শীর্ষ তিন মোবাইল অপারেটরকে ১৫ লাখ টাকা জরিমানা বিটিআরসির

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন, বিটিআরসি, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার, আইএসপি,

বিধি লঙ্ঘন করায় গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংককে ১৫ লাখ টাকা জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি)।

বিটিআরসির নথি অনুযায়ী, গ্রাহকদের প্রতিদিন তিনটির বেশি প্রচারমূলক এসএমএস পাঠানোর জন্য প্রতিটি অপারেটরকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা দিতে হবে।

গত বছর ডেটা ও অন্যান্য প্যাকেজ সম্পর্কিত নির্দেশনায় বিটিআরসি বলেছিল, মোবাইল অপারেটররা প্রতিদিন তিনটির বেশি প্রচারমূলক এসএমএস পাঠাতে পারবে না।

বিটিআরসি ও অপারেটরদের মধ্যে কয়েক মাস ধরে যুক্তি-তর্ক হওয়ার পর গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংককে জরিমানা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বিটিআরসির যুক্তি, প্রতিদিন তিনটির বেশি প্রচারমূলক এসএমএস গ্রাহকদের মানসিকভাবে হয়রানির কারণ।

অপারেটরদের দাবি, হ্যান্ডসেট, নিষ্ক্রিয় সিম ও অন্যান্য কারণে গ্রাহকদের কাছে এসএমএস সরবরাহের হার ৭০ শতাংশের কম হওয়ায় প্রতিদিন তিনটির বেশি এসএমএস পাঠানো প্রয়োজন হয়।

তারা আরও বলছে, নতুন পণ্য, পরিষেবা ও এআইচালিত অফার সম্পর্কে সরাসরি গ্রাহকদের জানানোর স্বার্থে প্রতিদিন তিনটি প্রচারমূলক এসএমএস পাঠানো তাদের জন্য অত্যাবশ্যক।

বিটিআরসি গত বছরের অক্টোবরের শেষের দিকে গ্রাহকদের প্রতিদিন তিনটির বেশি এসএমএস পাঠানোর বিষয়ে গ্রামীণফোনকে প্রথম সতর্ক করেছিল এবং চলতি বছরের এপ্রিলে ব্যাখ্যা চেয়েছিল।

জবাবে, সিস্টেমের সীমাবদ্ধতা, গ্রাহক হ্যান্ডসেট সমস্যা এবং অন্যান্য কারণে প্রতি গ্রাহকের কাছে এসএমএস সরবরাহের হার গড়ে প্রায় ৬৮ শতাংশ বলে জানায় গ্রামীণফোন।

তারা আরও জানায়, নিষ্ক্রিয় গ্রাহকদের ক্ষেত্রে এই হার ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কম হতে পারে। তাই, গ্রাহকরা তিনটি এসএমএস পেয়েছেন, সেটা নিশ্চিত করতে তিনটির বেশি এসএমএস পাঠাতে হয়।

বিটিআরসি গত বছর বাংলালিংককে সতর্ক করেছিল এবং চলতি বছরের মে মাসে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চায়।

এর প্রতিক্রিয়ায় অপারেটরটি জানায়, প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ থাকার পরও তারা দৈনিক প্রচারমূলক এসএমএস পাঠানো সীমিত করার উদ্যোগ নিয়েছে।

তাদের যুক্তি, তিনটি এসএমএস পাঠানোর সীমাবদ্ধতা থাকলে গ্রাহকের চাহিদা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে নতুন পরিষেবা ও পণ্যের প্রচার করায় বাধা তৈরি হয়।

তারা জানায়, বাংলালিংকের বেশিরভাগ গ্রাহকই নন-স্মার্টফোন ২জি ডিভাইস ব্যবহারকারী। ফলে, ডিজিটাল প্রচারণার তথ্য তাদের কাছে পৌঁছায় না।

তাই, প্রান্তিক ও নন-স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের কাছে তথ্য পৌঁছানোর কার্যকর উপায় হিসেবে গ্রাহকদের এসএমএস পাঠানোর ওপর অনেক বেশি নির্ভর করে বাংলালিংক।

বাংলালিংকের যুক্তি, প্রতিদিন সর্বোচ্চ তিনটি এসএমএস পাঠানোর সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া বৈষম্যমূলক এবং গ্রাহকরাও উপযুক্ত পণ্য সম্পর্কে জানার অধিকার থেকে বঞ্চিত হন।

গত বছরের অক্টোবরের শেষের দিকে এ বিষয়ে রবিকে সতর্ক করা হয় এবং ওই বছরের নভেম্বরে গ্রাহকদের কাছে প্রতিদিন তিনটির বেশি এসএমএস পাঠানোর ব্যাখ্যা চাওয়া হয়।

রবি তাদের জবাবে জানিয়েছে, পরিষেবার বৈচিত্র্য, পণ্য নির্বাচন ও এআইভিত্তিক নোটিফিকেশনের জন্য প্রচারণামূলক এসএমএস পাঠানো অপরিহার্য।

তারা জানায়, রবির এসএমএস প্ল্যাটফর্ম ডেটা ও ভয়েস প্ল্যাটফর্মগুলো থেকে আলাদাভাবে কাজ করে। ফলে, গ্রাহকদের পাঠানো এসএমএস সংখ্যা সীমাবদ্ধ করা তাদের জন্য প্রযুক্তিগতভাবে কঠিন।

ডু নট ডিস্টার্ব (ডিএনডি) পরিষেবা চালু থাকার পরও এমন ছোট বিষয়েও বিটিআরসির প্রতিক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা।

মোবাইল অপারেটররা বিটিআরসির নির্দেশনা মেনে বেশ কয়েক বছর আগে প্রচারমূলক এসএমএস বন্ধ করার সুযোগ দিয়েছে গ্রাহকদের।

গ্রাহকরা শর্ট কোড ডায়াল করে ডু নট ডিস্টার্ব পরিষেবা সক্রিয় করতে পারেন, যার ফলে তাদের মোবাইলে অপারেটরদের প্রচারণামূলক এসএমএস আসবে না। এর জন্য গ্রামীণফোন থেকে *১২১*১১০১#, বাংলালিংক থেকে *১২১*৮*৬# এবং রবি ও এয়ারটেল থেকে *৭# ডায়াল করতে হবে।

টেলিকম বিশেষজ্ঞ আবু নাজাম এম তানভীর হোসেন মনে করেন, সুশাসনের জন্য আইনের কঠোর প্রয়োগ অপরিহার্য। তবে, সেই আইনও হতে হবে যৌক্তিক ও বাস্তব।

তিনি বলেন, 'প্রচারণামূলক এসএমএস বিরক্ত লাগলে গ্রাহক সেটা বন্ধ করে দিতে পারেন।'

কাজেই গ্রাহকদের এসএমএস পাঠানোর মতো কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নজরদারি করার চেয়ে অপারেটরদের পরিষেবার মান ও প্রতিযোগিতামূলক আচরণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।

রবি আজিয়াটা পিএলসির চিফ করপোরেট ও রেগুলেটরি অফিসার শাহেদ আলম বলেন, 'বিটিআরসি বর্তমান ডেটা নির্দেশিকায় পরিবর্তন আনছে। কাজেই পূর্ববর্তী নির্দেশিকার ওপর ভিত্তি করে কোনো জরিমানা করা হলে সেটা সংশোধনের সুযোগ রয়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English
What is Indian media’s gain in branding us as a Hindu-hating country?

What is Indian media’s gain in branding us as a Hindu-hating country?

What has shocked me is their refusal to fact-check what they are writing, broadcasting or televising—a basic duty of any journalist.

12h ago