পোশাকি সিনেমার রাজপুত্র নায়ক ওয়াসিম

দেশের পোশাকি সিনেমার রাজপুত্র ছিলেন নায়ক ওয়াসিম। অসংখ্য পোশাকি সিনেমায় অভিনয় করে সাড়া জাগিয়েছিলেন। তার বেশিরভাগ সিনেমা ছিল আলোচিত ও ব্যবসাসফল। সামাজিক ও অ্যাকশন ঘরানার সিনেমাও করেছেন সোনালি দিনের এই নায়ক। কিন্তু পোশাকি সিনেমা তাকে সবচেয়ে বেশি খ্যাতি দিয়েছে।
১৮ এপ্রিল সোনালি দিনের সিনেমার নায়ক ওয়াসিমের চলে যাওয়ার দিন।
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি ১৫২টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। ডাকু মনসুর, তুফান, শিরি ফরহাদ, সওদাগর, দুই রাজকুমার, নরম গরম, দি রেইন, বেদ্বীন, চন্দন দ্বীপের রাজকন্যা, রাজদুলারী, রসের বাইদানি, আবেহায়াত, ঈমান, শীষ নাগ, রাজনন্দিনী, মোকাবেলা, ওমর শরীফ, আলিফ লায়লা, শাহজাদী গুলবাহার, বিনিসূতার মালা, সোহাগ মিলন, নান্টু ঘটক, ধনদৌলত, বানজারান, রাজিয়া সুলতানা, ঘরে বাইরে, রাজকুমারী, হাসনাহেনা, মিস ললিতা, ডাকু ও দরবেশ, আলাল দুলাল, রঙিন সাগর ভাসা এবং মালেকা সুন্দরী—এগুলো তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমা।
ওয়াসিম তার সময়ের বেশিরভাগ সাড়া জাগানো নায়িকার বিপরীতে নায়ক হিসেবে পর্দায় সরব ছিলেন। ওয়াসিম-শাবানা জুটির অনেকগুলো আলোচিত সিনেমা রয়েছে। ওয়াসিম-অঞ্জু ঘোষ জুটির সিনেমাও দর্শকরা লুফে নিয়েছেন। তাছাড়া, ববিতা, অলিভিয়া, সুচরিতা, রোজিনাসহ অনেকের বিপরীতে তিনি সফল নায়ক ছিলেন।
আজও ওয়াসিম অভিনীত সোনালি দিনের সিনেমার গান মানুষের মুখে মুখে শোনা যায়।
ওয়াসিম নায়ক হিসেবে প্রথম অভিনয় করেন 'রাতের পর দিন' সিনেমায়। সেটি পরিচালনা করেন মহসিন। প্রথম সিনেমার নায়ক হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। তারপর কেবলই সামনে এগিয়ে গেছেন। এদেশের সেরা নায়কদের একজন ছিলেন তিনি।
'দ্য রেইন' সিনেমা তাকে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও পরিচিতি ও সম্মান এনে দেয়। এই সিনেমা বিশ্বব্যাপী মুক্তি পেয়েছিল। সেখানে নায়িকা ছিলেন অলিভিয়া।
'দি রেইন' মুক্তি পেয়েছিল ৪৬টি দেশে। এই সিনেমার একটি গান 'আয় রে মেঘ আয় রে' আজও জনপ্রিয়। এই সিনেমার আরেকটি গান এখনো মানুষের মুখে শোনা যায়। সেটি হচ্ছে—একা একা কেন ভালো লাগে না।
ওয়াসিম ও অলিভিয়া জুটির আরও একটি সিনেমার নাম 'বেদ্বীন'। এই সিনেমার সাড়া জাগানো একটি গান—কথা কেন তুই বলিস না।
ওয়াসিম-শাবানা অনেক দর্শকনন্দিত সিনেমা উপহার দিয়েছেন। 'দুই রাজকুমার' তার মধ্যে একটি। এই সিনেমার একটি জনপ্রিয় গান—চোর আমি ধরেছি।

