১৫ বছরের সালতামামি

হাসিনার শাসনামলে অত্যধিক মার্চেন্ট ব্যাংক-ব্রোকারেজ হাউস অনুমোদনে ঝুঁকিতে পুঁজিবাজার

অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

গত ১৫ বছরে অসংখ্য বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজার বাজার ছেড়ে চলে গেছেন, খুব অল্প সংখ্যক ভালো কোম্পানি বাজারে তালিকাভূক্ত হয়েছে এবং পুঁজিবাজারের প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশিত মাত্রায় হয়নি। অথচ এই অস্থিতিশীল বাজারে মধ্যস্থতাকারীর লাইসেন্স ক্রমাগতভাবে দেওয়া হয়েছে।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা এভাবে মধ্যস্থতাকারী অনুমোদন দেওয়ায় বাজারে ভালো কোনো ফল বয়ে আনেনি। বরং শেয়ারবাজারে সেবার মানের পতন হয়েছে, এতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমেছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১৫ বছরে শেয়ারবাজারে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির সংখ্যা ১৪ থেকে বেড়ে ৬৭, মার্চেন্ট ব্যাংকের সংখ্যা ১৮ থেকে বেড়ে ৬৬ হয়েছে। একইভাবে, স্টক ব্রোকারেজ ফার্মের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪০২টি, যা ২০১০ সালে ছিল ৩৭০টি।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, 'রাজনৈতিক কারণে এই লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। অথচ উচিত ছিল বাজারের আকার বিবেচনা করে মধ্যস্থতাকারী অনুমোদন দেওয়া।'

তিনি মনে করেন, পরবর্তীতে মধ্যস্থতাকারীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা তীব্র হয়। তাই প্রতিযোগিতায় টিকতে তারা দাম কমাতে ও মানের সঙ্গে আপস করতে বাধ্য হয়েছে। আর এখন অনেকে টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছে।

উদাহরণস্বরূপ তিনি বলেন, 'পোর্টফোলিও ম্যানেজমেন্ট সেবা দেওয়া সত্ত্বেও মাত্র কয়েকটি মার্চেন্ট ব্যাংকের গবেষণা উইং আছে। অথচ এই সেবা দিতে গবেষণা থাকা আবশ্যক। এমন দৃশ্য বিদেশের ক্ষেত্রে প্রায় বিরল।'

তার ভাষ্য, 'শেয়ারবাজার যখন ধুঁকছিল, তখন নিয়ন্ত্রক সংস্থা ৬০টি নতুন ব্রোকারেজ ফার্মকে লাইসেন্স দিয়েছিল। কিসের ভিত্তিতে এসব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে তা আমার বোধগম্য নয়।'

শেষ পর্যন্ত এক ডজনেরও বেশি স্টক ব্রোকারেজ ফার্ম, সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি বা মার্চেন্ট ব্যাংক কোনো কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি।

সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে স্টক ব্রোকারেজ ফার্মের সংখ্যা বাড়লেও বেনিফিশিয়ারি ওনার অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ৩৪ লাখ থেকে ১৬ লাখে বা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।

সিএফএ সোসাইটি বাংলাদেশের সভাপতি আসিফ খান বলেন, 'শেয়ারবাজারে মধ্যস্থতাকারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া মানে নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং ব্যবস্থা আরও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়া।'

এ জন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) এখন থেকে সেকেন্ডারি মার্কেট ছাড়াও প্রায় ৬০০ মধ্যস্থতাকারী ও তালিকাভুক্ত কোম্পানির ওপর নজরদারি করতে হবে।

তিনি প্রশ্ন করেন, 'সীমিত জনবল দিয়ে এতগুলো প্রতিষ্ঠানকে সঠিকভাবে মনিটরিং কতটা সম্ভব?'

তিনি বলেন, 'বাজার সচল রাখতে বিএসইসি গত ১৪ বছর ধরে মার্জিন ঋণে নেতিবাচক ইকুইটির প্রভিশন বজায় রাখা থেকে অব্যাহতি দিয়েছিল। কিছু মধ্যস্থতাকারী দেউলিয়া হয়ে গেছে, তবুও তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যা পুরো সিস্টেমকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।'

মার্চেন্ট ব্যাংকের সংখ্যা নিয়ে তিনি বলেন, 'বাজারে প্রতিকূল অবস্থা চলতে থাকলে ভালো কোম্পানিকে আকৃষ্ট করা কঠিন হবে।'

মার্চেন্ট ব্যাংকের সংখ্যা তিনগুণ বেড়ে ৬৮ হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আইপিও অনুমোদন ধারাবাহিকভাবে কমেছে।

বিএসইসির তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে মোট ১২৭টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে।

কোম্পানিগুলোর বাজারে তালিকাভুক্তিতে নিরুৎসাহের জন্য তিনি বর্তমান আইপিও মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি, কর হারের পার্থক্য না থাকা, সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ ও কর ফাঁকির সংস্কৃতিকে দায়ী করেন।

এদিকে, মিউচুয়াল ফান্ডের প্রতি বিনিয়োগকারীদের তেমন আস্থা নেই, যা সম্পদ ব্যবস্থাপক বৃদ্ধি সত্ত্বেও এই খাতকে এগিয়ে নিতে পারেনি। আইডিএলসির তথ্য অনুযায়ী, ব্যবস্থাপনার আওতায় থাকা মোট সম্পদের পরিমাণ মাত্র ১৪ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা, যা মোট বাজার মূলধনের ২ শতাংশেরও কম।

ইউসিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ রাশেদুল হাসান বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেওয়ার মাধ্যমে যোগ্য বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বেড়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেই শুধুমাত্র আইপিও আবেদনে নিয়োজিত আছে এবং কোটা ভোগ করেছেন।

'এসব বিনিয়োগকারী অনেক সময় সিন্ডিকেটের অংশ হয়ে যায়, ফলে বাজার ব্যবস্থা বিঘ্নিত হয়।'

(সংক্ষেপিত: পুরো প্রতিবেদনটি পড়তে ক্লিক করুন Too many stockbrokers, asset managers approved during Hasina's regime এই লিংকে।)

Comments

The Daily Star  | English

Students suffer as NCTB fails to deliver books

Only 37% of 40.15cr textbooks distributed till first half of Jan

12h ago