চাওয়ার কিছু নেই, দেওয়ার কী আছে সেটাই ভাবি: মামুনুর রশীদ

মামুনুর রশীদ। ছবি: শেখ মেহেদী মোরশেদ

নাট্যজন মামুনুর রশীদ। বাংলাদেশের নাটকে তার অবদান ব্যাপক। একাধারে তিনি নাট্যকার, নির্দেশক, অভিনেতা। আবার সংগঠকও। আরণ্যক নাট্যদলের প্রতিষ্ঠিতা তিনি। দেশ স্বাধীনের পর অল্প কজন মানুষ মঞ্চ নাটককে এগিয়ে নিয়ে যায়, তিনি তাদের মধ্যে অন্যতম। তার নাটক লেখা নাটক কেবল বাংলাদেশ নয়, ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশে মঞ্চায়ন হয়েছে।

পেয়েছেন একুশে পদকসহ অনেক সম্মাননা। চার বছর পর পর তার জন্মদিন আসে। আজ ২৯ ফেব্রুয়ারি তার জন্মদিন। গুণী অভিনেতা-পরিচালক ও নাট্যকার মামুনুর রশীদ তার ধানমন্ডির বাসায় বসে কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে।

দ্য ডেইলি স্টার: চার বছর পর পর আপনার জন্মদিন আসে, সেজন্য খারাপ লাগে না?

মামুনুর রশীদ: না, না। ভালোই লাগে। আমি তো ইতিবাচকভাবেই দেখি। সবাই অপেক্ষায় থাকেন। আমিও অপেক্ষা করি। এক ধরনের ভালো লাগা কাজ করে। প্রতি বছর হলে এতটা করত কি না জানি না। কিন্তু চার বছরের জন্য বেশ ভালোভাবেই করে। সেজন্য কখনো খারাপ লাগে না।

ডেইলি স্টার: এবার আপনার কততম জন্মদিন?

মামুনুর রশীদ: ১৯তম জন্মদিন! এবার ১৯ বছরে পা দিলাম! আসলে আমার ৭৬ বছর শেষ হলো। ৭৭ বছরে পা দেবো একদিন পর। বেশ কয়েক বছর আগে ভারতের কেরালায় একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। সেদিন আমার জন্মদিন ছিল। সেখানে বলেছিলাম আজ আমার ১৭তম জন্মদিন। সবাই আনন্দ পেয়েছিলেন। সেভাবেই বলতে চাই, এবার আমার ১৯তম জন্মদিন। আমার বয়স এখন ১৯ বছর।

ডেইলি স্টার: আপনার জন্মদিনকে ঘিরে আরণ্যক নাট্যদল ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো বেশ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে...

মামুনুর রশীদ: তা ঠিক। এটাও আমার জন্য অনেক আনন্দের। আমি অনেক খুশি। আরণ্যকসহ যারা এই কাজের সঙ্গে যুক্ত, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। তাদের প্রতি ভালোবাসা। তাদের প্রতি আমি ঋণী। মানুষের জীবনে ভালোবাসাটা খুব দরকার। জন্মদিন আসার কয়েকদিন আগে থেকেই নানান জায়গা থেকে শুভেচ্ছা পাচ্ছি, এটাও অনেক ভালোলাগার।

ডেইলি স্টার: আপনার জীবনের দর্শন কী?

মামুনুর রশীদ: মানুষ, সবার ওপর মানুষ সত্য তাহার ওপর নাই। আমি মানুষকে ভালোবাসি। মানুষের সান্নিধ্য ভালোবাসি। মানুষের কাছাকাছি থাকতে ভালোবাসি। যে কারণে একজীবনে প্রচুর বন্ধু-বান্ধব আমার। যেখানেই যাই মানুষের সঙ্গে মিশি। ছেলেবেলায় বাবা বলতেন, এত বন্ধু তোমার? আসলেই আমার অনেক বন্ধু। সেজন্যই আমার জীবনের দর্শন মানুষকে ভালোবাসা, মানুষের মাঝে থাকা, মানুষের জন্য কিছু করা। সবশেষে বলতে চাই, আমি মানুষ ভালোবাসি।

ডেইলি স্টার: ৭৬ বছর বয়সে এসেও লিখে যাচ্ছেন, অভিনয় করছেন, পরিচালনা করছেন...

মামুনুর রশীদ: আমি প্রতিদিন নতুন চিন্তা করি। মাথার মধ্যে নতুন নতুন চিন্তা ঢুকে। ভাবনার উদয় হয়। এখনো নিয়মিত পত্রিকার জন্য কলাম লিখি। নাটক লিখি। অভিনয় করি। পরিচালনাও করি মঞ্চের জন্য। প্রতি জন্মদিনে  নতুন নাটক লেখার চেষ্টা করি। এবারও লিখেছি। চিন্তার কথা বলছিলাম। এই যে পাহাড় কেটে ফেলা হচ্ছে, বালু তোলা হচ্ছে, পত্রিকায় দেখি বালু-খেকো, প্রকৃতি ধ্বংস করা হচ্ছে—এসব নিয়েও চিন্তা করি প্রতিনিয়ত। তারপর সেসব নিয়ে লেখার চেষ্টাও করি। এসব লিখে কী হবে জানি না। আদৌ কিছু হবে কি না তাও জানি না। কিন্তু আমরা একদিন থাকব না। আজ থেকে ১০০ কিংবা দেড়শ বছর পর হয়তো মনে করবে একদল লোক লিখেও প্রতিবাদ করেছিল।

ডেইলি স্টার: এই বয়সে এসে চাওয়ার কী আছে?

মামুনুর রশীদ: চাওয়ার কিছু নেই। দেওয়ার কী আছে সেটাই ভাবি। কী দিতে পারলাম মানুষকে-দেশকে, এসব নিয়ে ভাবি। আমার জীবনে অর্থের প্রতি, সম্পদের প্রতি কোনো লোভ ছিল না কোনোদিনও। টাঙ্গাইল শহরে একটি পৈত্রিক বাড়ি আছে। সেখানে অমার মা এখনো আছেন। এটাই বিরাট আশার কথা। যেখানেই যাই, মানুষ ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখে। মানুষ সম্মান করে। এটাই কম কী? যতদিন বাঁচি দিতে চাই। লেখার মাধ্যমে হোক, অভিনয়ের মাধ্যমে হোক, প্রতিবাদ করার মাধ্যমে হোক।

ডেইলি স্টার: চারদিকের নানান অস্থিরতা কতটা ভাবায়?

মামুনুর রশীদ: খুব ভাবায়। বিষণ্ণ করে তুলে। মানুষের অমানবিকতা খুব ভাবায়, কষ্ট দেয়। অস্থির করে তুলে। নানা অবক্ষয় আমাকে ভাবায়। তারপরও আমি আশাবাদী মানুষ। আশায় বুক বাঁধি। স্বপ্ন দেখি সুন্দরের।

Comments

The Daily Star  | English
explanations sought from banks for unusual USD rates

Explanations sought from 13 banks for higher dollar rate

BB issued letters on Dec 19 and the deadline for explanation ends today

2h ago