বাজেটের ৩ ভাগের ১ ভাগ যায় সুদ-ভর্তুকিতে

বাজেট খরচ
স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

মূলত রাজস্ব আয় ক্রমাগত কম হওয়ায় চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে দেশের জাতীয় বাজেটের এক-তৃতীয়াংশের বেশি খরচ হয়েছে সুদ ও ভর্তুকি পরিশোধে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, পুরো অর্থবছরের মোট সাত লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেটের মধ্যে চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারিতে সরকার খরচ করেছে দুই লাখ ৪৬ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকা।

সুদ পরিশোধ ও ভর্তুকি বাবদ খরচ হয়েছে ৮৮ হাজার ২২৬ কোটি টাকা, যা বরাদ্দের ৩৬ শতাংশ।

খরচ মেটাতে সরকার আরও বেশি ঋণ নিচ্ছে। কারণ কর আদায় আশানুরূপ বাড়ছে না। জিডিপির অংশ হিসেবে দেশের রাজস্ব বর্তমানে জিডিপির আট দশমিক দুই শতাংশ। এটি বিশ্বের সর্বনিম্ন।

রাজস্ব কম আদায় হওয়ায় দুর্বল জনগোষ্ঠীকে সহায়তা করতে সামাজিক খাতে জরুরি সরকারি খরচের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ পাওয়া যায় না।

সরকার বাজেট ঘাটতি মেটাতে দেশীয় ব্যাংকিং খাত, জাতীয় সঞ্চয়পত্র (এনএসসি) বিক্রি ও বিদেশি ঋণের ওপর নির্ভর করে। মূলত, ব্যাংকগুলো সরকারের টাকার প্রধান উত্স।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, গত জুলাই-জানুয়ারি সময়ে সুদ মেটাতে হয়েছে ৬০ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা। এটি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ শতাংশ বেশি।

অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেওয়া ঋণের সুদ পরিশোধ ১৫ শতাংশ বেড়ে ৫১ হাজার ২১৩ কোটি টাকা হয়েছে। বিদেশি ঋণের বিপরীতে তা তিন গুণ বেড়ে হয়েছে নয় হাজার ৩৪২ কোটি টাকা।

ট্রেজারি বন্ড বিক্রি থেকে পাওয়া টাকার খরচও বেশি। তাই সুদের খরচ বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালের জুনে ট্রেজারি বন্ডের মুনাফার হার আট শতাংশ থেকে বেড়ে ১২ শতাংশ ছাড়িয়েছে।

যদিও এনএসসির মতো সঞ্চয়পত্রের বিক্রি বর্তমানে কম। এর বিপরীতে সুদের হার কমেছে। তবে অনেক সঞ্চয়পত্র ম্যাচিউর হয়েছে। অর্থাৎ এই খাতে সরকারের খরচ বেড়েছে।

আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি, এলএনজি ও সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানি খরচ বেড়েছে। তাই গত অর্থবছর থেকে ভর্তুকিও বাড়ছে দ্রুত গতিতে।

চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ভর্তুকি ছিল ২৭ হাজার ৬৭১ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে তা ছিল ২৬ হাজার ২১২ কোটি টাকা।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ক্রমবর্ধমান ঋণ ও সুদের খরচ বেড়ে যাওয়ায় সুদ পরিশোধের হার বেড়েছে।'

বিদেশি ঋণের সুদের হার বেড়েছে। টাকার ক্রমাগত অবমূল্যায়নও খরচ বাড়িয়ে দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, 'পরিস্থিতি সরকারের জন্য খুবই প্রতিকূল হয়ে উঠেছে।'

ধারণা করা হচ্ছে—প্রকৃত ভর্তুকি খরচ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। জ্বালানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় সব খরচ প্রত্যাশার চেয়ে বেশি। কারণ বাড়তি বকেয়া পরিশোধ করতে হয়েছে।

গত পাঁচ বছরে রাজস্ব আয়ের তুলনায় মজুরি ও বেতন, পেনশন, ভর্তুকির খরচ দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় তা সরকারের আর্থিক পরিসরকে সংকুচিত করেছে।

চলতি অর্থবছরে ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক ঋণ খুব বেশি বাড়েনি। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ঋণ নেওয়া হয়েছিল ৩৪ হাজার ৩০৬ কোটি টাকা। অথচ চলতি অর্থবছরের একই সময়ে ব্যাংক ঋণ ২৩ হাজার ৬২৭ কোটি টাকা।

সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কম হওয়ায় সরকারকে সঞ্চয়পত্র বাবদ বেশি খরচ করতে হচ্ছে। গত জুলাই থেকে জানুয়ারিতে ছয় হাজার ৭৬৩ কোটি টাকা এবং গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে তিন হাজার ৩৫ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে।

কয়েক বছর আগেও সঞ্চয়পত্র ছিল সরকারের আয়ের প্রাথমিক উৎস। তবে সুদের হার কম ও কঠোর নিয়ন্ত্রণের কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে গেছে।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৬ লাখ ৫৫ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা।

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হান মনে করেন, 'সরকার বেশি ঋণ নিচ্ছে বলে সুদ পরিশোধের হার আরও বাড়বে।'

তার মতে, সরকার যতক্ষণ পর্যন্ত রাজস্ব আদায় না বাড়াবে ততক্ষণ পর্যন্ত ঋণ বাড়তেই থাকবে। তাই আগামী বছরগুলোয় সুদ পরিশোধ কষ্টকর হয়ে পড়বে।

এই অর্থনীতিবিদ বলেন, 'শুধু আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে নয়, জ্বালানি খাতের অদক্ষতার কারণেও ভর্তুকি বেড়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'ভর্তুকি কমানোর জন্য দাম পণ্যের বাড়ানো একটি সহজ বিকল্প। তবে দক্ষতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে আমরা কোনো উন্নতি দেখতে পাচ্ছি না।'

গত জুলাই-জানুয়ারি রাজস্ব আদায় ১৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ২৩ হাজার ৪৩৮ কোটি টাকায়।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয় ১২ দশমিক ছয় শতাংশ বেড়ে হয়েছে এক লাখ ৯৫ হাজার ৫০১ কোটি টাকা। তবে এনবিআর বহির্ভূত কর রাজস্ব তিন দশমিক চার শতাংশ কমে চার হাজার ৪৭৫ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

সাত মাসে কর বহির্ভূত রাজস্ব ২১ শতাংশ বেড়েছে ২৭ হাজার ৪৬১ কোটি টাকা।

গত সাত মাসে রাজস্ব বাজেট থেকে সরকার খরচ করেছে এক লাখ ৯১ হাজার ৮৮ কোটি টাকা। এটি বরাদ্দের ৪০ দশমিক দুই শতাংশ।

২০২২-২৩ অর্থবছরে তা ছিল ৩৯ দশমিক সাত শতাংশ।

উন্নয়ন খরচ ধরা হয়েছে ৫৫ হাজার ৮৩৩ কোটি টাকা। এটি বরাদ্দের ২০ শতাংশ।

Comments

The Daily Star  | English

Teknaf customs in limbo as 19 mt of rice, authorised by AA, reaches port

The consignment of rice weighing 19 metric tonnes arrived at Teknaf land port on Tuesday evening with the documents sealed and signed by the Arakan Army

6h ago