১৮ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ রেখে গেছে শেখ হাসিনা সরকার

ঋণ খেলাপি, বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থনীতি,

২০০৮ সালে শেখ হাসিনা যখন ক্ষমতায় ফিরে আসেন তখন বাংলাদেশের ঋণের পরিমাণ ছিল মাত্র ৩৩ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার। গত ৫ আগস্ট ছাত্র অভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন তিনি। কিন্তু দেশ ও ক্ষমতা ছাড়ার আগে দেশি ও বিদেশি মিলিয়ে ১৫৬ বিলিয়ন ডলার ঋণের বোঝা রেখে যান তিনি।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ৩০ জুন পর্যন্ত স্থানীয় মুদ্রায় দেশের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা।

এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেওয়া হয়েছে ৮৮ বিলিয়ন ডলার বা ১০ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকার বেশি এবং বাকি ৬৮ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকা বিদেশি ঋণ।

এই বিশাল ঋণ কীভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করছে তা বুঝতে হলে প্রস্তাবিত বাজেটের দিকে তাকাতে হবে। চলতি অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সুদ পরিশোধ বাবদ ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা বা ১৪ দশমিক ০২ শতাংশ রাখা হয়েছে। এই অঙ্ক ৮ লাখ কোটি টাকার বেশি ব্যয় রাখা খাতগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ।

অর্থনীতিবিদরা বিপুল ঋণের জন্য খরচ বৃদ্ধি ও মেগা প্রকল্পে দুর্নীতির কারণে স্থবির হয়ে পড়া রাজস্বকে দায়ী করেছেন।

এদিকে সরকার টানা তিন মেয়াদে মোট ব্যয় করেছে প্রায় ৫৪ লাখ কোটি টাকা এবং রাজস্ব আয় হয়েছে মাত্র ৩৭ লাখ কোটি টাকা। সরকারের ব্যয় ২০০৮-০৯ অর্থবছরের ৯৪ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ৭ লাখ কোটি টাকা হয়েছে।

অন্যদিকে বাংলাদেশের রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত ৯ শতাংশের আশেপাশে ঘোরাফেরা করছে, যা বিশ্বের সর্বনিম্ন একটি।

এজন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) সংস্কার উদ্যোগের অভাব, কর ফাঁকি ও বিভিন্ন গ্রুপকে বিপুল পরিমাণ কর ছাড় দেওয়াকে দায়ী করেন অর্থনীতিবিদরা।

এছাড়া বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে দুর্নীতি ধারাবাহিকভাবে রাজস্ব-ব্যয়ের ব্যবধান বাড়াচ্ছে বলে মনে করেন কয়েকজন শীর্ষ অর্থনীতিবিদ।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, মেগা প্রকল্পগুলোর অধিকাংশই দুর্নীতিতে আচ্ছন্ন।

গতকাল রাতে দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'এ দেশে বড় প্রকল্প মানে বড় দুর্নীতি।'

তিনি বলেন, বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে দেশীয় ঋণ নিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছে। কিন্তু কর্ণফুলী টানেল ও নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য অর্থ বিদেশি উৎস থেকে এসেছে।

তিনি বলেন, 'ব্যয় বাড়িয়ে প্রকল্পগুলোতে দুর্নীতি করা হয়েছে।'

রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্পের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, 'প্রকল্পগুলোতে অনেক অপ্রয়োজনীয় বিষয় যোগ করা হয়েছে।'

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান ঋণ বৃদ্ধির পেছনে অন্যতম অভ্যন্তরীণ সম্পদ সচল করতে সরকারের ব্যর্থতাকে দায়ী করেছেন।

সেলিম রায়হান বলেন, 'গত এক দশক বা তার বেশি সময় ধরে সরকার রাজস্ব আদায় বাড়াতে ব্যর্থ হয়েছে।'

তিনি জানান, দ্বিতীয়ত- ঋণ নেওয়ার কার্যক্রমে দুর্নীতি হয়েছে, বিশেষ করে বিদেশি অর্থায়নে মেগা প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে।

তার ভাষ্য, 'স্বার্থান্বেষী একটি গোষ্ঠী বিদেশি ঋণনির্ভর মেগা প্রকল্পগুলোকে কাজে লাগিয়ে একাধিকবার প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়েছে।'

উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে ঋণ নিতে হবে, কিন্তু শেখ হাসিনা সরকারের স্বল্পমেয়াদি ঋণের পাশাপাশি উচ্চ সুদে ঋণ নেওয়ার প্রবণতা ছিল। বছরের পর বছর ধরে সরকারের এই প্রবণতা বেড়েছে। অথচ সহজ শর্তসহ স্বল্প সুদে ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণের দিকে নজর দেওয়া উচিত ছিল।

ক্রমবর্ধমান ঋণ, কম কর ও রপ্তানি আয়ের কারণে বাংলাদেশের ঋণ পরিশোধ-রাজস্ব অনুপাত প্রথমবারের মতো ১০০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এটি দেশের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতার ক্রমবর্ধমান ঝুঁকিকে সামনে আনে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ অর্থবছরে ঋণ পরিশোধ-রাজস্ব অনুপাত ৫৮ দশমিক ৭ শতাংশ থাকলেও ২০২২ অর্থবছরে তা বেড়ে হয় ৭২ শতাংশ এবং ২০২৩ অর্থবছরে তা দাঁড়িয়েছে ৭১ দশমিক ৮ শতাংশে।

চলতি অর্থবছর এই অনুপাত ১০১ দশমিক ১ শতাংশে পৌঁছাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

(এই প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে ভাষান্তর করেছেন রবিউল কমল)

Comments

The Daily Star  | English

What's causing the unrest among factory workers?

Kalpona Akter, labour rights activist and president of Bangladesh Garment and Industrial Workers Federation, talks to Monorom Polok of The Daily Star about the recent ready-made garments (RMG) workers’ unrest.

8h ago