তারকা নয়, সাধারণ বাঙালি হয়ে বাঁচতে চেয়েছি: শবনম

শবনম। ছবি: সংগৃহীত

'আমি রূপনগরের রাজকন্যা, রূপের জাদু এনেছি'— এহতেশাম পরিচালিত হারানো দিন সিনেমার এই গানটিতে ঠোঁট মিলিয়ে হাজারও দর্শকের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন শবনম। রূপনগরের এই রাজকন্যা অভিনয়গুণে আজও দর্শকের হৃদয়ে আছেন।

১৭ আগস্ট ছিল কিংবদন্তী নায়িকা শবনমের জন্মদিন। ১৯৪৬ সালের এই দিনে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি।

জন্মদিন উপলক্ষে দ্য ডেইলি স্টারের কথা হয় শবনমের সঙ্গে। এফডিসি, পুরনো স্মৃতিসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন তিনি।

প্রথমেই আসে বাংলাদেশের সিনেমার আঁতুরঘর এফডিসি প্রসঙ্গ।

শবনম বলেন, 'এফডিসিতে দীর্ঘদিন যাই না। কয়েক মিনিটের জন্য গিয়েছিলাম বেশ আগে। ওই দিক দিয়ে গাড়ি নিয়ে যাচ্ছিলাম। তারপর মনে হলো একটু ভেতরে যাই। কত চেনা  জায়গা! কত প্রিয় জায়গা! সেই চেনা এফডিসি বদলে গেছে। আগের মতো শুটিংয়ের ব্যস্ততা নেই। পুরনো মানুষদের অনেকেই বেঁচে নেই। আমার ভেতরটা কেমন করে উঠে। একা একা কেঁদেছিলাম।

তারকা হয়ে বাঁচতে চাইনি,  সাধারণ বাঙালি হয়ে বাঁচতে চেয়েছি। সাধারণ মানুষ হয়ে বাঁচতে চেয়েছি। এজন্য কখনও অন্যকে দিয়ে বাজার করাই না। সব বাজার নিজে করি। আমি সিনেমায় অভিনয় করি বলে মাটিতে পা ফেলব না, তা কেন হবে?

শবনম। ছবি: সংগৃহীত

সারাজীবন মনে করেছি আমি বাঙালি। আমার বড় পরিচয় আমি একজন বাঙালি। পাকিস্তানে অসংখ্য সিনেমা করেছি। এটুকু বলতে পারি, পাকিস্তানে ৪ শিফটে শুটিং করেছি। একই দিনে একাধিক সিনেমার শুটিং করেছি। একটিবারের জন্যও কোনো সিনেমায় বাঙালি ঘরানার বাইরে পোশাক পরিনি।

পুরান ঢাকার কথা মনে পড়ে। আমাদের বাসা ছিল পুরান ঢাকায়। তখন ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন ছিল। ঘোড়ার গাড়িতে যাতায়াত করার সময় খটখট শব্দ হত। কী যে ভালো লাগত! সত্যিকারের ঢাকার প্রাণ তখনই ছিল। এখনো যেন কান পেতে ঘোড়ার গাড়ির খটখট শব্দ শুনতে পাই।'

জন্মদিনের প্রসঙ্গ টানতেই তিনি বলেন, 'মানুষের ভালোবাসা আমার জীবনের বড় প্রাপ্তি। কোটি কোটি মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। এইদিক থেকে অতৃপ্তি নেই।'

ষাটের দশকের প্রথম রোমান্টিক নায়িকা শবনম অভিনীত রাজধানীর বুকে সিনেমার গান 'তোমারে লেগেছে এত যে যে ভালো চাঁদ বুঝি  তা জানে' এখনো মানুষের মুখে মুখে ফেরে ।

'আয়নাতে ওই মুখ দেখবে যখন'–বহুল প্রশংসিত এই গানটিও শবনম অভিনীত সিনেমার গান । নাচের পুতুল নামের এই  সিনেমায় তার বিপরীতে ছিলেন রাজ্জাক।

শবনম। ছবি: সংগৃহীত

তার অভিনীত সিনেমার আরেকটি জনপ্রিয় গান  'মন যে দোলে বাঁশির সুরে'। সেই গানে রূপালি পর্দায় শবনম ও রহমানের দৃশ্যটি যেন ফিরিয়ে নিয়ে যায় সিনেমার স্বর্ণযুগে।

বাংলাদেশের প্রথম রোমান্টিক নায়িকা শবনম পাকিস্তানের সিনেমারও সফল  একজন নায়িকা । চলচ্চিত্র তারকা হিসেবে পাকিস্তানে ১৩ বার তিনি নিগার পুরস্কার পেয়েছেন। দীর্ঘ  ক্যারিয়ারে ১৮৫টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন শবনম। সবশেষ ১৯৯৯ সালে আম্মাজান সিনেমায় নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন।

একসময় শবনম-রহমান জুটি ছিল আলোচিত ও প্রশংসিত জুটি । স্বর্ণালি দিনের সিনেমার নায়িকা হিসেবে উজ্জ্বল হয়ে আছেন তিনি রূপালি পর্দায়। নায়করাজ রাজ্জাকের সঙ্গেও জুটি হয়ে অভিনয় করেছেন। তার কোনো সিনেমাই দর্শকদের হতাশ করেনি।

নায়িকা হিসেবে শবনমের প্রথম সিনেমা চান্দা । এহতেশাম পরিচালিত চান্দা ছিল উর্দু সিনেমা। নায়িকা হিসেবে তার প্রথম বাংলা সিনেমা হারোনো দিন । এই সিনেমার পরিচালকও এহতেশাম। হারানো দিন সিনেমায় অভিনয় করে অভাবনীয় সাড়া পেয়েছিলেন শবনম।

-

Comments

The Daily Star  | English

Nahid warns against media intimidation, vows stern action

The government will take stern action against those trying to incite violence or exert undue pressure on the media or newspapers, said Information Adviser Nahid Islam today

2h ago