যেতে পারব না। তাই দেখতে চাইতেন না। আমার দুই সন্তানকে ট্যাবলেট ও ক্যাপসুল ডাকতেন। ওষুধ খেলে যেমন শরীর ভালো লাগে, ওদের দেখলেও ভালো বোধ করতেন। ওরা দুজন চোখের সামনে থাকলে খুশি হতেন।
'সত্যি কথা বলতে বাবা কাজ ভালোবাসতেন। একটি কাজ ভালো করার জন্য যা যা দরকার করতেন। শুটিংয়ের জন্য আলাদা শুটিং করতেন। আমি যখন বাবার পরিচালনায় অভিনয় করতাম, তিনি বলতেন যাও শপিং করে এসো।'

বুলবুল আহমেদের মেয়ে আরও বলেন, বাবা মহানায়ক সিনেমার শুটিং করেছিলেন নেপাল ও ব্যাংককে। দেশের বাইরে পুরো টিম নিয়ে সিনেমার শুটিং বাবার হাত ধরেই শুরু হয়েছিল। এরপর 'বিলেতি বিলাত' নামের একটি নাটকের পুরো শুটিং করেছিলেন লন্ডনে।
'বাবার সঙ্গে অভিনয় করার আনন্দ ছিল দারুণ। বাবার পরিচালনায় কাজ করেও অন্যরকম ভালো লাগত। কখনো কখনো বাবার সঙ্গে সহকারী পরিচালক হিসেবেও কাজ করেছি। বাবার নাটকের সেট ডিজাইনও করেছি। বাবাকে দেখতাম শুটিং শুরুর আগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্ক্রিপ্ট নিয়ে কাজ করতেন। অনেক দরদ দিয়ে কাজ করতেন। শুটিং শেষ করে রাতের পর রাত এডিটিং করতেন। যেদিন নাটক পরিচালনার জন্য শুটিং করতে যেতেন, বাসা থেকে পর্দা, চাদর নিয়ে যেতেন। কাজটি ভালো করার জন্যই এসব করতেন।'
ঐন্দ্রিলা বলেন, আমি তো শিশু শিল্পী হিসেবে অনেক কাজ করেছি। কিন্তু বড় হয়ে নায়িকা চরিত্রে প্রথম অভিনয় করি 'শুভা' নাটকে। নাম-ভূমিকায় আমি ছিলাম। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্পে 'শুভা' নাটকটি বাবা পরিচালনা করেছিলেন। নাটকটি আমাকে খুব পরিচিতি দিয়েছিল। তারপর থেকে সাহিত্য নির্ভর প্রচুর কাজের প্রস্তাব আসে।
'বাবার সঙ্গে শিশু বয়সে বিটিভিতে ও এফডিসিতে প্রচুর যেতাম। আমার খেলার জায়গা ছিল বিটিভি ও এফডিসি, এতটাই যেতাম বাবার সঙ্গে। বড় হয়ে যখন অভিনয় শুরু করি, নার্ভাস হইনি। এটাও বাবার জন্যই পেরেছি।'
এই অভিনেত্রী বলেন, বাংলাদেশের সিনেমা বিশ্বের বড় বড় উৎসবে অংশ নিত, সেখানে বাবার ডাক পড়ত। বাবা যেতেন। বাবা যেহেতু ভালো ইংরেজি বলতে পারতেন, সিনেমা নিয়ে কথা বলতে পারতেন, সেজন্য উনার ডাক পড়ত।
তিনি বলেন, বাবা যখন 'মহানায়ক' সিনেমায় অভিনয় করেন, তখন থেকে অনেকেই তাকে 'মহানায়ক' নামে ডাকতেন। বাবা যখন 'ভালো মানুষ' সিনেমা করেন, তখন তাকে অনেকেই 'ভালো মানুষ' বলে ডাকতেন। আবার, বাবা যখন 'দেবদাস' সিনেমায় অভিনয় করেন, তখন অসংখ্য মানুষ তাকে 'দেবদাস' নামেই ডাকতেন। এমনকি বাবা মারা যাবার পর অনেক পত্রিকা শিরোনাম করেছিল—চলে গেলেন মহানায়ক, চলে গেলেন ভালো মানুষ, চলে গেলেন দেবদাস। এসব যখন ভাবি, বাবার জন্য গর্ববোধ করি।
'বাবা দেবদাস সিনেমা করার পর খুব প্রশংসা পেয়েছিলেন। বাবার করা দেবদাস সত্যি অনেক সুন্দর, অনেক পছন্দের। শুনেছি, শাহরুখ খান দেবদাস করার আগে সবগুলো দেবদাস সিনেমা দেখেছিলেন। তিনি বাবার করা দেবদাসও দেখেছিলেন এবং প্রশংসা করেছিলেন। দিলীপ কুমারও বাবার করা দেবদাস দেখেছিলেন এবং প্রশংসা করেছিলেন।'
সবশেষে ঐন্দ্রিলা বলেন, আমি নায়ক বুলবুল আহমেদের মেয়ে, এটা আমার জন্য বড় পাওয়া। বাবার জন্য সবসময়ই গর্ববোধ কাজ করে।
Comments