ওয়াসিম ও শাবানা জুটির আরও একটি সাড়া জাগানো সিনেমা 'বানজারান'। এই সিনেমার একটি গান সেই সময়ে ব্যাপক সাড়া পড়েছিল। গানটি হচ্ছে—আমরা তো বানজারান। এই সিনেমার আরও দুটি গান তখন মানুষের মুখে মুখে ফিরত। গান দুটি হচ্ছে—হে মধুবনে কানে কানে এবং হাঁটু জলে নেমে কন্যা হাঁটু মাঞ্জন করে।
ওয়াসিম–শাবানার আরও একটি ব্যবসাসফল সিনেমা 'দোস্ত দুশমন'। এই সিনেমার একটি গান 'চুমকি চলেছে একা পথে' আজও জনপ্রিয়। এই জুটির আরও একটি হিট সিনেমা 'তুফান'। এই সিনেমার তুমুল জনপ্রিয় গান—হিরার চেয়ে দামি ফুলের চেয়ে নামি।
ওয়াসিম ও শাবানা জুটির 'শিরি ফরহাদ' সিনেমাও সফল একটি সিনেমা। এই জুটির আরও অনেক সিনেমা রয়েছে।
ওয়াসিম ও অঞ্জু ঘোষ অভিনীত অনেক সিনেমা দর্শকদের ভালোবাসা পেয়েছে। 'নরম গরম' সিনেমা তার মধ্যে একটি। এই সিনেমার জনপ্রিয় গান—এই বৃষ্টি ভেজা রাতে চলে যেও না। এই জুটির আলোচিত একটি সিনেমা 'চন্দন দ্বীপের রাজকন্যা'। একসময় এই সিনেমার একটি গান মানুষের মুখে মুখে ফিরত। গানটি হচ্ছে—বনমালী পরজনমে হইও রাধা। 'আমি তোমারি প্রেমের ভিখারি'—'চন্দন দ্বীপের রাজকন্যা'র আরও একটি জনপ্রিয় গান।
ওয়াসিম ও অঞ্জু ঘোষ জুটির সিনেমা 'সওদাগর'। এই সিনেমার জনপ্রিয় একটি গান—ওরে মন চোরা তুমি পড়ে গেছ ধরা।
ওয়াসিম জুটি হয়ে অভিনয় করেছেন নায়িকা রোজিনার বিপরীতে। 'রসের বাইদানি' সফল একটি সিনেমা। এই সিনেমার একটি গান—'তুমি আমার বারোমাসি গান' খুব সাড়া ফেলেছিল। আরেকটি গান—ও রসিয়া নাগর আমার মন পিঞ্জিরার মন।
ওয়াসিমের নায়িকা ছিলেন জবা চৌধুরীও। 'জিঘাংসা' সিনেমায় দুজনে জুটি হয়েছিলেন। এই সিনেমার তুমুল জনপ্রিয় একটি গান—ও অনুপমা ও নিরুপমা। 'ডাকু মনসুর' সিনেমাতেও জবা চৌধুরী অভিনয় করেছিলেন।
ওয়াসিম অভিনীত প্রথম সিনেমা 'রাতের পর দিন'। এই সিনেমায় তার নায়িকা ছিলেন ববিতা।
ক্যারিয়ারের শুরুতে তিনি ছিলেন একজন সহকারী পরিচালক। ১৯৭২ সালে 'ছন্দ হারিয়ে গেল' সিনেমায় সহকারী পরিচালক ছিলেন তিনি। এই সিনেমার পরিচালক ছিলেন এস এম শফি। সহকারী পরিচালকের পাশাপাশি ছোট্ট একটি চরিত্রে তিনি অভিনয়ও করেছিলেন।
বডি বিল্ডার হিসেবে ছাত্রজীবনে সুনাম কুড়িয়েছিলেন ওয়াসিম। ১৯৬৪ সালে বডি বিল্ডিংয়ের জন্য ইস্ট পাকিস্তান খেতাব অর্জন করেছিলেন।
অসংখ্য সুপারহিট ও পোশাকি সিনেমার রাজপুত্র ওয়াসিমকে এখনো বাংলাদেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে স্মরণীয় হয়ে আছেন, থাকবেন।
Comments