বাংলাদেশে নারীর কর্মসংস্থান বাড়লে অর্থনীতি বাড়বে ২৯ শতাংশ: বিশ্বব্যাংক

ছবি: এমরান হোসেন/স্টার ফাইল ফটো

বাংলাদেশে আরও বেশি সংখ্যক নারীর কাজের সুযোগ হলে পণ্য, সেবা ও কৃষি খাতে উৎপাদন ২৯ শতাংশ পর্যন্ত বাড়াতে পারে বলে ধারণা করছে বিশ্বব্যাংক।

সংস্থাটির মতে, বাংলাদেশে শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা বেশি হওয়ায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এই দেশে প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি হবে।

গত সপ্তাহে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া উন্নয়ন হালনাগাদ তথ্যে বলা হয়েছে, যদি শুধু উৎপাদন খাতে আরও বেশি সংখ্যক নারী কাজ পান, তাহলে বাংলাদেশে উৎপাদন ২১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।

বাংলাদেশে পোশাক শিল্পে অগ্রগতি সত্ত্বেও বৃহত্তর উৎপাদন খাতে নারী-পুরুষের ব্যবধান অনেক বেশি বলে প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, ২০২২ ও ২০২৩ সালে বাংলাদেশে শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণের হার ৩৭ শতাংশেই স্থির হয়ে আছে।

সরবরাহের সীমাবদ্ধতা, নিয়ন্ত্রণমূলক আইন ও রক্ষণশীল সামাজিক রীতিনীতিকে আরও বেশি নারীর কাজে যোগ দেওয়ার পেছনে বাধা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

অর্থনীতিবিদরা বিশ্বব্যাংকের এই প্রক্ষেপণের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেছেন, দেশের পোশাক শিল্পে মূল শক্তি নারী। তবে, তারা আরও কিছু কারণকে চিহ্নিত করেছেন যা বেশি সংখ্যক নারীকে কাজে যোগ দিতে নিরুৎসাহিত করে।

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নিয়োগকর্তারা প্রায়ই নারীদের কাজে নিতে দ্বিধায় থাকেন। অনেক প্রতিষ্ঠানে এখনো নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ নেই।'

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশে যদি আরও বেশি সংখ্যক নারী কৃষি খাতে যোগ দেন, তবে শ্রম উৎপাদনশীলতা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি কর্মস্থলে লিঙ্গ বৈষম্য কমবে।

লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতে পারলে সেবা খাতে লাভের সম্ভাবনা ৮ দশমিক ১২ শতাংশ।

সেলিম রায়হান বলেন, 'শিশু ও বয়স্কদের যত্ন নেওয়ার কাজটি অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে নারীদের দেওয়া হয়। এটি কর্মসংস্থানের সুযোগকে সীমাবদ্ধ করে। কর্মসংস্থানে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হলে সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে।'

'সুরক্ষার বিষয়গুলো কর্মক্ষেত্রে নারীর কম অংশগ্রহণের কারণ,' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'পরিবহন ব্যবস্থাও গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের উচিত এসব বিষয় খেয়াল রাখা।'

বিশ্বব্যাংক বলেছে, বাংলাদেশে নারী সুরক্ষা আইন দুর্বল। ফলে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মারাত্মক ঘাটতি দেখা দেয়। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সমাজ নারীদের প্রতি সবচেয়ে রক্ষণশীল।

প্রতিবেদন অনুসারে, উদীয়মান ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার বেশিরভাগ দেশে শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণের হার সবচেয়ে নিচের দিকে। পুরুষের হারের তুলনায় অনেক কম।

বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান অর্থনীতিবিদ ফ্রান্সিসকা ওনসোর্গ বলেন, 'উদীয়মান বাজার ও উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলোর গড় ৫৪ শতাংশের তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ায় শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণের হার ৩২ শতাংশের অনেক কম।'

তবে দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে রপ্তানি খাতের সঙ্গে এর বৈপরীত্য আছে। যেমন, বাংলাদেশে তৈরি পোশাক, ভারতে কল সেন্টার ও শ্রীলঙ্কায় টেক্সটাইল শিল্পে নারীর অংশগ্রহণ বেশি।

বিশ্বব্যাংক বলেছে, শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ালে ভারতের উৎপাদন ২৩ শতাংশ, পাকিস্তানের ২১ শতাংশ, নেপালের ২২ শতাংশ ও শ্রীলঙ্কার ২৮ শতাংশ বাড়বে।

বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান অর্থনীতিবিদ ফ্রানজিস্কা ওনসোর্গ বলেন, 'নারীর কর্মসংস্থান বাড়াতে সব পক্ষের উদ্যোগ প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে সরকার, বেসরকারি খাত, সমাজ ও পরিবারের ভূমিকা আছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Sohag’s murder exposes a society numbed by fear and brutality

It was a murder that stunned the nation, not only for its barbarity, but for what it revealed about the society we have become.

43m ago