৪৭ শতাংশ কারখানা আগুনের ঝুঁকি সংশোধনমূলক ব্যবস্থা বাস্তবায়নে ব্যর্থ: বিডা

আগুনের ঝুঁকি
স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

শিল্প দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে থাকা প্রায় ৪৭ শতাংশ কারখানা ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ঝুঁকি দূর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেনি বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)।

গত বছরের মে মাসে বিডা চিহ্নিত হওয়া ১০৬ ঝুঁকিপূর্ণ কারখানার মধ্যে ১৭টিকে তিন মাসের মধ্যে সংশোধনী কর্মপরিকল্পনা (সিএপি) বাস্তবায়নের নির্দেশ দেয়।

কম ঝুঁকিপূর্ণ বাকি ৮৯ কারখানাকে বছরের শেষ নাগাদ নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে বলা হয়।

কারখানা পরিদর্শন উদ্যোগের জাতীয় সমন্বয়ক অভিজিৎ চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ১৭ কারখানার মধ্যে চারটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং একটি নারায়ণগঞ্জ থেকে মানিকগঞ্জে স্থানান্তর করা হয়েছে।'

উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ নয় কারখানাগুলো ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় সংশোধনের কাজ শেষ করেছে। আরও তিন কারখানায় কাজ চলছে।

২০২১ সালের ৮ জুলাই হাসেম ফুডস লিমিটেডের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে অর্ধশতাধিক মানুষের মৃত্যুর পর শিল্প-দুর্ঘটনা রোধে দেশব্যাপী উদ্যোগের অংশ হিসেবে ঝুঁকিপূর্ণ কারখানাগুলোকে চিহ্নিত করেছে বিডা।

অভিজিৎ চৌধুরী জানান, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর ১০৬ কারখানাকে আলাদা চিঠিতে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য বিধি মেনে চলতে বলেছে।

তিনি বলেন, 'গত সেপ্টেম্বরে যখন কারখানাগুলো পরিদর্শন শুরু করি, তখন সিএপি বাস্তবায়ন ও ডিসেম্বরের মধ্যে এ বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন তৈরি করতে বলেছিলাম।'

ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) সিএপি বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণে বিডাকে সহযোগিতা করছে।

এফবিসিসিআই অন্যান্য প্রযুক্তিগত বিষয়ের মধ্যে আগুন ও অবকাঠামোগত সুরক্ষায় তিন পরামর্শক নিয়োগ দিয়ে এই উদ্যোগকে সমর্থন করেছিল।

'পর্যবেক্ষণ ও পরিদর্শনের সময় কারখানা মালিকদের মধ্যে অগ্নি-নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির চেষ্টা করেছি,' যোগ করেন তিনি।

কারখানা পরিদর্শনের পর বিডার অনুসন্ধানের কথা উল্লেখ করে অভিজিৎ চৌধুরী বলেন, 'একক প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলার দাবি আছে। যাতে এর মাধ্যমে উদ্যোক্তারা ট্রেড লাইসেন্স নবায়নসহ প্রয়োজনীয় সব ছাড়পত্র পেতে পারেন।'

কারখানা মালিকরা সরকারি সংস্থাগুলোর সময় সাপেক্ষ পরিদর্শন প্রক্রিয়া এড়াতে তাদের ইউনিটে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে একক সংস্থার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, 'তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে দুটি বৈঠক করেছি। সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।'

রাজধানীর বেইলি রোডে সাম্প্রতিক আগুনের বিষয়ে তিনি বলেন, 'বিডার উদ্যোগে রেস্তোরাঁ ও ভবন পরিদর্শন করা হচ্ছে না। তাই এ ব্যাপারে সংগঠনের কোনো দায় নেই।'

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে প্রধান করে ২৪ সদস্যের জাতীয় কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে দেশব্যাপী কারখানা পরিদর্শন কার্যক্রম শুরু হয়েছিল।

এই উদ্যোগের প্রথম ধাপে ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের পাঁচ হাজার ২০৬ কারখানা পরিদর্শন করেন বিডার কর্মকর্তারা।

দ্বিতীয় দফায় গত বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, খুলনা ও যশোরসহ ১৭ জেলার পাঁচ হাজার একটি কারখানা পরিদর্শন করে বিডা।

অভিজিৎ চৌধুরী আরও বলেন, 'এবারও সবচেয়ে বেশি শ্রমঘন কারখানাগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এসব কারখানায় বেশি শ্রমিক রাসায়নিক, প্লাস্টিক ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ নিয়ে কাজ করেন।'

তিনি জানান, সরকার নতুন কমিটি গঠনের গেজেট প্রকাশের পর দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত প্রতিবেদন কারখানা পরিদর্শন সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির কাছে হস্তান্তর করবে।

কারণ নবনির্বাচিত সরকার বর্তমান জাতীয় কমিটিতে রদবদল করতে যাচ্ছে।

উভয় পরিদর্শনের সমন্বিত ফলাফল সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রায় ৫৬ শতাংশ কারখানা আগুনের ঝুঁকিতে এবং ৪৪ শতাংশ বিদ্যুৎ, অবকাঠামোগত ও পরিবেশগত ঝুঁকিতে আছে।

এ ছাড়া, বিডা সারাদেশে ১৫ শিল্প জেলায় ৫৮ টিমের মাধ্যমে তৃতীয় পর্যায়ে কারখানা পরিদর্শন করবে।

Comments

The Daily Star  | English

Fishermen lost at sea: Authorities install plaque while families await aid

At least 188 fishermen have gone missing in the past three decades in Barguna's Patharghata upazila

11m ago